বাংলাদেশের পাটকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতেই উদ্যোক্তা ইশরাত জাহান চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেছেন তুলিকা নামের পাটজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানি ভিত্তক প্রতিষ্ঠান। তিন বছরেই পেয়েছেন সাফল্য। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়া উদ্যোক্তার পণ্য যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে। সম্প্রতি ফ্রান্সে গিয়েছে উদ্যোক্তার কাস্টমাইজ ব্যাগ।
২০১৭ সাল থেকে পাটজাত পণ্য নিয়ে কাজ করা ইশরাত উদ্যোক্তা বার্তাকে জানালেন, পড়াশুনা শেষ করে ব্যাংকে চাকরি করতাম। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার সঙ্গে অন্যকেও কাজের সুযোগ করে দেয়ার স্বপ্ন ঘুরতো মাথায়। হুট করে চাকরি ছেড়ে পাটজাত বহুমুখী পণ্যের ব্যবসা শুরু করে ‘তুলিকা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি।
ব্যবসা বলতে পাটজাত পণ্যই কেন জানতে চাইলে উদ্যোক্তা জানালেন, শুরু থেকেই রপ্তানী করা পণ্যের ওপরই আমার আগ্রহ ছিল। খোঁজখবর নিয়ে দেখি পাটজাত পণ্যের চাহিদা আছে। এরপর বেশকিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে নেমে পড়ি ব্যবসায়। রপ্তানিকে টার্গেট করে ক্রেতাদের চাহিদামাফিক পাটের শপিং ব্যাগ, ওয়াই ব্যাগ, গ্রোসারি ব্যাগ, হ্যান্ডিক্রাফট, হোম ডেকর সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে থাকি।
তুলিকাতে পাটের তৈরী ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, ওয়াই ব্যাগ, গ্রোসারি ব্যাগ, হ্যান্ডিক্রাফট, হোম ডেকরসহ নান্দনিক শিকেও পাওয়া যায়।
ইউরোপের বাজারে তুলিকার পণ্য রপ্তানি হয় জানিয়ে ইশরাত জাহান বলেন, বিশ্ব বাজারে আমাদের দেশের বহুমুখী পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ডাইভারসিটি প্রোডাক্ট হিসেবে পাটের কমপক্ষে ২৭০টি পণ্য রয়েছে। কিন্তু আমরা বেশি পাটের ব্যাগের দিকে নজর দেই। পাট পণ্য মানেই পাটের ব্যাগ বুঝি আমরা, কিন্তু আরও অন্যান্য পাটজাত পণ্য আছে। সেগুলোতেও সরকারের আন্তরিকতা ও মনোযোগ প্রয়োজন। এছাড়াও ভোক্তারা যেন সহজে পণ্যটা পায় সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
দেশীয় বাজারে পাটের চাহিদা কেমন জানতে চাইলে কুমিল্লার মেয়ে ইশরাত বলেন: দেশীয় পণ্যের বাজার এখনো স্থিতিশীল নয়, বিভিন্ন মেলা ছাড়া বিক্রি ওই পরিমাণে নেই। এছাড়া দেশীয় ক্রেতারা দেশীয় পণ্যের প্রতি খুব বেশি নজর দেন না যতোটা না তারা চীনের পণ্যের নজর দেন। ক্রেতাদের দেশীয় পণ্য কিনতে আরও আগ্রহী ও সচেতন করা প্রয়োজন। আমাদের গ্রাহকরা এখনো ফ্যাশনাবল এক্সেসরিজ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি।
ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে ইশরাত বলেন, আমি আমার পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করি, নানান ফ্যাশন্যাবল ধাঁচ যোগ করি, কিন্তু ক্রেতারা মনে করে পণ্যটির দাম দেড় থেকে দুই’শ টাকা হবে।
উদ্যোক্তা বার্তার মাধ্যমে ক্রেতাদের জানাতে চাই, পাটজাত পণ্যের ফেবিক্স হাতে গোনা কয়েকজন বানায়, তারা যে দামটা বলে সেটাতেই আমাদের কিনতে হয় এবং ফেব্রিক্সের খরচ অনেক বেশি। সে কারণে পণ্যের দামটা একটু চড়া হয়।
সরকার চাইলে পাটজাত পণ্যের ফেব্রিক্সের বিষয়ে নজর দিতে পারে। গুণগত মানসহ যদি ফেব্রিক্স বানানো বৃদ্ধি করা যায় তাহলে গ্রাহকরা অনেকটা কম মূল্যে পাটজাত পণ্য কিনতে পারবেন–বলছিলেন ইশরাত।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারীতে আমাদের পণ্য রপ্তানি অনেক কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য যে প্রণোদনা কথা বলেছেন সেটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমরা যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আছি সেই প্রণোদনার টাকাটাও যদি পাই তবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ইশরাত বললেন, করোনাকালীন পরিস্থিতিতে আমরা যখন দেশীয় পণ্য ভালোবাসি এবং সেটা ব্যবহার করি তখন আমাদের দেশের খেটে খাওয়া অনেক মানুষ উপকৃত হয়। দেশের এই কঠিন সময়ে আমরা একজন অন্যজনের পাশে থাকি। সবার জন্য ভালো চিন্তা করি। তবেই তো দেশ বাঁচবে মানুষ বাঁচবে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা