উদ্যোক্তা দিলারা আক্তার নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞান এ মাস্টার্স শেষ করে প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে বি,এড করেছেন।
ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতেন ইঞ্জিনিয়ার হবেন। তবে বাবার বিজনেস, শ্রমিকদের বিল দেয়া, তাকে তখন থেকে ই-বিজনেসের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলেন।তখন তার ও মনে হতো তিনি এমন অনেক গুলো মানুষ নিয়ে কাজ করবেন। যারা তার থেকে এইভাবেই বিল নিবেন।
উদ্যোক্তা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন প্রায় ৭ বছর ধরে।
২০২০ এ যখন দেশে করোনা মহামারী দেখা দিলো, তখন উদ্যোক্তা দিলারার স্কুল কোচিং টিউশন সব বন্ধ হয়ে ঘরে বসে পরেছিলেন।
কর্মব্যস্ত মানুষ হয়ে পরলেন কর্মহীন। দিন দিন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরছিলেন। ঠিক তখন ই মনে হলো তার মনে পুষে রাখা সেই উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নটাকে এই সময় জাগিয়ে তুলতে হবে। মন প্রাণ দিয়ে লেগে পরলেন নিজের মনের সেই স্বপ্ন পুরণের উদ্দ্যেশে।
জামদানির প্রতি প্রেম তার সেই কলেজ লাইফ থেকেই। তার উপর নিজ জেলার পণ্য এবং দেশের ঐতিহ্য। তাই জামদানি নিয়ে খুব বেশি ধারণা না থাকলেও মোটামুটি ধারণা নিয়ে ই অনুপ্রাণিত হোন ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ এর দেখানো পথে হাটতে। উদ্যোক্তার মতে রাজিব আহমেদ ই কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন।
উদ্যোক্তা রাজিব আহমেদ এর প্রতিটি পোস্ট এবং অগনিত আইডিয়া কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। লেখাপড়া শুরু করেন ই-কমার্স এবং নিজের পণ্য নিয়ে। দিন দিন তাঁতিদের সাথে থেকে কাজ দেখেন।তাদের ভাষায় কাজ কে বুঝতে চেষ্টা করেন। রোদ মাথায় দাঁড়িয়ে থেকে কত শাড়ির কাঁটা ওয়াশ দেখেছেন এবং সেই দেখার ধারণা কে পোস্ট আকারে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন,যাতে জামদানি পণ্য কেনা থেকে শুরু করে ওয়াশ করা পর্যন্ত ক্রেতা তার কাছে ই পেয়ে থাকেন।
উদ্যোক্তা শুধু জামদানি শাড়ি ই নয়, জামদানি থ্রি পিস পাঞ্জাবি টু পিসের পাশাপাশি কাস্টমাইজ বেবি ড্রেস লেহেঙা করিয়ে থাকেন৷ জামদানির তৈরী পার্স নিয়েও কাজ করছেন।উদ্যোক্তা মনে করেন বাধা সবার জীবনেই থাকে তাই তার ও ছোট বড় বাঁধা ছিলই। প্রথমে লকডাউন রেড জোন নারায়ণগঞ্জ তার পর আশেপাশের মানুষের কটু কথা। কিন্তু কোনো বাঁধা ই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।তিনি মনে করেন আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে তিনি তার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে চলছেন।
বর্তমানে ৭ জন তাঁতি নিয়ে তার কাজ চলছে। দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অঞ্চলে তার জামদানি পণ্য পৌঁছে গেছে।
দেশের বাইরে দুবাই,কাতার,আস্ট্রেলিয়া,নিউইয়র্ক, ডেনমার্ক, জর্ডান, ইন্ডিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশে তার জামদানি পণ্য পৌঁছে দিতে পেরেছেন।
উদ্যোক্তার আত্নবিশ্বাস আর তার পরিবারের সাপোর্ট তাকে এত দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
উদ্যোক্তা মনে করেন তার উদ্যোক্তা জীবন তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।তিনি শুধু অর্থ উপার্জন ই নয় সাথে অর্জন করেছেন সন্মান। এস,এম,ই মেলায় প্রায় চ্যানেল আই সহ ১০ টি চ্যানেল এ তার সাক্ষাৎকার গিয়েছে যা তার পরিচিতি বৃদ্ধিতে অনেক সহায়তা করেছে।
উদ্যোক্তা দিলারার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তিনি জানান উদ্যোগ নিয়ে আরও অনেক দূর যেতে চান তিনি।দেশের প্রতিটি জেলা এবং দেশের বাইরের সব জায়গায় দেশের জামদানি পৌছে দিতে চান তিনি।
নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় জানান খুব দ্রুত একটা শো রুম দেয়ার ইচ্ছে আছে জামদানির।যেখানে সব ধরনের ক্রেতা তাদের সাধ্যের মধ্যে জামদানির স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।
জামদানি আমাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের সবচেয়ে বড় একটা অংশ।জামদানির প্রতি এই ভালোবাসা যেনো নতুন প্রজন্ম আরও উপলব্ধি করতে পারে সেই লক্ষেই উদ্যোক্তা এগিয়ে যেতে চান।
মাসুমা শারমিন সুমি,উদ্যোক্তা বার্তা