ভেজালের ভিড়ে নিরাপদ ও রাসায়নিকবিহীন খাবার পৌঁছে দিতে কাজ করছে `তরতাজা ফুডস`। উদ্যোক্তা জাকারিয়া মুবিনের উদ্যোগের পেছনে কাজ করেছে স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহের ব্রত।
নারায়ণগঞ্জ শহরে জন্ম জাকারিয়ার। ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। করোনাকালে লকডাউনে চাকরি চলে যাওয়ায় অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েন। চাকরির বাজারের দুরবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেন নিজের উদ্যোগে কিছু করতে হবে। সেই সাথে একজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তার হিসেবে মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সেবার বিষয়টাও মাথায় ছিল তার।
২০২০ সালে ভেজাল ও কেমিক্যালমুক্ত অর্গানিক খাদ্যপণ্য মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে শুরু করেন ’তরতাজা ফুডস’।
দশ হাজার টাকার হাতে ভাজা মুড়ি আর ঘানিভাঙা ও মেশিনে ভাঙ্গা খাঁটি সরিষার তেল নিয়েই উদ্যোগ শুরু করেন জাকারিয়া। শুরুর পথচলাটা কঠিন হলেও শুরু থেকেই সমর্থন পেয়েছেন স্ত্রী ও বন্ধুদের। তিনি বলেন, “ভেজাল ও কেমিক্যাল মুক্ত খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও সংগ্রহ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। একটু ভেজাল যুক্ত করলে বা একটু ছাড় দিলেই লাভ বেড়ে যাবে অনেকগুণ এমন লোভ বিসর্জন দিয়েছি নীতিতে অটল থাকতে গিয়ে।”
প্রথমে অনলাইনে শুরু করলেও ক্রেতাদের ভেজালমুক্ত খাবার আরও বেশি পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলিতে একটি আউটলেট দেন জাকারিয়া।
হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য নিয়ে শুরু করলেও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে এখন রয়েছে হাতে ভাজা মুড়ি, ঘানিভাঙা সরিষার তেল, মেশিনে ভাঙ্গা সরিষার তেল, পাবনার খাঁটি ঘি, সরিষাবাড়ির পেঁড়া সন্দেশ, শেরপুরের তুলসীমালা চাল, ফুলবাড়িয়ার হাতে বানানো আখের লাল চিনি, সরকারি চিনিকলের লাল চিনি, ময়মনসিংহের চ্যাপা শুঁটকি, কক্সবাজারের লইট্যা শুঁটকি।
এছাড়াও নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত হলুদ, মরিচ, ধনিয়া গুড়া, ঢেঁকিছাটা মাসকলাই ডালের গুড়া, ঢেঁকিছাটা আতপ চালের গুড়া, সুন্দরবনের কয়েক প্রকারের চাকের মধু, সরিষা ফুলের মধু, লিচুর মধু, বড়ই এর মধু, কালিজিরার মধুসহ বিভিন্ন ফুলের চাষের মধু, দেশি গাভীর খাঁটি দুধ, ইলিশের ডিম, পিংক সল্ট, কালিজিরার তেল, হাতে বানানো অর্গানিক নারকেল তেল, পাটালি গুড়, ঝোলা গুড়, আখের গুড়, বিভিন্ন ধরনের মশলাসহ মিক্সড ড্রাই ফ্রুটস রয়েছে তার তালিকায়।
অনলাইন ও অফলাইনে মাসে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মতো বিক্রি করে থাকেন উদ্যোক্তা।
জাকারিয়া মুবিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “ভবিষ্যতে ঢাকাসহ সারাদেশে ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে ‘তরতাজা’-কে দেশীয় খাঁটি পণ্যের ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করতে চাই। চাই ভেজালমুক্ত অর্গানিক খাবার সবার হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে।”
হাবিবুর রহমান
উদ্যোক্তা বার্তা