উদ্যোক্তা- আনোয়ারা আক্তার শিউলী

ফুলে সাজানো ছোট্ট একটা রিকশা দেখলেই আপনার লাফিয়ে উঠে গদি দখল করতে মন চাইবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আপনি তা পারবেন না, তবে পাখীর বাসা দেখে ঠিকই শৈশবের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে অজান্তেই বলে উঠবেন –
“বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই-
কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই;
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা ‘পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”
বাবুই হাসিয়া কহে- “সন্দেহ কি তায়?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়;
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”

হ্যাঁ নিজ হাতে তৈরী তেমন ই সব খাসা খাসা দৃষ্টিনন্দন পণ্যের উদ্যোক্তা আনোয়ারা শিউলি যিনি শাওন ক্রাফট’স এর অধিকারী। তিনি শুধু এক জন উদ্যোক্তাই নন, তিনি উদ্যোক্তা তৈরীর একজন কারিগরও বটে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান মেলায় খুব ভালো সাড়া পেয়েছেন। প্রথম দিন বিকেল থেকেই তার স্টলে ক্রেতা সমাগম ছিলো অনেক।

তিনি বলেন, ” আসলে এই সব মেলার মাধ্যমে আমাদের প্রধান কাজ হয় প্রচারণা, পাশাপাশি বিক্রি। কিন্তু আমার বিক্রিও ভালো হয়েছে, বেশ কিছু অর্ডার পেয়েছি। আমার স্টুডেন্ট উদ্যোক্তাদের জন্য খুব ভালো একটা মাধ্যম এই মেলা।

তরুণ উদ্যোক্তা- নূর-এ আশরাফী নিপা

তার স্টুডেন্ট উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাওন ক্রাফটস এর পাশাপাশি আমি কারুশৈলী নামের একটা সংস্থাও চালাই, যে সংস্থার মাধ্যমে নারীদের ব্লক, বাটিক, হস্তশিল্পসহ রান্নাবান্না অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। নারীরা কাজ শিখে ঘরে সীমাবদ্ধ থাকার উদ্দেশ্যে নয় বরং তারা কাজ শিখে কিভাবে পণ্য তৈরী ও বাজারজাত করে আয় করবে তার উপর। সেলক্ষ্যে নতুন একজন উদ্যোক্তার করণীয় কৌশলগুলো শিখিয়ে দেওয়ায় আমাদের মূল লক্ষ্য।আমি চাই আমার এই সংগঠন থেকে যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু শুরু করছে তারা যেন একেকজন আমার থেকেও বড় উদ্যোক্তা হয়। যারা কিছু করতে চায় কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সঠিকভাবে কাজ শিখতে পারে না তাদের জন্য এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি কাজ করে যাচ্ছে।’

তরুণ উদ্যোক্তা- ইলেন রহমান

স্টলে আরও ৩জন ছিলো, তারাও হাসি মুখে এগিয়ে এসে নিজেদের পরিচয় দিয়ে বললেন, তারা কারুশৈলী থেকে ট্রেইনিং প্রাপ্ত এবং এখন তারাও সফল উদ্যোক্তা। তারা নিজ হাতেই পণ্য তৈরী করে বর্তমানে আনোয়ার শিউলির শাওন ক্রাফটস’র ব্যানারেই সেগুলো প্রদর্শন করছেন। তারা আরও জানান প্রশিক্ষণ গ্রহণ থেকে পণ্য বিক্রয় পর্যন্ত সকল কার্যক্রম দক্ষ হাতে সামলান উদ্যোক্তা আনোয়ারা শিউলি।

তরুণ উদ্যোক্তা- রিয়া

ঢাকার মিরপুর এলাকার আনোয়ারা আক্তার শিউলির সংস্থা কারুশৈলীর প্রধান অফিস। তরুণ এই উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনে রয়েছে তার নিজের পরিশ্রম এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে আনোয়ারা আক্তার শিউলিকে। তবে কখনোই দমে যাননি তিনি। নিজের মেধা, মননশীলতা, কর্মনিষ্ঠা এবং একাগ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।

আনোয়ারা আক্তার শিউলি বলেন, ‘শুরুটা আসলে নিজের ছোটবেলার ইচ্ছা থেকে। নিজের পায়ে দারাবার প্রত্যয়ে মায়ের কাছ থেকে ২০০৪সালে মাত্র ৫ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করি। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা থাকলেও আমার মনে হয় যে ঘরে বসে থাকার চেয়ে কিছু করলে ভালো হয়। ব্লক, বাটিক, হাতের নকশার কাজ করা শুরু করি।টোলারবাগে আটশ পঞ্চাশ স্কয়ার ফিটে ব্যাগ, পুতি দিয়ে ফলমূল, থ্রিপিস, বেড কাভার তৈরি করতে শুরু করলাম প্রথমে। এলাকার প্রতিবেশি, আত্নীয়-স্বজন, ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রশংসা দেখে আমার মনোবল এবং কাজ করার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার এবং ব্যবসার প্রসার আরও বাড়তে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই আমার ব্যবসার আরো প্রসার হোক। স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা অতিক্রম করা সম্ভব। আপনি যে কাজ ভালো পারেন এবং আপনার কাছে যত কম টাকাই থাক না কেন, সেটা দিয়েই শুরু করুন। কারণ কাজ শুরু না করলে কেউ জানবে না যে আপনি কাজ করতে পারেন বা কাজ করতে চান।’

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here