হাসিবুল ইসলাম হাসান ১৫০ টাকার একটি পাঞ্জাবি দিয়ে শুরু করে পনেরশো নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

২০০৬ সালে ছাত্র থাকা অবস্থায় উপলব্ধি করলেন নিজে কিছু একটা করবেন। তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন তিনি। সে সময় তার এক আত্মীয় তাকে পাঞ্জাবি পরা অবস্থায় দেখেন। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন পাঞ্জাবিটি হাসিবুল নিজেই তৈরী করেছেন। এটা শুনে ৫পিস অর্ডার দিয়ে ফেলেন তাকে। আত্মীয় পোশাক হাতে পাওয়ার পর ৫০০ পিস অর্ডার করলেন। এত বড় একটি অর্ডার, এ যেন এক স্বপ্নের মতো। কি করে সম্ভব করবেন তিনি অর্ডারগুলো।

সকল আত্মীয়-স্বজনকে বললেন তাকে সাহায্য করবার জন্য একযোগে কাজটি তুলবার জন্য। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই সকল হাতের কাজের পোশাক তৈরি হল। নিখুঁত ভাবে সকল অর্ডার ডেলিভারি সম্পন্ন হয়ে গেল। উদ্যোক্তা হবার পথে আগানোর সম্ভাবনা পেলেন এসএসসি পড়ুয়া কিশোর হাসান।

একজন মানুষ চাইলে যে অনেক জনকে কাজে লাগাতে পারেন সেটাই প্রমাণ পাওয়া গেল এবং প্রমাণ মিললেও প্রথম প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ কমপ্লিট করার পর। এরপর এক এক করে অর্ডার বাড়তে থাকে। আশপাশ হতে অনেক গ্রামের অনেক কর্মীর কর্মসংস্থান হলো। যারা সেলাই এবং নকশার কাজ পারেন তাঁদের প্রায় ১০০ জনের একটি টিম গঠন করলেন হাসান।

এভাবে কাজ চলছিল আর এর মধ্যে হাসান ডিগ্রী পাস কমপ্লিট করে ফেললেন। চাকরি ও মিলল স্থানীয় সরকারের ভিলেজ কোর্ট বা গ্রাম আদালতের সহকারি হিসেবে। কাজের সুবাদে তরুণ উদ্যোক্তা হাসানের অভিজ্ঞতা মিলল গ্রামের অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া, বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া নারীদের সম্পর্কে জানার। তাদের দুঃখ দুর্দশা এবং অসহায়ত্ব প্রত্যক্ষ করলেন উদ্যোক্তা হাসান। আর তখনই চিন্তার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়। যারা কাজ পেতে চাইতেন নিজে স্বাবলম্বী হতে চাইতেন এবং নিজের অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইতেন তাদের কথা চিন্তা করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ট্রেনিং, মহিলা অধিদপ্তরের ট্রেনিং সহ সকল কিছুতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নিয়ে এক এক করে নানান পণ্য উৎপাদনের হাত তৈরি করলেন তরুণ উদ্যোক্তা হাসান।

প্রথমে উদ্যোক্তার ১৫০ জন কর্মী ছিল তাদের সাথে নতুন করে প্যাঁচে প্যাঁচে কর্মীদের ট্রেনিং এবং কর্মসংস্থান ও পণ্য উৎপাদনের জন্য কাজ করতে থাকলেন হাসান।কাজ মিলতে থাকল এক; এক করে শুরু হয় উৎপাদন। তৈরি পোশাক নারী ও পুরুষের পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, সালোয়ার-কামিজ, ওয়ান পিস, কুর্তি, বাচ্চাদের পোশাক। এর মাঝেও তিনটি বিভাগ ব্লক বাটিক এবং এমব্রয়ডারি।

আদি জেলা বৃহত্তর ফরিদপুর এই অঞ্চলে বিখ্যাত হোগলা পাতার জন্য। হোগলাপাতার পাটি, ব্যাগ ঝুড়ি, টুপি, ফ্রুট বস্কেট, টিস্যু বক্স, লন্ড্রি বস্কেট, পেন হোল্ডার, পেপার হোল্ডার এমন অর্ধশত পণ্য উৎপাদন করতে শুরু করলেন তিনি। দিনদিন ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে, নিত্য নতুন পণ্যের অর্ডার আসতে থাকে উদ্যোক্তার কাছে। কর্মীর সংখ্যাও বেড়ে চলছে দিন দিন। বাঁশ, বেত, হোগলা পাতা, কাঠ,পাঠ ও কাগজের তৈরী শত শত পণ্য উঠতে থাকে হাসানের উঠানে।


বাসের আইটেমের ল্যাম্পশেড, অর্নামেন্টস বক্স, মেডিসিন বক্স, পেন হোল্ডার, সিল হোল্ডার ডালা-কুলা, পলই, চুলের কাঁটা, নেকলেস, কানের দুল,পাখির বাসা, সাপের ঝুড়ি, ফ্রুট বাস্কেট, ফ্লাওয়ার বাস্কেট, লন্ড্রি বস্কেট সহ ৫০ টিরও বেশী ক্যাটাগরির পণ্য বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন হাসান।

সঠিক কর্ম পরিকল্পনা আর কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন এই উদ্যোক্তা। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অনেক সম্মাননা।

মার্জিয়া মৌ,
উদ্যোক্তা বার্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here