আটজন নারী। কেউই অ্যানুয়াল টার্নওভার, মার্কেট রিসার্চ, বিজনেস গ্রোথ সম্পর্কে জানতেন না। কোনও সঠিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল না। মাত্র ৮০ টাকা মূলধনে শুরু হয়েছিল ব্যবসা৷ ছয় দশক পর সেই ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার ১৬০০ কোটি টাকা।
সাল ১৯৫৯। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের সাতজন মহিলা ঠিক করলেন ব্যবসা করবেন। যাত্রা শুরু Lijjat Papad এর। মুখ্য ভূমিকায় যশবন্তীবেন পোপাট, পার্বতীবেন ঠোদানি, উজমাবেন কুণ্ডলিয়া, বনুবেন তান্না, লগুবেন গোকানি, জয়াবেন, দিপাবলীবেন লুক্কা।
গুজরাটের ৭ গৃহবধূর হাত ধরে ঘরোয়া উদ্যোগে ব্যবসা শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভারতের অন্যান্য প্রদেশে। ক্রমেই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে লিজ্জত পাঁপড়ের নাম।
যশবন্তীবেন এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা কেউই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও ব্যবসায়িক জ্ঞান নিয়ে ব্যবসায়ে নামেন নি। ৭ গৃহবধূ নিজেদের রান্নাবান্না করার কৌশলকে হাতিয়ার করে ব্যবসায় নেমেছিলেন। নিজেদের ঘরের কাজ সামলে ব্যবসা করায় চাপ ছিল। তাই বাধ্য হয়েই ব্যবসাকে পার্টটাইম হিসেবে শুরু করতে হয় তাদের।
যশবন্তীবেন এর নেতৃত্বে এক সমাজকর্মীর কাছ থেকে ৮০ টাকা ঋণ নিয়ে কাঁচামাল কেনেন ৭ নারী। নেমে পড়েন ভারতের সবচাইতে জনপ্রিয় নাস্তার আইটেম পাঁপড় তৈরী করতে। সংসার সামলে অতিরিক্ত দু পয়সা রোজগারের জন্যেই অবসর সময়ে পাঁপড় বানাতেন তারা। প্রথম প্রথম মহিলারা খুব বেশি পাঁপড় তৈরি করতে পারতেন না। দিনে মাত্র চার প্যাকেট তৈরি করে ডিস্ট্রিবিউটরের হাতে তুলে দিতেন।
নিজেদের চেষ্টায় ও পরিশ্রমে গড়ে তারা গড়ে তোলেন শ্রী মহিলা গৃহ উদ্যোগ ‘লিজ্জত পাঁপড়’। সুস্বাদ, হাই কোয়ালিটির জন্য লিজ্জত পাঁপড়ের সুনাম খুব শীঘ্রই ছড়িয়ে পড়ল। ৮ জন থেকে আজ সেই লিজ্জত পাঁপড় তৈরীতে যুক্ত হয়েছেন ৪৫,০০০ নারী। সারা ইন্ডিয়ার ১৭টি প্রদেশে লিজ্জত পাঁপড়ের ৮৩ টি ব্রাঞ্চ, এবং এমনকি আন্তর্জাতিক মার্কেটেও যুক্ত হয়েছে লিজ্জত পাঁপড়। আমেরিকা এবং সিঙ্গাপুরসহ ২৫টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে আজ।
উৎপাদন খাতে নারীর এহেন অবদান ও নারীর ক্ষমতায়ন এর জন্য ২০২১ সালে ভারতের পদ্মশ্রী এওয়ার্ড অর্জন করেন যশবন্তীবেন পোপাট।
দৃঢ় সংকল্প, ঐক্য, নারীর ক্ষমতায়নের এক অনবদ্য গল্প লিজ্জত পাঁপড়ের সফলতার গল্প। সাত গৃহবধূর মনের জোর, ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আর সামান্য পুঁজি ১৬০০ কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়ে তোলে, ভারতের হাজার হাজার নারীকে দেয় কর্মসংস্থান, করে তোলে আর্থিকভাবে স্বাধীন।