উদ্যোক্তা- রানা আহমেদ সোহেল

ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা যেন সারাদিনের সতেজতা। সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতে এক কাপ চা আর সংবাদপত্রে চোখ বোলানটায় যেন চিরচেনা সকালের দৃশ্য। এটার তুলনা আর কিছুর সাথেই হয়না। ঠিক কবে থেকে আমরা চায়ের সাথে এমন অভস্ত্য হয়ে গেছি তা জানতে আমাদের অনেক পেছনে ফিরে দেখতে হবে।

চীন দেশই চায়ের আদি জন্মভূমি এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হলেও ভারতবর্ষে হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চা-চাষ। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। গ্রীকদেবী থিয়ার নামানুসারে এরূপ নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা-কে পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন-কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা। এছাড়াও, সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরো বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে।

এতোসব চায়ের মধ্যে হাতে তৈরি চায়ের কদর সবচেয়ে বেশী। গুণে, মানে ও স্বাদে হাতে তৈরি চা অনেক উন্নত হয়। উন্নত এসব চায়ের দামটাও অপেক্ষাকৃত রেগুলার চা থেকে বেশী। বাংলাদেশে এই প্রথম তৈরি হচ্ছে সেই হ্যান্ডমেড গ্রীন টি এবং উলং টি। দেশের শেষ সীমান্তবর্তী এলাকা ঠাকুরগাঁয়ে। প্রধান উদ্যোক্তা রানা আহমেদ সোহেল যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। তার সাথে বশির আহমেদ খানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন এই চা বাগান ‘অর্গানিক অরিজিন টি’। অর্গানিক অরিজিন ফার্মের একটি সিস্টার কনসার্ন এটি।

২০১০ সালের দিক থেকে বাগান তৈরীর কাজে নেমে পড়েন উদ্যোক্তা। প্রায় ৩০ একর জমির ওপর এই চা বাগানে গত এক বছর যাবত পাইলট প্রকল্পে উৎপাদন করছেন হ্যান্ডমেড চা। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে কর্মরত আছেন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন কর্মী।

উদ্যোক্তা বশির আহমেদ খান বলেন, “বাংলাদেশে এই প্রথম আমরাই তৈরি করছি হ্যান্ডমেড চা। যেটা বাংলাদেশে এর আগে কোথাও হয়নি আর এই পদ্ধতিতে চা তৈরির পূর্বে আমরা বলা যায় প্রায় সম্পূর্ণ বাংলাদেশে চা উৎপাদন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। শেষে আমরা দার্জিলিং গিয়েছি। দার্জিলিং খুব বিখ্যাত এই হ্যান্ডমেড চা তৈরির ক্ষেত্রে এবং আমরা সম্পূর্ণ সেই পদ্ধতি অবলম্বন করেই শুরু করি”।

তিনি আরো বলেন, “এই চা গুলোর স্বাদ একটু আলাদা। আমরা রেগুলার যে চা খেয়ে থাকি যা খাওয়ার পরে মুখে কোন স্বাদ থাকে না কিন্তু এই গ্রিন টি খাওয়ার পর প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা কখনো আরো বেশি সময় মুখে একটি স্বাদ অনুভূত হয়। যেটাতে আপনি সজীবতা অনুভব করবেন। আর চায়ের লিকারটি একবার নয় বরং পর পর তিনবার পর্যন্ত ব্যবহার করে পান করতে পারবেন। শুধু তাই নয় এই চা গুলো শরীরের জন্য, সুস্বাস্থ্যের জন্য ঔষধের মত উপকারী”।

উদ্যোক্তাদের দু ধরনের চায়ের মধ্যে যে গ্রিন টি তৈরি করছেন সেটি মূলত চায়ের কাঁচা পাতাকে প্রথমে রোস্ট করা হয়। তারপর হাত দিয়ে বিভিন্ন পরিমাপ অনুযায়ী চূর্ণ করা হয়। লিকারের কালার হবে ইয়োলো এবং গ্রীনের কম্বিনেশনে। যেখানে এন্টি অক্সিডেন্টর পরিমাণ রেগুলার চা থেকে অনেক বেশি থাকে এবং ক্যাফেইন এর পরিমাণ কম থাকে যা মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে এটি খুব কার্যকর।

আর উলং টির ক্ষেত্রে তৈরি পদ্ধতি কিছুটা আলাদা হলেও উপাদানে বেশ পার্থক্য। এটিতেও এন্টি-অক্সিডেন্টের পরিমান বেশি থাকবে ক্যাফিনের পরিমাণ কম থাকবে তবে গ্রিন টি থেকে তুলনামূলক একটু কম থাকবে এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান সেখানে বিদ্যমান থাকে।

খুব শীঘ্রই তাদের চা বাগানে উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছেন আরো বেশ কয়েকটি প্রজাতির চা। তার মধ্যে আছে আমলকি টি, জেসমিন টি, তুলসী টি, মিন টি, হোয়াইট টি বাই মুদাং এবং ওলং এর দুই ক্যাটাগরি নর্থ ফুজিয়ান ও সাউথ ফুজিয়ান।

উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা তাদের এই নতুন উদ্যোগ অচিরেই সমগ্র দেশের মানুষের কাছে উপস্থাপিত করতে পারবেন। দেশের মানুষ এটাকে গ্রহণ করবেন। কারণ বহির্বিশ্বে এই চা গুলো বেশ ব্যয়বহুল এবং খুব বেশি চাহিদা যা সুলভ মূল্যে তুলে দিতে পারবেন দেশের মানুষের হাতে।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here