পোশাককে আরও সুন্দর, বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আবহমানকাল থেকে নকশা করার প্রচলন চলে আসছে। কাপড়ে নকশা করার কাজটি বিভিন্নভাবে করা হয়। তার মধ্যে সুঁই সুতার সাহায্যে হাতের সেলাই ও মেশিনের সাহায্যে এমব্রয়ডারি নকশা করা অন্যতম। নতুন নতুন নকশার মাধ্যমে অতি সাধারণ এবং স্বল্প মূল্যের পোশাকও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
অতীতে এদেশের মেয়েরা তাদের অবসর সময় সেলাই করে কাটাতেন। তাদের সেলাইয়ের প্রতিটি ফোঁড়ে ফুটে উঠত তাদের সুখ, হাসি, কান্না জীবনের কাহিনী। শহরের চেয়ে গ্রামের মেয়েরাই
এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তবে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও দেশের বাইরে সূচি শিল্পের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক নারী পুরুষ এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে।
তেমনি একজন যশোরের মেয়ে উম্মে সালমা। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সিএসই বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সূচিশিল্পের হারিয়ে যাওয়া ফোঁড় নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন।
যশোরে নকশীকাঁথার হারিয়ে যাওয়া ফোঁড়গুলো তথা নকশীকাঁথা নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা করছেন। ইতোমধ্যে নকশিকাঁথা নিয়ে গবেষণার বেশ কিছু কাজও শুরু করেছেন উদ্যোক্তা উম্মে সালমা।
সূচিশিল্পের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থেকে কাজ শুরু করেছেন উদ্যোক্তা উম্মে সালমা। নিজেকে একজন দক্ষ সূচিশিল্পী হিসেবে গড়তে তুলতে এবং বাংলাদেশের অবহেলিত সূচিশিল্পীদেরকে নিয়ে কাজ কারতে চাওয়া থেকে তার উদ্যোক্তা হওয়া।
উম্মে সালমা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, পঞ্চম শ্রেণি থেকেই সূচিশিল্পের চর্চা ও ভালবাসা থাকায় এটা আমার অবসরের সঙ্গী ছিলো সবসময়। ২০১৮ সাথে এপ্রিলে আমার একটা পা ভেঙে যায়। তখন অবসর সময় কাটানোর জন্য সূচিশিল্পের একটা কামিজে কাজ শুরু করি। আমার হাতের কাজ দেখে আম্মা নাম মাত্র পুঁজি দিয়ে কাজ শুরু করতে উৎসাহিত করেন। পরে শাশুড়িও আমাকে অনেক উৎসাহিত ও সাহায্য করেছেন উদ্যোক্তা হওয়ার পথে৷
‘‘সালমা’স এমব্রয়ডারি’’ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পেইজ আছে। সরাসরি বিদেশে রপ্তানি না করলেও বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে তার পণ্য বিদেশের মাটিতে পৌঁছেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সব জেলাতে উদ্যোক্তার পণ্য যায়।
বর্তমানে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০ পিস পণ্য উৎপাদন করেন উদ্যোক্তা। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা।
শুরুর গল্পটা কেমন ছিল জানতে চাইলে উদ্যোক্তা জানালেন, ‘‘মাত্র ৬০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম সূচিশিল্পের রুমাল, উইডিং হুপ আর্ট, হুপ আর্ট, শাড়ি, কামিজ সেট, কুর্তি, পাঞ্জাবি এবং হোম ডেকোরেশনের সকল পণ্য তৈরির কাজ। মোটামুটি ১০ থেকে ১১ রকম পণ্য নিয়ে কাজ করছি।’’
উদ্যোগের প্রথম এক বছর উদ্যোক্তা সালমা নিজেই সব কাজ করতেন। বর্তমানে ২০ জন দক্ষ সূচিশিল্পীকে তার উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন।
সূচিশিল্পীদের সৃজনশীলতাকে সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সূচিশিল্পীদের যে সৃজনশীলতা, দক্ষতা এবং সৃষ্টিশীলতা তার সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং গ্রাম বা শহর যেখানেই হোক অবহেলিত সূচিশিল্পীদের সঠিক সম্মানের জন্য কাজ করার উদ্দেশ্য আমার এই উদ্যোগ।’’
নিজে একজন সূচিশিল্পী হিসেবে যে সম্মান আশা করেন সেই সম্মানটা অন্য সূচিশিল্পীরাও পাক, এটাই সালমার চাওয়া।
এছাড়াও ভবিষ্যতে নিজের একটি সূচিশিল্প পণ্যের ব্র্যান্ড গড়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সূচিশিল্পীদের দক্ষ কাজগুলো নিয়ে একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করতে চান।
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা