বাংলাদেশে অনলাইন ও অফলাইন বুটিকের জগতে পরিচিত মুখ রাবেয়া আমির ও পরিচিত নাম তার ব্র্যান্ড ‘তৈয়বার ক্লোজেট’। শূন্য থেকে শুরু করে অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং নেতৃত্বের গুণে আজ তিনি সফল এক উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠিত তার ব্র্যান্ড।
ডিজাইনার রাবেয়া আমির ২০১৫ সালে ‘বুটিক: তৈয়বার ক্লোজেট’ শুরু করেন। বাবা একজন অ্যাডভোকেট ও মা গৃহিনী। পড়াশোনা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ফিন্যান্সে বিবিএ, পরে ফ্যাশন ও পোশাক মার্চেন্ডাইজিংয়ে এমবিএ করেছেন।
‘তৈয়বার ক্লোজেট’ এর স্বত্ত্বাধিকারী রাবেয়া আমির বলেন: ফ্যাশনেবল উদ্যোক্তাদের জন্য একটি পোশাক বুটিক খোলা আবেগকে ক্যারিয়ারে পরিণত করার একটি দুর্দান্ত উপায়। আমি তৈয়বার আলমারি খুলতে গিয়ে সেটাই করেছি। তৈয়াবার ক্লোজেট হল একটি বুটিকভিত্তিক ব্যবসা, এর লক্ষ্য ফ্যাশন সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টির জন্য নতুন ডিজাইন গ্রহণ করা।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে অনলাইনে যাত্রা শুরু করে। ফ্যাশন এবং পোশাক মার্চেন্ডাইজিংয়ে পড়াশোনার জ্ঞান তাকে বাস্তব জীবনে ডিজাইন সেন্স বাস্তবায়নে অনেক সাহায্য করেছে।
এক বছরের মধ্যে ‘তৈয়বার ক্লোজেট’ এর অনলাইন প্রতিক্রিয়া এতটাই সন্তোষজনক ছিল যে “Panash Hub”-এ আউটলেট খোলার সিদ্ধান্ত নেন। ওই হাবে পঁয়ত্রিশ জন ডিজাইনার এক ছাদের নিচে কাজ করেন। সেখানে চার বছর থাকার পর ২০২১ সালে রাবেয়া আমির তিন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে “নির্ভানা ডিজাইনার” স্টুডিও নামে একটি ডিজাইনার স্টুডিও খুলেন। ‘তৈয়বার ক্লোজেট’ আউটলেটটি এখন সেখানে অবস্থিত।
সাত বছর ধরে চলা কারখানায় ৩০ জন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ২২ লাখ যদিও উদ্যোক্তা যখন শুরু করেছিলেন তখন তার প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল শূন্য।
তিনি বলেন: সাত বছর আগে, আমি “Taiaba’s Closet” নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেছিলাম এবং ব্যক্তিগত ছবি আপলোড দিয়েছি। অনেক প্রোগ্রামে নিজের ডিজাইন করা পোশাক পরে ওই সব ছবি আপলোড করি। আমি সবসময় শৈশব থেকে নিজের পোশাক ডিজাইন করে পরি যেটা আমাকে এগিয়ে যেতে অনেক সহায়তা করেছে।
”আমার ব্যবসায়িক নীতি ছিল ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে প্রি-অর্ডার ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ অগ্রিম নেওয়া। অগ্রিম থেকে ম্যাটেরিয়াল কিনে তাদের পছন্দের পোশাক তৈরি করি। এটা আমার বড় সাফল্য যে শূন্য বিনিয়োগ ছাড়াই আমি একটি বুটিক ব্যবসা চালাতে সক্ষম হয়েছি। ২০১৬ থেকে আমার মার্কিং টুলটি আমাদের মূল্যবান ক্লায়েন্টদের কাছে আমার ব্যবসা সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রদর্শনী করাতে হেল্প করেছিল,” বলে জানান তিনি।
রাবেয়া আমিরের মতে, এক্সিবিশন একটি নতুন ধারা যা বুটিক উদ্যোক্তাদের জন্য দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম। সেখানে অনেক ক্লায়েন্টের সাথে দেখা হয়, এবং এটি সংযোগ তৈরি করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ যা ব্যবসার সীমানা বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এ সব কিছু নিয়ে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে ‘তৈয়বার ক্লোজেট’ এর জন্য দুটি পুরস্কার অর্জন করেছেন রাবেয়া আমির।
তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে নারীদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, ফিউশন ড্রেস ও কুর্তিসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্য তৈরি হয়। অনলাইন ও অফলাইনে দেশের পাশাপাশি তার ডিজাইন করা ড্রেস বিক্রি হয় দুবাই, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে।
রাবেয়া আমির বলেন, ‘সাফল্য পেতে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিদ্যমান এবং সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের। সাফল্য পেতে আমি অনন্য ডিজাইন তৈরিতে আরও মনোযোগী হই। এক্সিবিশনগুলোতেও ৩০-৪০টি ডিজাইনের পোশাক নিয়ে অংশগ্রহণ করি। ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে ফ্যাশন সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’
ভবিষ্যতের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে আরও বড় জায়গায় দেখতে চান রাবেয়া। নিজের সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ‘তৈয়বার ক্লোজেট’ ব্র্যান্ডকে বড় কর্মসংস্থানের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ: উদ্যোক্তাদের সমতার জোরালো দাবি উত্থাপনের সঙ্গে আর্থিক বিষয়ে পুরোপুরি জ্ঞান রাখতে হবে। পাশাপাশি অন্যের ওপর ভর করে অধিকারপ্রাপ্তির আশা না করে নিজ ইচ্ছাশক্তিতে বলীয়ান হতে হবে। নিজে সচেতন না হলে, অধিকারপ্রাপ্তির আশা সমীচীন নয়। আমি মনে করি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নারী এবং পুরুষ উভয়ের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণই সমতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সব ক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজ যেমন সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, তেমনি তরুণ উদ্যোক্তাদের স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা