ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেন মোঃ মাহবুবুল হক, পেশা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।ডাইভারসিফাইড জুট প্রোডাক্টের একজন সফল উদ্যোক্তা। নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ভোলাবো গ্রামে জন্ম এবং বেড়ে ওঠার কারণে ছোট বেলা থেকেই অনেক পাট এবং পাট চাষের জমি দেখেছেন, নিজে চাষ করেছেন, নিড়ানী দিয়েছেন, পাট জাগ দিয়েছেন, পাট কেটেছেন। মাত্র বিশ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে তার যাত্রা শুরু।
২০০২ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পাট গবেষক ও বিজ্ঞানী ড: আবদুল্লাহ, জেডিপিসি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।তখন থেকেই ডাইভারসিফাইড জুট প্রোডাক্ট নিয়ে এক মহাযাত্রা শুরু হয়। প্রায় তিন হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তাদের এক করেন, তাদেরই এক গুণী সফল উদ্যোক্তা মাহবুবুল হক।
পাট ও তাঁত নিয়ে কাজ করলেও পাট ক্ষেত্রে স্থির হন ব্যবসায় উদ্যোগী মাহবুবুল হক। জেডিপিসি সবচেয়ে বড় সহায়তাটি সে সময় করে, পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট এর ড: কামাল উদ্দিন আহমেদ, উদ্যোক্তাদের দিয়েছিলেন অবারিত স্বাধীনতা কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য।
উদ্যোক্তার সফলতার গল্প দেখুন ইউটিউবে-দেখতে ক্লিক করুন
যাত্রা শুরু ২০০৪ সালে, এক পরিবর্তনের চিন্তা পণ্য নিয়ে নার্সারী পট, যা কিনা পলিথিনেই তৈরী এবং সরবরাহ হতো। জেডিপিসি প্রথম মেলায় মাত করে দিলেন মাহবুবুল হক, মেশিনা্রিজ দিয়ে, দেখালেন পরিবেশ বান্ধব নার্সারী পট এবং সয়েলসেভার জিওজুট তৈরীর মেশিন দিয়ে।মোঃ মাহবুবুল হক উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই পাটের প্রতি একটা আকর্ষণ কাজ করতো আমার। যখন আমার মা কিংবা চাচীগণ পাটের কাজ করতেন তখন আমিও পাশে বসে বসে শিখতাম। এই আগ্রহের কারণেই আমি ছোট থেকেই পাট দিয়ে নানান পণ্য তৈরীর কাজ কিংবা পাট সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করবার চেষ্টা করি। এই প্রবল ইচ্ছেই আমার মাঝে একজন উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নটা সৃষ্টি করে’।
২০০৬ সাল, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেস্ট প্রোডিউসার অফ দি জুট ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্ট অ্যাওয়ার্ডটি পেলেন মাহবুবুল হক। ২০০৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম উৎপাদন শুরু হলো, নিজ গবেষণা দিয়ে এবং অর্ডার দিয়ে ডাইভারসিফাইড জুট প্রোডাক্ট উৎপন্ন করে তা বাজারজাত করতে শুরু করলেন নানান ফ্যাক্টরির সাথে, স্থানীয় এবং বিশ্ববাজারে।
স্কুল ব্যাগ, কলেজ ব্যাগ, কোট এবং ব্লেজার এর কাপড় ২০০৮ সাল পর্যন্ত চললো উৎপাদন। এরপর এলো শাল, ল্যাপটপ ব্যাগ, ওড়না, পর্দার কাপড়। ২০১১ সাল, গ্রোসারী ব্যাগ বা শপিং ব্যাগ এর বহুমাত্রিকতা নিয়ে কাজ শুরু করলেন। ২০১২ সাল, পাপোস, সোফা, কুশন কাভার, টেবিল রানার, কোটী এবং কোট এর কাপড়। ২০১৫ সাল, ফেব্রিক্স এর বহুমাত্রিকতা, নিজের হাতে বাসায় বসে নানান সম্ভাব্য পাট জাত ফেব্রিক এর পরীক্ষণ এবং সেটার মান বা স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং করে প্রোডাকশন করেন উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তা বার্তা মোঃ মাহবুবুল হকের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই আমার বড় পরিসরে কিছু করবার চিন্তা ছিলো না। আমার লক্ষ্য ছিলো কিভাবে পাট দিয়ে নানান রকম পণ্য তৈরী করতে পারি, যা দেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে’।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০১৫ সাল, জেডিপিসি প্যাভিলিয়নে অনেক অর্ডার আসলো ছোট ছোট। সেখান থেকে যাত্রা শুরু, নতুন অর্ডার গুলো নিয়ে। বিভিন্ন এজেন্সি, ব্যক্তি এবং বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে মাধবদীতে পারিবারিক বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষী সকলে মিলে একটি বড় কারখানা থেকে কাজ করিয়ে নেন। সেই সাথে কারখানা থেকে ট্রেনিং দিয়ে উৎপাদন করিয়ে নিচ্ছেন অর্ডারকৃত পণ্যের।
মেশিন ডেভেলপ করে দিয়েছেন এবং কর্মীরা ট্রেনিং নিয়েছেন এবং উৎপাদন করছেন পণ্য। লেডিস ওয়ার, শাল, লেডিস ব্যাগ, ফাইল ব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগ, পাপোস, টেবিল রানার, শপিং ব্যাগ, গ্রোসারি ব্যাগ, জুট ফেব্রিকস পর্দা, প্রায় ৩২ টি ডাইভারসিফাইড বা বহুমুখী পাট পণ্য ডিজাইন এবং উৎপাদন করছেন উদ্যোক্তা মাহবুবুল হক।
প্রজন্ম আজ অনেকটা দ্বায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। তারা বিশ্ব দরবারে পাটকে নিয়ে কাজ করবার জন্য বদ্ধ পরিকর।লুৎফুন নেওয়াজ, একমাত্র ছেলে পড়াশোনা করেছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। পরিবারের সহযোগিতা অনেক, স্ত্রী নিলুফার মাহবুব নিজের গহনা বেঁচে টাকা দিয়েছেন গবেষণার জন্য এবং পাটজাত পণ্য তৈরির জন্য।
উদ্যোক্তা মাহবুবুল হক তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মূলধনের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ একজন উদ্যোক্তার মনোবল, তার ধৈর্য্য, তার সততা এবং তার লক্ষ্য জয় করবার অনড় স্পৃহা। এই সব কিছুই একজন উদ্যোক্তাকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে এবং সফলতার আঙিনায় তার পদচিহ্ন রেখে যাবে’।
একা যাত্রা শুরু করেছিলেন পাটজাত পণ্যের ভুবনে, আজ বাংলার পাটে বিশ্ব মাতিয়ে তুলতে প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্যের গবেষণা ও উৎপাদন করছেন, সফল উদ্যোক্তা মো: মাহবুবুল হক।
মোঃ মাহবুবুল হক তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, বিশ্বব্যাপী সকল স্থানে বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা পাট দিয়ে তৈরী নানান পণ্যকে কাজে লাগাতে চান, পাটজাত পণ্যগুলোর চাহিদা থাকবে শীর্ষে এবং সকলে পাটজাত পণ্য বলতে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যগুলোকেই ব্যবহারের জন্য সবসময় প্রাধান্য দিবে।