পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ করলেন এক তরুণ। কিন্তু চাকরি জীবন তার পছন্দ হলো না। ছোটবেলা থেকে বাবা-চাচাকে যেভাবে ব্যবসা করতে দেখেছেন সেটিই তরুণকে বেশি আকর্ষণ করতো। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ হতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা তরুণ চাকরি থেকে বের হয়ে এলেন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। গড়লেন নিজের প্রতিষ্ঠান। হয়ে উঠলেন উদ্যোক্তা। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চককীর্তি গ্রামের মোঃ তোহিদুল ইসলাম তোহিদ।
রিভার মাশরুম সেন্টার এবং প্রয়োজন বাজার এর স্বত্ত্বাধিকারী তোহিদ। ২০২১ সালের শুরুতে ছোট্ট একটি ঘরে ৫০০ টাকা দিয়ে ১০টি স্পন কিনে শুরু করেন মাশরুম চাষ। শিকায় ঝোলানো পলিথিনে খড় দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো ব্যাগে এ মাশরুম চাষকে বলা হয় শিকা পদ্ধতি। তোহিদ তার মাশরুম খামারে পিও-টু, পিও-টেন এবং পিও-পি জাতের মাশরুম চাষ করে থাকেন।
তাজা ফ্রেশ মাশরুমের পাশাপাশি এই উদ্যোক্তা শুকনো মাশরুম, পাউডার মাশরুম, গ্যানোডার্মা মাশরুম, মাশরুম-চা, মাশরুম-কফি, মাশরুম আচার, মাশরুম শরবত, গ্যানোডার্মা মাশরুম চা ইত্যাদি পণ্য সারা দেশে সরবরাহ করেন। ছোট একটি ঘরে স্বল্প পরিসরে মাশরুম চাষ শুরু করলেও এক বছরের ব্যবধানে তিনটি ঘরের সমান জায়গায় এখন তার খামার। ১০টি থেকে আজ খামারে ৫,০০০ হাজার স্পন।
ড্রিম মাশরুম সেন্টার মাগুরা থেকে সাত দিনের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন উদ্যোক্তা। এছাড়াও শুভাকাঙ্ক্ষী এক বড় ভাই আব্দুল আজিজ এর কাছ থেকে মাশরুম সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়েছেন তিনি। সেই শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই তোহিদকে প্রিয়জন মাশরুম ফাউন্ডেশনে যুক্ত করেন। ওই ফাউন্ডেশন থেকেও মাশরুম চাষ সম্পর্কে অনেক তথ্য পান মোঃ তোহিদুল ইসলাম তোহিদ।
নিজের প্রতিষ্ঠিত রিভার মাশরুম সেন্টার এবং প্রয়োজন বাজার এর পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসা মামা ভাগ্নে ফল ভাণ্ডারের দেখাশোনাও করছেন তিনি। আমের রাজধানীতে বাসা হওয়ার সুবাদে ছোট বেলা হতেই আম, আমবাগান, আড়ৎ– এগুলোর সাথে পরিচিত ছিলেন তোহিদ। মাশরুম চাষের আগে থেকেই তিনি অনলাইনে আম নিয়ে কাজ করতেন। আমের মৌসুম শেষ হলে তোহিদ তার মায়ের হাতে তৈরি আচার নিয়েও কাজ করেন। বাসায় তৈরি বিশেষ পদ্ধতিতে ১২ ধরনের আচার বছরব্যাপি সারাদেশে সরবরাহ করেন এই উদ্যোক্তা। রিভার মাশরুম সেন্টারে মাশরুম এবং মাশরুমের যাবতীয় পণ্য আর প্রয়োজন বাজারে মাশরুম পণ্য, আচার, আম ইত্যাদি রয়েছে। পরিবারের লোকজন তোহিদকে এ কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। এছাড়াও তার সাথে একজন সহযোদ্ধা কাজ করছেন।
মোঃ তোহিদুল ইসলাম তোহিদ উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “চাকরি ছাড়ার পর যখন ভাবলাম উদ্যোক্তা হবো তারপর থেকেই বড় ভাবনা মাথায় ঘুরপাক করতে থাকলো, আমি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করবো? কি নিয়ে কাজ করা যায়! অনেক ভেবেছি, অনলাইনে সার্চ করে অনেক বিষয়ে জেনেছি; তারপর সিদ্ধান্ত নেই মাশরুম নিয়ে কাজ করবো। এর আগে আমি আম নিয়ে কাজ করতাম। আম নিয়ে কাজ করতে আমার কোন সমস্যা হয়নি কেননা জন্ম থেকেই আমি এগুলো দেখে বড় হয়েছি। মাশরুম চাষের সিদ্ধান্তের পর আমি প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পরিসরে শুরু করেছিলাম। ভয় পাচ্ছিলাম শুরুতে, কেননা সকলে ব্যাঙের ছাতা বলে ‘ধ্যাৎ ছাই’ করে উড়িয়ে দেয় কিনা, এ নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। পরে দেখলাম বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। দেশের অনেক জেলায় এখন আমার পণ্য যাচ্ছে। ১০টি থেকে আজ আমার ৫,০০০ হাজার স্পন। এটি সম্ভাবনাময় একটি খাত। আমার মতো অন্য তরুণরাও এই উদ্যোগ গ্রহণ করে সফল হতে পারেন।”
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা