শুরুটা ছিলো নিজের জামা-কাপড় বানাতে গিয়ে, নিজের পছন্দের ডিজাইন দর্জিকে বুঝিয়ে বললেও বুঝতো না। বানিয়ে দিতো অন্য ডিজাইনে। তখন থেকেই ভাবনা আসে- নিজের পোশাক নিজেই বানাবেন। এছাড়া বাড়িতেও মেশিনের কাজ করতে দেখতেন মামা-মাসীকে। তাদের কাছ থেকেও দেখে দেখে অনেক কাজ রপ্ত হয়েছে। দু-একটা বানালেন, সকলে প্রশংসাও করলো। এরপর একটু একটু করে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবীর পোশাক বানানো শুরু হলো।
তারও আগে খুব ছোট থাকতে হাতে সুন্দর কার্টুন এঁকে ক্যালেন্ডার বানাতেন, নতুন বইয়ে মলাট লাগিয়ে সেখানে বিভিন্ন ডিজাইনের কার্টুন আর্ট করে দিতেন। সবাই খুশি হয়ে ২০ টাকা ৫০ টাকা দিতো তাতেই খুশি হতেন জয়া।
হ্যাঁ, কথা বলছিলাম মাদারীপুরের মা হারা ছোট্ট মেয়ে জয়া দত্তের। বাবা আর ছোট এক বোনের সংসারে বড় হন জয়া। এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হন জয়া। পড়াশোনার চাপ বেড়ে যায়। পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকায় নিজের শখের কাজ গুলো থেকে একটু বেড়িয়ে আসেন জয়া। বাবা সবসময় চাইতো পরিবারে ছেলে নেই, মেয়ে পড়াশোনা করে চাকরি করবে। এইচএসসি শেষ করে অনার্সে ভর্তি হন। এরমাঝে অনেক জায়গায় সেলাই ব্লক বাটিকের বিভিন্ন ট্রেনিং নিয়ে রেখেছিলেন।
পড়াশোনা শেষে চাকরি খুঁজতে গিয়ে অনেক হিমশিম খেতে হয় জয়াকে। তাই নিজের জানা কাজেই ছোট করে শুরু করেন তাঁর ব্যবসা। বাবার কোন হেল্প না পেলেও ছোট বোন পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক হেল্প করতেন তাকে।
মেয়ে মানুষ ব্যবসা করবে এইটা নিজের পরিবার থেকে যেমন মেনে নিয়ে চাইতেন না তেমনই বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি থেকেও আসত বাঁধা। চাকরি করে সংসারের কাজ সামলানো, বাচ্চা সামলানো সম্ভব হবেনা, পরিবারের সবাইকে বোঝালেন জয়া। তিনি তাঁর ব্যবসাকেই বড় করতে লাগলেন।
অনলাইনে পেইজ খুললেন “পৌনপনিক”। ছোট বোনকে নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে কাজ করেন। জামাকাপড়,গয়না,বিছানার চাদর,কানের দুল,লকেটসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরী করেন। জয়ার এক্সক্লুসিভ পণ্যের মধ্যে কাগজের বিভিন্ন রকম গয়না। দেশের নামিদামী ব্যান্ডের সাথে কাজ করার সুযোগ এসেছে জয়ার। অনেক মেলায় অংশগ্রহনও করেছেন। ৪বছর সময় অতিবাহিত হয়েছে, এখন জয়ার প্রতিষ্ঠানে ২০জন নারী কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান এমন প্রশ্নে জয়া আবেগ আপ্লুত হয়ে উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ” টাকা সবারই দরকার, কেউ সেটা চাকরি করে উপার্জন করতে চান কেউবা ব্যবসা করে। যে যে ভাবেই করুক তাকে সমর্থন করা উচিৎ, তার পাশে দঁড়ানো উচিৎ।আমি একা এতো দূর এসেছি, আরও যেতে চাই। ২০থেকে আমার কর্মীর সংখ্যা যেনো ২০হাজার হয়। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য আর যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের উৎসাহ দিবেন”।
বিপ্লব আহসান