ওহি বুটিকের স্বত্ত্বাধিকারী নার্গিস পারভীন। বুটিক নিয়ে দীর্ঘদিনের পথচলা। ছয় বছর অন্যের পণ্য আত্মীয় স্বজনের বাসায় যেয়ে-যেয়ে বিক্রি করেছেন। পোশাক বিক্রি হলে সেখান থেকে ৮০ বা ১০০ টাকা দেওয়া হতো। ওই ব্যবসার টাকা জমিয়ে ২০১১ সালের শেষে নার্গিস পারভীন নিজে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বর্তমানে খুচরা এবং পাইকারিভাবে পোশাক বিক্রয় করেন নার্গিস। মাঠ পর্যায়ে ৫০০ জন সহযোদ্ধা কাজ করছেন তার সঙ্গে, স্থায়ীভাবে তিনজন।
হ্যান্ডস্টিচ তার সিগনেচার পণ্য। সম্প্রতি তিনি পোশাকে ব্লকের কাজ যুক্ত করেছেন। শাড়ি, থ্রি-পিস, ওয়ান-পিস, টু-পিস, কাট ওয়ার্কের বিছানার চাদর, মসলিন শাড়ি ইত্যাদি পণ্য রয়েছে ওহি বুটিকে। এসএস শিশু পল্লি থেকে এমব্রয়ডারি বিষয়ে ৬ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তিনি। সারা দেশেই এই উদ্যোক্তার পণ্য যাচ্ছে। দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, রাশিয়া, সুইডেনে মসলিন শাড়িসহ ওহি বুটিকের বেশ কিছু পণ্য গেছে।
উদ্যোক্তা বার্তাকে নার্গিস পারভীন বলেন, “আমি আমার বরের সাথে তখন ঈশ্বরদীতে থাকতাম। আমি যে বাসায় ছিলাম ঠিক পাশের বাসায় এক ভাবি বুটিক আইটেম নিয়ে কাজ করতেন। তিনি কর্মী দিয়ে করিয়ে নিতেন আর বিভিন্ন মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি হতো। আমরা যখন রাজশাহীতে বেড়াতে আসতাম তখন আমাকে বলতেন, ভাবি নিয়ে যান এই পোশাকগুলো- দেখেন আপনার আত্মীয়-স্বজনরা পছন্দ করে কিনা। তাহলে বিক্রি করে দেবেন। আমি প্রথমে এমনিতেই দেখার জন্য নিয়ে আসলাম যে সত্যিই বিক্রি হয় কিনা। তারপর দেখলাম হ্যাঁ সত্যিই হচ্ছে। আমাকে অনেক ড্রেস দিয়েছিলেন, আমি শুধু একটা ফেরত নিয়ে গেছি। বাকিগুলো সেল হয়ে গেছে। তারপর ঈশ্বরদীতে পরিচিত যারা আছে তাদের বাসাতেও নিয়ে যেতাম। এভাবে খুব স্ট্রাগল করেছি সেসময়। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এভাবে কাজ করে অর্থ জমিয়েছি। বলতে পারেন ওই ভাবি আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে অন্যতম একজন। তার কাছেই আমার হাতে খড়ি। পরবর্তিতে ২০১১ সালের শেষ দিকে নিজে প্রোডাকশন-এ নামলাম। পুরোটা আমার আগের কাজ থেকে জমানো অর্থ দিয়ে। এখন পর্যন্ত আমি আমার উদ্যোগে আমার স্বামী বা বাবার কাছ থেকে কোন অর্থ নেইনি। ভবিষ্যতেও ইচ্ছে নেই। আমার বরাবর পরিকল্পনা ছিল আমার নিজের কিছু থাকবে যা আমি তৈরি করেছি। এভাবেই আমার শুরু।”
তিনি বলেন: আমি যে অর্থের অভাবে এগুলো করতাম তা কিন্তু নয়। আমার স্বামী চাকরিজীবী ছিলেন। তার আয়ে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলতাম। তবুও নিজে কিছু করবো এটা আমার ছোটবেলার স্বপ্ন। তাই ভাবি যখন বলেছেন আমি সে কাজে সম্মতি প্রকাশ করেছি। এরপর অনেক আত্মীয় স্বজন খুব কাছের অনেকে কটু কথা শুনিয়েছেন, সমালোচনা করেছেন। আমার যেহেতু লক্ষ্য স্থির ছিল, আমি তাদের কোন কথায় কান দেইনি। আর সে কারণেই হয়তো আজ আমি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়তে পেরেছি। খুব ভালো লাগে আজ তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করে। আমার বাবার বাড়ির পরিবার যেহেতু কনজার্ভেটিভ ছিলো, ওইসময় আমি বেশ চিন্তা নিয়েই কাজ করতাম। তবে এখন সকলে আমার পাশে। আমার হাসবেন্ড আমার প্রতিটি কাজে আগেও পাশে ছিলেন, এখনও পাশে আছেন; সন্তানরাও পাশে আছে। সকলে মিলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
পাইকারি বিক্রেতা হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন নার্গিস পারভীন। করোনা মহামারীর পরে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা কমেছে বলে জানান এই উদ্যোক্তা। তবে অনলাইনে খুচরা বিক্রয়ের প্রবণতা বেড়েছে। তিনটি মেলাতে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে এই উদ্যোক্তার। তিনি মনে করেন ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে মেলা।
নার্গিস পারভীন এর বাসা রাজশাহীতে হলেও বাবার চাকরির সুবাদে দেশের নানা প্রান্তে কেটেছে তার শৈশব। প্রায় ১২টি স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছে তাকে। পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজ থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। আগামীতে ওহি বুটিকের পরিধি আরো বাড়াতে চান নার্গিস পারভীন, সৃষ্টি করতে চান আরও অনেকের কর্মসংস্থান।
তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা