১২ মাসে ১৩ পার্বণের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। বাঙালীর অস্তিত্বে মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। আর এসব সংস্কৃতির মাঝে উল্লেখযোগ্য একটি পিঠা উৎসব। বাঙালির ঐতিহ্য পিঠা পার্বণ।
২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ, ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় পিঠা উৎসব বিগত একযুগে নাগরিক হৃদয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। কয়েক বছর যাবত দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় ধরনের পিঠা উৎসব আয়োজন করেছে। এমনকি দেশের বাহিরে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশেও বাঙালির পিঠা নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে উৎসব।
তার ধারাবাহিকতায় জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ আজ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‘জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪২৬ ‘ উদযাপন করল রাজশাহী নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠা প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের মহোৎসব ‘জাতীয় পিঠা উৎসব-১৪২৬’ এর সম্পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলো রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কে এম খালিদ, এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেনী। সভাপতিত্ত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্য ব্যাক্তিত্ব জনাব ম হামিদ, সভাপতি জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ। আহবায়ক জনাব মলয় ভৌমিক, জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ রাজশাহী বিভাগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্য মানে পিঠা পার্বণ। এই ঐহিত্য যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্যই এই উৎসবের আয়োজন। এই আয়োজন অনেক সুন্দর হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সংস্কৃতিমনা মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের সহযোগিতার কারণে।
প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ আরো বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী পাটি সাপটা পিঠাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি এবং ব্র্যান্ডিং করার ব্যাপারে কাজ করবো। আগামীতে যাতে রাজশাহীতে প্রতিবছর স্থানীয়ভাবে পিঠা উৎসব আয়োজন হয়, তাতে সহযোগিতা করবো।
উৎসবের উদ্বোধক সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্য পিঠা পার্বণ। পিঠা মানে বাঙালি, বাঙালি মানে পিঠা পার্বণ। পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে মুজিববর্ষের প্রাক্কালে এই উৎসবের আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, রাজশাহীর নারীরা অনেক দূর এগিয়েছে। তারা এখন অনেক কিছুতেই পারদর্শী। রাজশাহীর পিঠার দিকে প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে পিঠাকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা যায়।
স্বাগত বক্তব্য দেন জনাব খন্দকার শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ এবং এই পরিষদের সদস্য সচিব কামার উল্লাহ সরকার কামাল। বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ, উদ্যোক্তা, দর্শনার্থীরাসহ সর্বস্তরের জনগণ।
২৬ টি স্টল বিভিন্ন ধরনের পিঠা দিয়ে সাজিয়েছেন রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলার স্থানীয় উদ্যোক্তারা। তাদের নানা ধরনের পিঠা পরিবেশন করেছেন পিঠার মহোৎসবে। শীত পড়লে বাঙালিদের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। মূলত মাঘ আর ফাল্গুন এই দুই মাসই জমিয়ে পিঠা খাওয়া হয়৷ এর পরে আর পিঠার স্বাদ পাওয়া যায় না ঠিকমতো৷ নতুন ধান থেকে তৈরি চালে যে সুঘ্রাণ আর আর্দ্রতা থাকে, পিঠা বানানোর আটা তৈরিতে সেই চাল আদর্শ৷ ধান যত পুরাতন হতে থাকে ততই সে আর্দ্রতা হারাতে থাকে৷ ফলে সেই চালের আটায় তৈরি পিঠা আর সুস্বাদু থাকে না আগের মতো৷
হেমন্তে নতুন ধান উঠে গেলে নারীরা ঢেঁকিতে পিঠার জন্য চালের আটা তৈরী করেন। এখনো কিছু কিছু অঞ্চলে ঢেঁকির আটার প্রচলন আছে। ঢেঁকি ছাঁটা চালের গুঁড়োয় তৈরী উদ্যোক্তাদের নানা ধরনের পিঠা স্টলে স্টলে ভরপুর। পিঠা গুলোর মধ্যে মুখপাকর, লবঙ্গলতিকা, মালপো, পাটিসাপটা, বকুলপিঠা, মাছপিঠা, কুমিল্লা পিঠা, বিবিখানা, গাজরের পুডিং নকশীপিঠা, মালাই রোল পিঠা, সিদ্ধদুধ কুশলি, ঝালপুলি পিঠা, নানা ধরনের ভিজানো পিঠা, গোলাপ পিঠা, বেলি পিঠা, পলাশ পিঠা, হাসিখুশি পিঠা, ঝাল পাকন, বর্ণ পিঠা, শাপলা পিঠা, কুসলি পিঠা, কাটলেট, ডাকনা পিঠা, ফুল পিঠা, চিতই পিঠা, বউ সোহাগী পিঠা, তেলের পিঠাসহ প্রায় শতাধিক পিঠা স্থান পেয়েছে এই উৎসবে। যে পিঠা গুলো ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে পুরো মেলায়।
ক্রেতা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে এই মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। উৎসব মঞ্চে বিকেল ৪টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাটক, নৃত্য সংগীত, আবৃত্তিসহ লোকজ পরিবেশনা থাকবে প্রতিদিন যা বাড়তি নজর কাড়বে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা