উদ্যোক্তা নুরুন নাহার লাভলী

নুরুননাহার লাভলী রাজশাহীর শালবাগান এলাকার মোঃ নুরুল ইসলাম এবং রেহেনা বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার চাকরিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করতে হয়েছে। এভাবেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শৈশব-কৈশোর পার করেছেন উদ্যোক্তা নুরুন নাহার লাভলী।

লালপুর থানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, পরবর্তী রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। কিছু দিনের মধ্যেই স্বামীর ঘরে পাড়ি জমাতে হলো। হয়ে উঠলেন পুরোদস্তর গৃহিণী। কিন্তু এ পরিচয়ে সন্তষ্ট ছিলেন না লাভলী। বাসায় বসে বসে অবসর সময়ে বিভিন্ন ধরনের সেলাই করতেন পছন্দ করতেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি চিন্তা করলেন, ‘এই সেলাইয়ের মাধ্যমেই আমি সামনে এগোবো’।

সময়টা ২০১৩ সাল। ১০ হাজার টাকা পুঁজি সাথে করে ৫ জন কর্মী নিয়ে উদ্যোক্তা জীবনে শুরু করলেন নুরননাহার লাভলী এবং সাথে তার বোন লাকী জিয়া। প্রতিষ্ঠানের নাম রাখলেন ‘ইউনিক গ্যালারি’।

সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে দুই বোন মিলে পুরো বিষয়টা দেখাশোনা করতেন। শুরুর দিকে এ্যাপলিকের শাড়ি, কাটওয়াকের কাজ ইত্যাদি করতেন বর্তমানে পণ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে ওয়ানপিস, টুপিস, থ্রিপিস, ফোরপিস, গায়ের চাদর, বিছানার চাদর,শাড়ি সহ আরো অনেক পণ্য। পাশাপাশি তিনি হাতে তৈরি গহনাও তৈরি করছেন।

মেয়ের পড়াশোনা এবং অন্যান্য কিছু পারিবারিক সমস্যার কারণে নুরুননাহার লাভলীকে পাঁচ বছর বন্ধ রাখতে হয় ইউনিক গ্যালারির কার্যক্রম। শেষ তিন বছর ধরে আবারো ভালোবাসার উদ্যোগে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। আবারো এক মর্মান্তিক বিষয় ঘটে গেল তার জীবনে, কাজের সঙ্গী, খেলার সঙ্গী, ভালো বন্ধু লাভলীর বোন লাকী জিয়া হঠাৎ মারা গেলেন। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। মনকে শক্ত করে কিছু দিন পর আবারো কাজে ফিরলেন।

বিসিক থেকে নুরুননাহার লাভলী প্রশিক্ষণ গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন। দেশের অনেক জেলাতে ইউনিক গ্যালারির পণ্য যাচ্ছে নিয়মিত। পাইকারি এবং খুচরা দু’ভাবেই তিনি পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। তার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে ইতোমধ্যে অনেক মহিলা কাজ শুরু করেছেন এবং লাভের মুখ দেখছেন।

বর্তমানে নুরুননাহার লাভলীর কর্মী সংখ্যা ২০ জন। অনলাইনে ‘ইউনিক গ্যালারি’ নামে একটি পেজ রয়েছে। যা থেকেও বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন লাভলী। ১০ হাজার টাকা পুঁজিকে আজ বহুগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে উদ্যোক্তা।

কথা প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা বার্তাকে লাভলী জানান, চলার পথে অনেকবার থেমে যেতে হয়েছে আমায়। কিন্তু হাল ছেড়ে দেইনি বলেই আজ আমি নিজে স্বাবলম্বী এবং আমার জন্য আরো ২০ জন মানুষ স্বাবলম্বী করে তাদের কে উন্নত জীবন গড়তে সাহায্য করছি। যা আমার কাছে পরম পাওয়া।

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যেশ্য করে তিনি বলেন, ‘চলার পথ মসৃণ হয়না কাজের মাধ্যমে আমাদের মসৃণ করে নিতে হয়। আপনারা যারা আমার মতো গৃহিণী পরিচয়ে সন্তুষ্ট নন তারা বাসায় বসে যে কাজে পারদর্শী সে কাজ শুরু করুন, ধৈর্য রাখুন ইন্শাআল্লাহ জয় হবেই’।

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here