অনার্স পড়া অবস্থায় নিজের পছন্দে বিয়ে করে ফেলার পর ভীষণ অর্থনৈতিক কষ্টে পড়লেন সুমনা সুলতানা সাথী। স্বামী মনোয়ার হোসেন রানা অনেক কষ্ট করে সহধর্মিনীকে সহযোগীতা করেছেন লেখাপড়া চালিয়ে যেতে। দিনে অর্ধেক পথ হেঁটে, অর্ধেক পথ বাসে করে গিয়ে কলেজে পৌঁছাতেন প্রাণীবিদ্যা বিভাগে অনার্স এ পড়াশোনা করা তরুণী সুমনা সুলতানা সাথী।
স্বামী মনোয়ার হোসেন কবুতর পালতেন। সেই কবুতর বিক্রি করা টাকা দিয়েছেন স্নেহভরে স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন। স্ত্রী পড়াশোনা যাতে সম্পন্ন করতে পারে।
এরপর আসি সুমনা সুলতানা সাথীর কাছে। ছোট ফুফু আর মা বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠান আড়ং এর সাথে ব্যবসা করতেন। মায়ের কাজ দেখে সাথীও কাজ শিখে ফেলেছিলেন বেশ ভালোভাবেই।
পড়াশোনা আর সংসারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সাথী। তখন মা আর ফুফুর কাছ থেকে কাপড় এবং সুতা নিয়ে বানালেন ৪টি কুশন। ভীষণ দৃঢ় মনোবল নিলেন, কাজ করবেন, হবেন উদ্যোক্তা।
চারটি কুশন কাভার বানালেন সাথী কোন মূলধন ছাড়াই। চারটি কুশন কাভারেই বাজিমাত। তুবড়ি বাজি ফোটার মত আনন্দ বাজতে থাকে। যখন কি না চারটি কুশন কাভার এর মধ্যে একটির জন্য বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠান থেকে অর্ডার মিলে যায়। ৯০ পিসের একটি অর্ডার পেলেন সাথী। একটি ডিজাইন নির্বাচিত হলো কুশান কাভারের জন্য এবং আর একটি ডিজাইন নির্বাচিত হলো ৫০ পিস পোশাকের জন্য।
১৪০ পিসের অর্ডার একজন তরুণ উদ্যোক্তা সাথীর মনে এঁকে দেয় বড় একটি আশার আলো। মাত্র দুজন কর্মী নিয়ে পাবনার ভাঙ্গুরায় ছোট্ট পরিসরে এস আর হ্যান্ডিক্রাফটস এর পথ চলা হলো শুরু। শুরুটা মোটেও সহজ ছিলো না। ভীষণ কষ্ট করে দিনরাত পরিশ্রম আর খাটুনি দিয়ে কাজের মান উন্নত করবার চেষ্টা করতে থাকলেন উদ্যোক্তা এবং সফল হলেন। দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করবার কারণে অল্প সময়ে ব্যাপক কর্ম পরিচিতি লাভ করলেন সুমনা সুলতানা সাথী।
নিজের কারখানায় দক্ষ কর্মী তৈরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা মনোনিবেশ করেন কর্মী তৈরিতে, কর্মীদের কাজ দেয়াতে, প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মীদের কাজ দিতে থাকলেন।
গ্রাম এর পর গ্রাম এ তৈরি হতে থাকলো উদ্যোক্তার কর্মী, উঠতে থাকে তাদের সুনিপুণ হাতের কাজ। পাটুলী পাড়া, ভেড়ামারা, ফরিদপুর, খাগোড় বাড়িয়া, রাঙ্গালিয়া,বেড় হাউলিয়া, রামনগর, নারায়ণপুর, সোনাহারা, অষ্টমনিষা এমন সব প্রত্যন্ত গ্রামে নিবন্ধিত ৬০০ শ’রও বেশি নারীদের ট্রেনিং দিয়ে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছেন। নিয়মিত তাদেরকে কাজ দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে।
কুশন কাভার, বেড কাভার, পর্দা, টেবিল ক্লথ, সোফা, ব্যাক কাভার, কিডস ক্যারিয়ার সেট, কুর্তি, ইয়ক তৈরি করছেন আজ উদ্যোক্তা হাজার হাজার পিস প্রতি মাসে।
আজ ক্লায়েন্ট লিস্টে ৪টি খ্যাতনামা ডিজাইন হাউস এ উদ্যোক্তার নিয়মিত পণ্য। এছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে, পারিবারিক এবং সরকারী অফিস আদালতে, সজ্জায়, গৃহসজ্জায়, অফিস সজ্জায় উদ্যোক্তার পণ্য, তারা আজ উদ্যোক্তার ক্লায়েন্ট।
অনেক ছোট ছোট অনুরোধ ও রাখেন উদ্যোক্তা। তার কাছ থেকে ডিজাইন করিয়ে নিতে হবে এমন নাছোড় বান্দা, পছন্দের ক্লায়েন্ট তো নিয়মিত।
স্বামী মনোয়ার হোসেন রানা স্বামী হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, জীবন সঙ্গী, সহউদ্যোক্তা সার্বক্ষণিক সকল সময়ের সাথী হয়ে সাথীর সাথে আছেন, এগিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তা হবার প্রথম দিন থেকে। দুজন অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে দুজন দুজনকে সকল কাজে উৎসাহিত করে।
বেশ কয়েকটি মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন সুমনা সুলতানা সাথী। সবজায়গায় মিলেছে অভূতপূর্ব সাড়া। কুড়িয়েছেন সুনাম ও সম্মান। এসএমই উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ জাতীয় আসর, জাতীয় এসএমই মেলা ২০১৯- বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার অর্জন করেছেন, হয়েছেন বর্ষসেরা উদ্যোক্তা।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা