নিজে স্বাবলম্বী হয়ে আরো অনেক মেয়েকে স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন দেখাতে চান উদ্যোক্তা নুসরাত জাহান। নুসরাত জাহান মেহেরপুরের মেয়ে। পরিবারে বাবা মা আর বড় ভাই রয়েছেন। স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করার, যা সম্পূর্ণটাই হবে নিজের তৈরি। কিন্তু পড়াশুনার ব্যস্ততার কারণে কিছু করতে চেয়েও করা হয়ে উঠেনি।
হঠাৎ যখন করোনায় পুরো বিশ্ব থমকে গেল, গৃহবন্দী হয়ে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে সবাইকে। ঠিক সেই অলস সময়কে কাজে লাগাতে চাইলেন উদ্যোক্তা। সিদ্ধান্ত নিলেন মেহেরপুরের বিখ্যাত সব মিষ্টি নিয়েই কাজ করবেন। পরিবারকে জানালেন তার সিদ্ধান্তের কথা, অনুমতি পেলেন পরিবার থেকে। সেই থেকে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করলেন ফরিদপুর মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী নুসরাত জাহান।
তিনি কাজ শুরু করলেন মেহেরপুরের বিখ্যাত সাবিত্রী, রসকদম, ইলিশ পেটি, কাঁচাগোল্লা, কুসুম সন্দেশ, তরমুজ সন্দেশ, মাওয়া ঝুড়িসহ আরো নানা ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে। যেহেতু উদ্যোগের শুরুটা হয় এক প্যানডামিক সিচুয়েশনে, লকডাউনের কারণে একমাত্র অনলাইনই ছিল পণ্য বিক্রির একমাত্র মাধ্যম। ‘উই’ গ্রুপ থেকে তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন এবং পরে বিভিন্ন গ্রুপ গুলোতে নিজের তৈরি মেহেরপুরের বিখ্যাত মিষ্টিগুলোর পোস্ট দিতে শুরু করেন। সবার অনেক ভালো সাড়া পান, এই থেকে আরো বেশি অনুপ্রাণিত হোন উদ্যোক্তা। অনলাইনে অনেকের সাথে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন। বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধি।
এছাড়াও উদ্যোক্তা নুসরাত জাহানের শখের বাগান ছিল। সেখানে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতেন শখের বসে। যখন দেখলেন তাঁর শখের বাগান অনেক বড় হতে লাগলো এবং ভেবে দেখলেন এসব নিয়েও কাজ করা যায়। তাই তিনি মিষ্টির পাশাপাশি তার শখের লাগানো ৩০ ধরনের পর্তুলিকা এবং মসরজ নিয়েও কাজ শুরু করেন।
মাত্র ৫০০ টাকা মূলধন নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন নুসরাত জাহান। তার পন্য স্বাবলম্বী শপ এবং
বন মালিনী নামক অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি করেন৷ গত দেড় বছরে ৬০০ কেজির উপরে মিষ্টি বিক্রি করেন এবং তাঁর অন্যান্য পণ্য অর্থাৎ পর্তুলিকা ও মসরজ প্রায় ৯০০ এর অধিক প্যাকেজ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি প্যাকেজে প্রায় ৪৫টির অধিক গাছ থাকে। উদ্যোগের শুরু থেকেই যথেষ্ট সাপোর্ট পেয়েছেন পরিবার থেকে।
তিনি বলেন, “আমাকে সব সময় সার্পোট করেন আমার ভাইয়া ও বাবা। আর আমার সব ডেলিভারি গুলো কুরিয়ার করেন আমার বাবা।”
একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে অনেক রকম বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়, উদ্যোক্তাবার্তার দীর্ঘ আলাপচারিতায় উদ্যোক্তা বলেন, “আমি প্রথম প্রথম কাজ শুরু করার পর অনেক কথা শুনেছি মানুষের থেকে। আত্মীয়-স্বজনরা অনেক হাসাহাসি করেছে। মন খারাপ হতো কিন্তু আমি সবসময় আমার কাজের প্রতি অনেক মনোযোগী ছিলাম এবং পরিশ্রম করে যেতাম যা একজন উদ্যোক্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কাজ শুরু করতে হলে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এসব বাঁধাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমি আমার কাজ নিয়ে অনেক বড় কিছু করতে চাই। যেন আমাকে দেখে অন্য মেয়েরাও স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন দেখে। “
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তাবার্তা,ঢাকা।