স্বামীর দেয়া ২৫শ টাকায় উদ্যোগ শুরু

0

২০২০ সালে সারাবিশ্ব যখন থমকে যায়, গৃহবন্দী সেই সময়টায় অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক সেই সময় মহিলা অধিদপ্তরের অধীনে SET প্রজেক্টের একটি অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশ নেন তৌহিদা আক্তার সংগীতা। স্বামীর অনুপ্রেরণায় সে সময় গহনা তৈরির কোর্সটি করেন তিনি৷ একটি প্রশিক্ষণেই বদলে গেলো সংগীতার আইডেন্টিটি। হয়ে গেলেন গৃহিনী থেকে উদ্যোক্তা।

গয়না তৈরীর ক্লাসটি সংগীতা কৌতুহলবশত করেছিলেন। ক্লাস চলাকালীন সময়েই কিছু অর্ডার পেয়ে যান। তারপর আনন্দমেলা, সর্বজয়া নারী সমিতি, ওম‍্যান ইন ডিজিটাল ও উই গ্রুপের মতো বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হোন।

সর্বজয়া নারী সমিতির পক্ষ থেকে সর্বজয়া নারী উদ‍্যোক্তা হিসাবে সর্বপ্রথম এ‍্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। এরপর আনন্দমেলা, ওম‍্যান ইন ডিজিটাল এবং UNDP থেকে প্রশিক্ষণ নেন এবং উপহার হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স পেলে নিজের উদ‍্যোগকে নিয়ে আরো বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন সংগীতা। এভাবেই শুরু হয় উদ‍্যোক্তার পথ চলা।

সংগীতা তার উদ্যোগের নাম দেয় Fresh Fashion। ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম বুটিকস নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি জুয়েলারি ও পেইন্টিং নিয়ে কাজ শুরু করেন।

উদ‍্যোক্তা হবার পিছনে কার অনুপ্রেরণা ছিলো সবচেয়ে বেশি এমন প্রশ্নে উদ্যোক্তা তৌহিদা আক্তার সংগীতা বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা হবার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার পরিবারের। স্বামী এবং শাশুড়ি আমাকে অনেক উৎসাহ দেন। মেলা চলাকালীন সময় তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেন। আমি আমার উদ‍্যোগ শুরুর পু্ঁজি স্বামীর কাছে থেকে পেয়েছি। পুঁজি ছিল প্রথম অবস্থায় ২৫০০ টাকা। এই টাকায় কিছু গয়না তৈরির উপকরণ কিনে শুরু করি উদ‍্যোগ। অর্ডার যেগুলো পেতাম তার লাভের টাকাগুলো জমিয়ে এবং স্বামীর কাছে থেকে আরো টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করতাম। এভাবেই আমি বিজনেস দাঁড় করিয়েছি।’

সংগীতা হাতের তৈরী সকল ধরনের গয়না নিয়ে কাজ করেন। এর মধ্যে রয়েছে লুমবিডিং, মেটাল,গায়ে হলুদের গহনা, অরিজিনাল মুক্তার গহনা, কাঠের গহনা, দড়ি ও ম‍্যাকরেমের গয়না, বহো জুয়েলারি, ফিউশন জুয়েলারি, লেদার জুয়েলারি, ওয়‍্যার জুয়েলারি এছাড়াও তিনি রোপ পেইন্টিং করেন।
ক‍্যানভাসের উপর পেন্টিং তার শখের কাজ হলেও এর কাষ্টমারও আছে।

গহনা তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে গয়না তৈরির প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন। নিজ পেজ/ উদ্যোগ থেকেও বেশ কয়েকটি জায়গায় ট্রেনিং দিয়েছেন।

সংগীতার তৈরি গহনা ব‍্যাগেজ পদ্ধতিতে ওম‍্যান ইন ডিজিটাল সংস্থার মাধ‍্যমে লন্ডন এবং আমেরিকায় রপ্তানি হয়েছে। এছাড়াও ট্রেনিং এ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে ট্রেইনাররাও তার গয়না নিয়ে গেছে সিঙ্গাপুর, মালেশিয়ায় ও ভারতে।

অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গহনা সেল করেছেন এমনকি বিভিন্ন মেলাগুলোতেও তিনি অংশগ্রহণ করেন।

মাসে ২০ থেকে ৩০ পিস গহনা উৎপাদন করেন এবং তার স্টুডেন্টদের কাছে থেকে কিছু গয়না কালেক্ট করেন। বেশিরভাগ সময় মাসে ১০,০০০ – ১৫,০০০ টাকার গহনা বিক্রি করেন।

সংগীতা বলেন, আউটলেট দেয়া এবং ব্রান্ড তৈরী করা আমার লক্ষ্য। আমি এমন একটি আউটলেট দিতে চাই যেখানে নারীদের উৎপাদিত পণ্য থাকবে শুধু।

তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজের উদ‍্যোগকে আগে ভাল করে বোঝার পর উদ‍্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এমন কিছু নিয়ে উদ‍্যোগ নিবেন না যেটাতে আপনার আগ্রহ নাই। যদি আগ্রহ ছাড়া উদ‍্যোগ প্রতিষ্ঠা করতে যান তবে যতই পরিশ্রম করেন না কেন কখনও উদ‍্যোগ প্রতিষ্ঠা পাবেনা এবং হতাশ হয়ে পড়বেন। ভাল লাগে এমন কাজকে উদ‍্যোগ হিসাবে নিলে ভালবাসার কারনে উদ‍্যোগ একদিন অবশ্যই দাঁড়াবে।

 

বর্তমানে সব কিছু থেমে গেছে দেশের পরিস্থিতির কারণে। মানুসিক ভাবে অনেকেই বিধ্বস্ত তবে এরই মাঝে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা। আবারও নতুন করে শুরু করছেন কাজ। এই প্রসঙ্গে সংগীতা বলেন, এসএমই সেক্টরকে ঢেলে সাজানো দরকার। আমাদের অনেকেই তার উদ‍্যোগ দিয়েই সংসার খরচ বহন করে। ফলে অনেকেই কষ্টে পড়েছে। আশা করছি সবাই মিলে উদ‍্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়াবে। এগিয়ে যাবে আপন লক্ষ‍্যে।

উদ্যোক্তা তৌহিদা আক্তার সংগীতা রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ইডেন মহিলা কলেজ থেকে। ফ‍্যাশন ডিজাইনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি একজন পুরোদুস্তর উদ্যোক্তা। সাংবাদিক স্বামী এবং শাশুড়ির অনুপ্রেরণায় ২ সন্তানকে সাথে নিয়ে তিনি তার উদ্যোগ পরিচালনা করছেন।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here