জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে ফার্মাসিউটিক্যালসে জব করেন শাহীন আক্তার। প্রচণ্ড ভালবাসা এবং মনের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার তাগিদে দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারকে বিদায় দেন শাহীন আক্তার কনা ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে টুকটাক পোশাকে ব্লক ও ডাইয়ের কাজ করে দিতেন তিনি । বেশ ভালো প্রশংসা পেলেও তা নিয়মিত করেননি। চাকরিতে থেকেও মনের সেই ইচ্ছেটা জেগে উঠতে থাকে । সিন্ধান্ত নিলেন, নিজের জন্য কিছু করা দরকার যা নিজেকে আনন্দ দিবে। দেশি কাপড়ের প্রতি ছিল কনার প্রচন্ড ভালোলাগা।
মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ২০২০ সালে চাকরি জীবনের সমাপ্তি টানেন তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা ।মহামারীতে পুরোপুরি উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা ছিল ভয়ংকর অনিশ্চয়তায়।
উদ্যোক্তাবার্তাকে তিনি বলেন, শুরু করেছিলাম অনিশ্চয়তা থেকে, চাকরি করব নিশ্চিন্তে নাকি টেনশন নিয়ে ব্যবসা। শুরু করেছিলাম প্রথম ক্রেতা ছিলেন আমার আম্মা।
কনার উদ্যোগ Shimontini /সীমন্তিনী। সেখানে হ্যান্ডলুম মনিপুরী শাড়ি, ওড়না, মনিপুরী ফেব্রিকে নিজের ডিজাইনের গার্মেন্টস আইটেম রয়েছে। এছাড়াও আছে ডাই প্রোডাক্ট। ক্যামিকেল, ন্যাচারাল দুই মাধ্যমেই কাজ করেন তিনি। শাড়ি, কামিজ, টপ, ফতুয়া সবই করেন তিনি। অল্প পরিসরে দেশিয় উপকরণ দিয়ে গহনা তৈরি করছেন।বর্তমানে কোনো কারখানা নেই কনার তবে ডিজাইন প্ল্যানিং করে স্যম্পল করে কিছু নারীদের দিয়ে কাজগুলো করিয়ে নেন তিনি। একেবারে শেষ ধাপের কালারের কাজ তিনি নিজে করেন।
নারীরা যারা বাইরে কাজে যান না কিন্তু কিছু করতে চান এমন ৫ জন নারী নিয়েই কাজ করেন কনা।মাঝে মাঝে কাজের পরিধি বেড়ে গেলে লোকসংখ্যা বাড়াতে হয়। দেশে সবজেলাতেই ও দেশের বাইরেও যায় সীমন্তিনীর পন্য। প্রতি মাসে এক লাখ টাকার মতো পন্য বিক্রি হয়।
জয়িতা থেকে ফ্যাশন ডিজাইন,এস এম ই তে প্যাটার্ন মেকিং ট্রেনিং এবং ন্যাচারাল ডাইং বিষয়ক প্রশিক্ষন , সেট ই কমার্সে গয়না তৈরি প্রশিক্ষন সম্পন্ন করেন নিজের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য।
কাজের সূত্রেই women and Digital এর আয়োজনে Fashion with Purpose: A creative journey with Bibi Russell এ অংশগ্রহন করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিবি আপার মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার এর কাছে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জেনেছি। সীমন্তিনীকে এগিয়ে নিতে তাঁর পরামর্শ গাইডলাইন প্রয়োগ করব।
তিনি আরো বলেন, সীমন্তিনী নিয়ে পরিকল্পনা একটা ফ্যাক্টরি, একটা স্টুডিও আর প্রতিদিনের আরামের পোশাকে সীমন্তিনীর অবস্থান দেখা। সীমন্তিনীকে এগিয়ে নিব সবার সাধ্যের মধ্যে আর প্রতিদিনের স্বাচ্ছন্দ্যে। তরুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে ধৈর্যের বিকল্প নাই। সাহস রাখতেই হবে।
উদ্যোক্তা শাহীন আক্তার কনার বাবা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন,সেই সুবাদে ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকাতেই শৈশবের কৈশোরের বেশিরভাগ সময় কেটেছে কনার। ভাই বোনের মাঝে দ্বিতীয় তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরি জীবন শুরু করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। ৬ মাস পর ফার্মাসিউটিক্যালস এ যোগ দেন। পুরো ১৭ বছর কাজ করেন সেখানে তারপর চাকরি জীবনের ইতি টানেন।
সেতু ইসরাত,উদ্যোক্তা বার্তা