মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করে সবাইকে তাক লাগিয়ে মুম্বাইয়ের ১০০ কোটি টাকার মালিক। স্কুল বয় থেকে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী বিজনেস ম্যান।
এ কোনো রুপকথার গল্প নয়, কে এই বিস্ময় বালক?
কারো সাহায্য নিয়ে নয়, বরং নিজের বুদ্ধি দিয়েই এই ছেলেটি মাত্র ১৩ বছর বয়সেই গড়ে তুলেছিলো এমন এক কোম্পানি যার বার্ষিক টার্ণ ওভার ১০০ কোটি টাকা।
আর বর্তমানে তার কোম্পানির বার্ষিক টার্ণ ওভার ১০০ কোটিরও বেশি। সেখানে কাজ করে প্রায় ৫০০ এর বেশি কর্মচারী।
কৈশোরে পা দিতে না দিতেই নিজস্ব ব্যবসা শুরু করা সর্বকনিষ্ঠ এই উদ্যোগপতির নাম তিলক মেহতা। যে বয়সে সকলে স্কুলের পড়া ও পরীক্ষার নম্বর নিয়ে চিন্তা করেন, সেই সময়ে ব্যবসার দুনিয়ায় পা রাখেন তিনি, বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী বিজনেসম্যান হিসেবে পরিচিতি পান৷
বয়স শুধুই সংখ্যা আর সেটাই প্রমাণ করলো তিলক মেহতা।
তিলক ভারতের মুম্বাইয়ে বাবা মায়ের সঙ্গে বসবাস করেন। তার বাবা মহেষ মেহেতা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। মা কাজল মেহেতা একজন গৃহিণী। ছোটবেলায় একবার মামার বাড়িতে বেড়াতে যায় তিলক, সেখানে পড়াশোনাও করে। কিছুদিন পর বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। বাড়ি ফেরার পর খেয়াল হয় সে বই মামার বাড়িতে রেখে এসেছে, এরই মধ্যে সামনে তার ঐ বিষয়েরই পরীক্ষা। খুব চিন্তায় পড়ে যায় তিলক। সে সব বই পার্সেল করে বাড়িতে আনার চেষ্টা করতে থাকে, একাধিক কুরিয়ার সংস্থাকে বই নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন তিনি কিন্তু ঐদিনই বই ফেরত আনার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি কেউই। আর তখনই নিজস্ব ব্যবসা শুরুর ভাবনা মাথায় আসে, ১৩ বছরের তিলকের।
ঐ ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে বুদ্ধি খাটিয়ে নিজস্ব সংস্থা খুলে ফেলে তিলক৷ ২০১৮ সালে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ‘পেপার্স এন পার্সেল’ নামের একটি স্টার্টআপ গড়ে তোলে তিলক। মুম্বাইয়ের ডাব্বাওয়ালাদের সহযোগিতায় একদিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার ডিজিটাল কুরিয়ার সার্ভিসের। ছোট্ট একটা কলম থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রীই পেপারস এন পার্সেল পৌঁছে দেয় ক্রেতার বাড়িতে।
এই সংস্থা খোলার কয়েক বছরের মধ্যে – এই সংস্থা লাভের মুখ দেখে। তিলকের প্রথম চেষ্টা ছিলো কাউকে যেনো অপেক্ষা করতে না হয়৷ কোনো জিনিস কোনো জায়গা থেকে নিয়ে আসার জন্য আর সেটা যেনো সাধারণ মানুষ খুব কম খরচে করে উঠতে পারে। তিলকের কোম্পানিতে কম খরচে পার্সেল পাঠানোর সুযোগ রয়েছে আর এই কারণেই সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সংস্থা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
মুম্বাইয়ের ডাব্বাওয়ালাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই এই ব্যবস্থা চালু করেন তিলক। প্রাথমিক ভাবে ব্যবসায় শুরু করতে বাবার থেকে অর্থ সাহায্য নেয়। যা দিয়ে ডাব্বা ওয়ালাদের সঙ্গে মুম্বাই শহরে কম খরচে পার্সেল ডেলিভারি দেয়া শুরু করে সে।
তিলকের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘পেপারস এন পার্সেল’ মূলত একটি জরুরি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। মোবাইল থেকে ওই অ্যাপ ডাউনলোড করে এই পরিষেবার সুবিধা নেয়া যায়। বর্তমানে এতে যুক্ত আছেন দুই শতাধিক কর্মচারী। এ ছাড়া তিন শতাধিক ডাব্বাওয়ালা এ অ্যাপের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে খাবার সরবরাহ করে থাকেন। প্রতিবারে ৩ কেজি জিনিস পৌঁছানো যায় মুম্বাই শহর ও শহরতলীতে। জিনিসের ওজন অনুযায়ী খরচ নির্ধারণ করা হয়। সর্বনিম্ন ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা পর্যন্ত ফি নিয়ে থাকে তারা।
২০১৮ সালে তিলক ‘ইয়াং এন্টারপ্রেনার টাইটেল অ্যাট দ্য ইন্ডিয়ান মেরিটাইম অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার অর্জন করেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জিতে নেয় গ্লোবাল চাইল্ড প্রোডিজি অ্যাওয়ার্ড। ২০২০ সালের মধ্যেই তিলকের কোম্পানি বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়ায় ১০০ কোটি টাকায়।
2021-এ দেশের এই সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোগপতির মোট সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় 65 কোটি। তিলকের সংস্থায় কর্মী সংখ্যা ২শ। এছাড়াও পেপার এন্ড পার্সেল এর সঙ্গে জড়িত আছে ৩০০ এর অধিক ডাব্বাওয়ালা। দিনে প্রায় ১২শ এর বেশি পার্সেল ডেলিভারি দিয়ে থাকে এই সংস্থা। মাসে 2 কোটি টাকা রোজগার করেন তিনি। এই সম্পত্তির পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি করছেন তিনি।
তিলকের এই যাত্রা পথে বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।