৭ লাখ তরুণ উদ্যোক্তাকে অর্থ ও প্রশিক্ষণ দেবে ব্র্যাক-সিলাতাক

0

বাংলাদেশের তরুণ-যুবাদের আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ ও অর্থ যোগানে নতুন একটি প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এবং কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা সিলাতাক।

‘আনলকিং ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস ফর ইয়ুথ এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের সাইডলাইনে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
ব্র্যাকের এইচসিএমপি অ্যান্ড এক্সটারনাল কমিউনিকেশনস প্রধান মামুনুল হক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান হয়েছে।

গতানুগতিক ব্যাংকিং খাতের সেবা নিতে পারে না, এমন ৬ লাখ ৮৪ হাজার ২১২ জন তরুণ-তরুণীকে এই সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তরুণ-তরুণীরা তাদের উপার্জন সৃষ্টিকারী উদ্যোগ শুরু করতে, টিকে থাকতে বা তাদের উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে এ প্রকল্পের সহায়তা নিতে পারবে। প্রকল্পটি ৩ বছর নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। একইসঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তাদের সামর্থ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সাক্ষরতার উন্নয়ন এবং তাদের উদ্যোগের স্থায়িত্ব বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে।

আনুষ্ঠানিক আর্থিক খাতের সেবা নিতে গিয়ে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো অনেক সময় বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে এখানে চাহিদার তুলনায় অর্থের যোগান ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কম।

নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলো সবচেয়ে বেশি এই সমস্যার মুখোমুখি হয়। কারণ প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তারই ব্যাংক বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার মতো কোনো জামানত থাকে না।
করোনা ভাইরাস মহামারী এই চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই সময়ে অনেকের আয় কমে গেছে, অনেকে হারিয়েছে চাকরি। এসব কারণে তরুণদের আর্থিক সামর্থ্য আরও কমে গেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে একসঙ্গে কাজ করার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা সিলাতাক। চুক্তি সাক্ষরের পরে নতুন এই উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন দুই সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা।

সিলাতাকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আল মুল্লা বলেন, “আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের তরুণদের অর্থ উপার্জনে সহায়তার মাধ্যমে এই প্রকল্পটি তাদের জীবিকার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। তরুণদের উদ্যোগে সেখানে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশটির টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বেগবান করবে। বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী থাকলেও সুযোগ অনেক কম। কারণ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। আর্থিক খাতে প্রবেশাধিকারের অভাবে থাকা তরুণদের বিড়ম্বনা কমাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে এই যৌথযাত্রায় আমরা আনন্দিত”।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্র্যাক তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাস করে। প্রান্তিক পর্যায়ের তরুণ উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আর্থিক সক্ষমতাকে ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে মিলিয়ে আমরা একইসঙ্গে এটাকে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি। আমাদের গ্রাহককেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথ আর্থিক সেবা নিশ্চিত করবে। সেইসঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে মেন্টরশিপ, যা তাদের সক্ষমতা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে সিলাতাকের সঙ্গে এই উদ্ভাবনী মডেল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে পেরে আমরা উদ্দীপ্ত। এটি কেবল আরও কার্যকরী সেবা উদ্ভাবনে আমাদের সহায়তাই করবে না, বরং ঝুঁকির মাত্রা নিরূপণ এবং উত্তরণেও সহায়তা করবে”।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তরুণদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং নায্যতাভিত্তিক উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এই চুক্তিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সিলাতাক একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা, যা উদ্ভাবনী ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুযোগ ও ক্যারিয়ার বিল্ডিং কাজে তরুণদের যুক্ত করে। তরুণদের সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সক্রিয় সৈনিক এবং কর্মক্ষেত্রের উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সালে কাতারের শায়খা মোযা বিনতে নাসের এটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৮ (শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) অর্জনে কাজ করছে এটি। এর জন্য দুনিয়াজুড়ে তরুণ প্রজন্মের উন্নত ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে তাদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মস্থানে সমন্বিত এবং উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করতে সিলাতাক মনোযোগ দিয়েছে।

ব্র্যাক একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, যা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মধ্যে বসবাসরত বিশ্বের ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের পাশে থেকে ব্র্যাক তাদের সম্ভাবনাময় জীবনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষের বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলায় ব্র্যাক জনগোষ্ঠীভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে। এশিয়া ও আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দুর্গম ও যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষ বিশেষত নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ব্র্যাকের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ব্র্যাক একটি সমন্বিত উন্নয়ন মডেল গড়ে তুলেছে, যার আওতায় রয়েছে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ, মাইক্রোফাইন্যান্স, উচ্চশিক্ষা, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন কর্মসূচি। দক্ষিণ গোলার্ধে এই উন্নয়ন ধারণা জন্মলাভ করে ব্যয়সাশ্রয়ী ও প্রমাণনির্ভর কর্মসূচি প্রবর্তন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্র্যাক বিশ্বব্যাপী একটি নেতৃস্থানীয় উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ ব্র্যাক জেনেভাভিত্তিক স্বাধীন মিডিয়া সংস্থা এনজিও অ্যাডভাইজার কর্তৃক পরপর পাঁচবার বিশ্বের একনম্বর এনজিও হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here