হোস্টেল থেকেই উদ্যোগের শুরু

0
উদ্যোক্তা সিরাজুম মুনিরা

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী সিরাজুম মুনিরা। জামালপুরের জাকির হোসেনের মেয়ে মুনিরাকে পড়াশোনার কারণে থাকতে হয় কলেজের হোস্টেলে। আর সেখান থেকেই সামান্য কিছু জমানো টাকা দিয়ে শুরু হয় রংতুলি নিয়ে তার পেইন্টিং উদ্যোগ।

তখন লকডাউন, গৃহবন্দী জীবন। লেখাপড়ার চাপ নেই বললেই চলে। অবসর এবং একঘেঁয়েমির সময়টা যেন কোনভাবেই কাটছিল না। কারণে অকারণে মন খারাপ বিষন্নতায় রূপ নিচ্ছিল।  ঠিক তখন মন খারাপের থেরাপি হিসেবে মুনিরা বেছে নেন রংতুলিকে।

নিজের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে জমানো ১,৩০০ টাকা দিয়ে যাবতীয় সরঞ্জাম কিনে একটি সামজিক পাতায় “ক্যানভাস বাই মুনিরা” নামে একটি পেইজ খুলেছিলেন। শুরুটা ছিল সুপারি পাতার প্লেটে পেইন্টিং এর মাধ্যমে। 

প্রথম দুই মাস প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন সামাজিক পেইজকে দাঁড় করানোর জন্য। রাতের পর রাত জেগে পেইজ প্রমোশন করেন। সেই সাথে বিভিন্ন গ্রুপে কাজের ছবি পোস্ট করতে শুরু করেন৷ অল্প দিনেই বেশ সাড়া পেলেন তিনি।

২০২১ সাল থেকে শখকে প্রফেশন হিসেবে নিয়েছেন উদ্যোক্তা সিরাজুম মুনিরা৷ পেইন্টিং এর সকল কাজ তিনি হোস্টেলেই করে থাকেন৷ পড়াশোনার পাশাপাশি পেইন্টিং এর মাধ্যমে তিনি তার অবসর সময়কে যেমন কাজে লাগিয়েছেন, তেমনি ছাত্রাবস্থায় নিজের উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। এতে করে লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ তিনি নিজেই বহন করেন। পাশাপাশি বাবা-মাকেও সহযোগিতা করছেন। 

ক্যানভাস ক্যালিওগ্রাফি, ক্যানভাস পেইন্টিং আর সুপারি পাতার প্লেট পেইন্টিং নিয়ে কাজ করেন। শৌখিন এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় অনেকেই এখন ঘর সাজাতে সুপারি পাতার পেইন্টিং বেশ পছন্দ করছেন।

ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকেও অনেকে মুনিরার ক্যালিওগ্রাফি অর্ডার করছেন। একাধিকবার মালয়েশিয়া, জার্মানি, ইউ কে, কানাডায় গেছে ক্যালিওগ্রাফি আর সুপারি পাতার প্লেটের পেইন্টিং এর কাজ। 

এছাড়াও গাজীপুর, কেরানিগঞ্জ, সাভার, উত্তরা, মিরপুর, গুলশান, নিলক্ষেত, মহাখালি, মোহাম্মদপুর এবং ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ ভালুকা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ অনেক জায়গায় পৌঁছে গেছে তার পেইন্টিং। যেহেতু পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করেন, তাই মাসে ক্যানভাস ক্যালিওগ্রাফি গড়ে তিন থেকে চারটা করেন। মাসে গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার পেইন্টিং বিক্রি হয় তার। আজ পর্যন্ত প্রায় ২০০’র বেশি ক্যালিওগ্রাফিসহ পেইন্টিং করেছেন। 

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে সিরাজুম মুনিরা বলেন, নতুন যারা ক্যালিওগ্রাফি শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য কোর্স চালু করার ইচ্ছে আছে। এছাড়াও একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলে টিউটোরিয়াল দিতে চান। দেশি-বিদেশি এক্সিবিশনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছাও আছে তার।

তিনি বলেন, “স্বপ্ন যদি থাকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর, তবে পরিশ্রম এর বিকল্প নেই। বিশেষ করে আপুদের বলতে চাই। মেয়ে মানুষের অনেক বাধা আসবে। অনেক জটিলতার আঁচ পাবেন। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। পায়ের তলার মাটি মজবুত হলে দেখবেন সবই আপনার অনুকূলে।”

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here