নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিকভাবে নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা এবং দারিদ্র্যবিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখায় প্রধানমন্ত্রী ‘হস্তশিল্প পণ্য’-কে ‘বর্ষপণ্য-২০২৪’ ঘোষণা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর উদ্যোগে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী ‘হস্তশিল্প মেলা-২০২৪’।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মেলার উদ্বোধন করেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সেলিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, বেত ও বাঁশজাত পণ্য, তাঁত পণ্য, কারু পণ্য, হ্যান্ড মেইড জুয়েলারি, মৃৎশিল্পজাত পণ্য প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান (ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রোডাক্টস বিডি লি., নাদিয়া জামদানি ওয়েভিং ফ্যাক্টরি, আধুনিকা, টুইংকেল ক্রাফট, কল্পতরু, মা এন্টাপ্রাইজ, প্রকৃতি প্রভৃতি) মেলায় হস্তশিল্পজাত পণ্য প্রস্তুত প্রক্রিয়া উপস্থাপন করে দর্শনার্থীদের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের ৭৭ হাজার ৩১৭ বর্গফুট আয়তনের হল-এ-তে প্রায় ১০০টি হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদক, সরবরাহকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্বল্পমূল্যে সেলস্কীমস্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মেলায় সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলাপ্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসির ডেডিকেটেড শাটল বাস নিয়মিত মেলার দর্শনার্থীদের আনা-নেয়ায় নিয়োজিত থাকবে। মেলায় দ্বিতল কার পার্কিংয়ে পাঁচশতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধা ছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ৬ একর জমিতে বিস্তর পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দর্শনার্থীদের সকল প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য মেলায় থাকবে একটি তথ্য কেন্দ্র। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা নিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
এছাড়া, মেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি সার্ভেল্যান্স সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আনসার ও বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড নিয়োজিত আছে। যে কোন ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে মোতায়েন করা হয়েছে ফায়ার-ব্রিগেড। মেলায় সুলভ মূল্যে দর্শনার্থীদের খাবারের কথা বিবেচনায় নিয়ে ৪টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্ষুদ্র পরিসরে হস্তশিল্প রপ্তানি শুরু হয়। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩৯ হাজার ডলার। ধীরে ধীরে হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। গত ৫ বছরে বিশ্ববাজারে গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের অধিক হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয় যেখানে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক হস্তশিল্পপণ্য রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে।
একক দেশ হিসেবে চীন বৈশ্বিক হস্তশিল্পপণ্য রপ্তানি বাজারের ৫০ শতাংশের অধিক জায়গা দখল করে আছে। ভিয়েতনাম-১১ দশমিক ৩ শতাংশ, নেদারল্যান্ডস-৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া-৩ দশমিক ২ শতাংশ, স্পেন-২ দশমিক ৬ শতাংশ, ফ্রান্স-২ দশমিক ২ শতাংশ, ভারত-২ দশমিক ২ শতাংশ, জার্মানি-২ দশমিক ২ শতাংশ, পোল্যান্ড-২ দশমিক ২ শতাংশ, কানাডা-১ দশমিক ৫ শতাংশ, বাংলাদেশ-১ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের মাটি, হোগলাপাতা, কচুরিপানা, পাট, বাঁশ ও বেতের মতো কাঁচামাল দিয়ে হাতে তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশসহ অর্ধ শতাধিক দেশে।
মেলায় যে সকল প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে তাদের মধ্যে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি), জয়িতা ফাউন্ডেশন, বাংলাক্রাফট (গোল্ডেনগ্রীট, ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রোডাক্টস বিডি লি., সু আঁশ, জুটফিউসন বিডি, আর্টিফ্যাক্ট, লিজা বুটিকস, প্রকৃতি, হীড হ্যান্ডিক্রাফটস, জারিনস ক্রিয়েশন, বুনিসুতা, সাজোয়া টেক্টটাইল, আধুনিকা, আজুরা ফ্যাশন, পানসি জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল), কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড, বেঙ্গল ব্রেইডেডরাগস লিমিটেড, বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড, বাংলাদেশ জুট রিসার্স ইনস্টিটিউট, ফন গোল্ডেন হারভেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গ্রীন গোল্ডেন জু টেস্ক, হুর, এশিয়া প্যাসিফিক জোন, ক্লেইমেজ, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, মা এন্টাপ্রাইজ, ওয়েন্ড (উইমেন এন্টারপ্রেনার্স নেটওয়ার্কিং ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন), জেডএ ট্রেডিং, মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, অনন্যা সক্স অ্যান্ড ইনার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আসমা বুটিকস্, বাবু লেদার, বাংলা লেদার, জে. এন ট্রেডিং, জেড এন লেদার কমপ্লেক্স, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফট, কল্পতরু, বিডি ক্রিয়েশন, ডিজাইন বাই রুবিনা (‘সাসটেইনেবল বাংলাদেশ’-প্রেজেন্টেড বাই জুট ল্যান্ড বাংলাদেশ, দি জুট ফাইবারস বিডি, জুটমার্ট ইন্টারন্যাশনাল) প্রভৃতি অন্যতম।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে প্র বেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে।