ফারহানা ফওজিয়া সুইটি (পারু)। একজন শিক্ষার্থী ও নারী উদ্যোক্তা । নারীদের হাতের কাজের থ্রি পিস,ওয়ান পিস, ও পাঞ্জাবি নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
সম্প্রতি উদ্যোক্তা বার্তার সাথে কথা বলেছেন ফারহানা ফওজিয়া সুইটি (পারু), আসুন কথায়, কথায়, জেনে নেই “অপরাজিতার” কথা।
ছোটবেলার গল্প বলতে গিয়ে উদ্যোক্তা পারু বলেন- “খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। কিন্তু আমার মা কখনও আমাদের সেই অভাবটা বুঝতে দেননি। সব সময় আমাদের পাশে ছিলেন বট গাছের ছায়ার মতো করে, এবং এখনো আছেন। পরিবারে আমার বড় বোন সব সময় আমার কাজকে সাপোর্ট করেছে, আর আমার ছোটবোন আমাকে আমার কাজে সর্বতোভাবে সাহায্য করে থাকে”।
উদ্যোক্তা পারু তার সমস্ত কাজের নকশা, সেলাই,প্যাকেজিং, সব কিছু নিজ হাতে করতে পছন্দ করেন । পারু স্বপ্ন দেখেন আকাশ ছোঁয়ার, সেই সাথে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার। যখন থেকে পারুর মনে হয়েছে যে তার কিছু একটা করা দরকার, অথবা এখনি সময় কিছু করার’ ঠিক তখন পারুর পরিবার ও খুব কাছের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী মানসিক ভাবে পারুকে সাপোর্ট করেছে এবং পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছে। এই ব্যাপারে বলতে গেলে পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে পেয়েছেন সাপোর্ট। আর এই ভালোবাসার জন্যই উদ্যোক্তা আজকে এই উদ্যোগটা নিতে পেরেছেন।
কাজ করতে গিয়ে পারু যে নেগেটিভ মন্তব্য শোনেননি তা কিন্তু নয়, অনেকেই বলেছেন এত পড়াশোনা করে শেষে কিনা সেলাই কাজ করবে চাকরি-বাকরি কিছু একটা করো এভাবে কি জীবন চলবে! পারু সমালোচনাকারীদের কথায় কোনো কান দেননি, কেননা পিছু লোকের কিছু কথায় নিজের কাজকে ছেড়ে দেওয়ার মত বোকামি আর কোন কিছুতে নেই।
উদ্যোক্তা পারু বলেন – “ছোটবেলায় এইসব নিয়ে কিছু কখনো ভাবা হয়নি কিন্তু যখন থেকে বুঝতে পেরেছি নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে হবে,তখন থেকে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।সেটা নিজের পরিচয় তৈরি করার জন্য। কিন্তু তখনো সাহস করে উঠতে পারিনি কাজ শুরু করার। ভাবতাম ভবিষ্যতে চাকরিও করবো পাশাপাশি ছোটখাটো একটা ব্যবসা দাঁড় করাবো।
এখন উদ্যোক্তা পারু নিজের পরিচয় তৈরি করার একটা ক্ষেত্র তৈরী করেছেন যার নাম “অপরাজিতা”। ভবিষতে উদ্যোক্তা একজন অপরাজিত অপরাজেয় সফল উদ্যোক্তা হবার আশা ব্যাক্ত করেন।
বিনিয়োগ ও কাজের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে উদ্যোক্তা বলেন- “প্রতিটা কাজে প্রথম ধাপে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে বা তৈরি হয় আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয় নি। একদম শূন্য থেকে শুরু করি অর্থাৎ শূন্য বিনিয়োগ নিয়ে আমার কাজ শুরু হয় আমার নিজের জন্য তৈরি করা কয়েকটা জামার ছবি নিজের ফেইসবুক পেইজে আপলোড করার পর কাস্টমার পছন্দ করে অর্ডার করেন, তিনি যে কাজের জন্য অগ্রিম টাকা টা আমাকে অ্যাডভান্স করেছিলেন, মূলত: সেটাই ছিল আমার ব্যবসার প্রথম মূলধন। এভাবেই আমার অপরাজিতার পথ চলা শুরু হয়”।
উদ্যোক্তা তার ব্যবসার ক্ষেত্রে খুব ভেবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। পণ্যের প্রতিটা জিনিসের ভালো-খারাপ দিক বিচার বিশ্লেষণ করে সব দিক থেকে গ্রাহকের জন্য বেস্ট ওয়ান বিবেচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকেন।
প্রবাদ আছে দেশীয় পণ্য কিনে হোন ধন্য। উদ্যোক্তা যেহেতু দেশীয় পণ্য হাতের কাজের জামা নিয়ে কাজ করছেন সে ক্ষেত্রে কাপড়ের কোয়ালিটি, হাতে কাজের মানের উপর সদা সর্বদাই কড়া নজর রাখেন যাতে ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক যা যা প্রয়োজন সেই ধরণের পণ্যে “অপরাজিতাতে” রাখার চেষ্টা করেন। কাস্টমার সন্তুষ্টি বলে একটা কথা আছে সেটা মাতায় রেখে উদ্যোক্তা কাস্টমাইজ জামা তৈরি করে থাকেন। উদ্যোক্তা এই প্রসঙ্গে বলেন- “প্রতিনিয়ত নতুনত্ব নিয়ে আসতে আমার খুব ভালো লাগে সৃজনশীলতা মনোভাব থাকার কারণে কাজটা আমার জন্য একটু সহজ হয়েছে”।
উদ্যোক্তা তার গল্প শেষে বলেন – “আমি আমার কাজের মাধ্যমে আমার “অপরাজিতা” কে এমন একটা স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে অনেক অসহায় মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমি চাই আমার দেশের নারীরা নিজ কর্ম গুনে মাথা উঁচু করে সমাজে বাঁচুক, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে মাথা নিচু করে নয়।তারা আত্মকর্মে বলিয়ান হয়ে নিজেরা উপার্জন করে স্বাবলম্বী হোক, সংসারের হাল ধরুক। সেখানে অপরাজিতা যদি হয় পাঁচটার নারীর উপার্জনের জায়গা তবে তাতেই আমার সার্থকতা”।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা