বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সময়েও বসে নেই সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি মরুর দেশ জর্ডানে দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের গিফট আইটেম রপ্তানি করেছেন উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব।
করোনা পরিস্থিতিতে জর্ডানে পণ্য ডেলিভারি করতে হবে বিষয়টা কেমন ছিল জানতে চাইলে উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন: জর্ডানের সঙ্গে এটা প্রথম কাজ। মূলত আমরা মহামারি করোনাভাইরাসের আগে বাহারাইনের সঙ্গে চামড়াজাত পণ্য নিয়ে একটি কাজ করেছিলাম। সেখানে আমাদের দেশীয় পণ্যের বিষয়টা সকলকে মুগ্ধ করে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রপ্তানিগুলো বন্ধ থাকলেও আমরা অন্য কাজগুলো করে যাচ্ছিলাম।
বাহারাইনে দেওয়া দেশীয় চামড়াজাত পণ্যেই জর্ডানের কর্তাব্যক্তিদের আকৃষ্ট করেছিল কি না ? জানতে চাইলে উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব বলেন: হ্যাঁ সেটাই হয়েছে। বাহরাইনের দূতাবাসের মাধ্যমে জর্ডান দূতাবাসে বাংলাদেশী পণ্যের গিফট আইটেমের খবর পৌঁছে যায়। পরে বাহারাইনের সেক্রেটারির মাধ্যমে জর্ডানে ফার্স্ট সেক্রেটারি আমাকে ফোন দিয়ে কাজের বিষয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু ততোদিনে করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুরো লক ডাউন ছিল। তাই আমরা পণ্য ডেলিভারি দিতে পারি নাই। লক ডাউন ওঠে যাবার পর গতকাল আমরা পণ্য পাঠিয়েছি। জর্ডানের বিশেষ একটা জেট বিমানে পণ্য পাঠানো হয়েছে। দুই একদিনের ভেতর পণ্যগুলো পৌঁছে যাবে।
বাংলাদেশর পণ্য, আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য জর্ডানে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমার কাজ খুব আনন্দ নিয়ে করি। আর আমাদের কোন কাজ যখন আমার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে তখন সেখানে শুধু ব্যবসার বিষয়টাই থাকে না, তার সাথে যোগ হয় কাজের সন্তুষ্টি। জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসের জন্য কর্পোরেট গিফট আইটেমগুলোর প্যাকেট যখন কাল কার্টুনে ভরে পাঠাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল আমাদের হাত দিয়ে মরুর বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ যাচ্ছে।’
দেশীয় চামড়াজাত পণ্য নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তানিয়া ওয়াহাব বলেন: দেশীয় পণ্য নিয়ে খুব ধীর পায়ে হলেও পৌঁছে যেতে চাই বিশ্ব দরবারে। ইচ্ছা আছে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা। যেখানে আমার দেশের পণ্যে আমার প্রতিষ্ঠানের লোগে থাকবে। লাল সবুজের এই অগ্রযাত্রায় কর্মই আমাদের শক্তি, সকলের ভালোবাসাই আমাদের অনুপ্রেরণা।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তানিয়া ওয়াহাব। ১০টা-৫টার একঘেয়েমির চাকরিতে তার সায় ছিল না। চেয়েছেন সৃজনশীল কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে, চ্যালেঞ্জ নিতে। সেই বাসনা থেকেই শুরু করেন চামড়াজাত শিল্প নিয়ে কাজ। মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত। এখন তাঁর পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে কানাডা, সুইডেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় চামড়াজাত শিল্প নিয়ে কাজ করা একমাত্র নারী উদ্যোক্তা। পরিচালনা করছেন দুটি প্রতিষ্ঠান। তার একটি কারিগর ও আরেকটি অনলাইন গিফটশপ ট্যান।
২০০৮ সালে ইতালির বিখ্যাত ডিজাইনার বারবারা গার্দুসি ঢাকায় এসে প্রায় ছয় মাস অবস্থান করেন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিংয়ের একটি প্রকল্পে। ১১ জন ডিজাইনারের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তানিয়ারও সুযোগ হয় বারবারার সঙ্গে কাজ করার ও শেখার। এরই মধ্যে লেদারশিল্পে নিজেই একটা উদাহরণ হয়ে গেছেন তানিয়া। শুরু করলেন অন্যদের পথ দেখানো। ব্যাগ আর জুতার ডিজাইনার হিসেবে আরো এগিয়ে যেতে পারবেন এবং তাদের কাজের মাধ্যমে এক সময় করপোরেট গিফট আইটেমের বাজারটা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের দখলে আসবে, গুণে ও মানে।
২০০৮ সালে পেয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের সেরা এসএমই নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার। ২০১১ সালে পেয়েছেন এফবিসিসিআই’র সেরা এসএমই নারী উদ্যোক্তা। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে ডেইলি স্টার-ডিএইচএলের আউটস্ট্যান্ডিং ওম্যান ইন বিজনেস সম্মাননা অর্জন করেন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা