হাতে মেহেদি দেয়া যে পুরুষেরও পেশা হতে পারে, সেটা প্রমাণ করেছেন উদ্যোক্তা শাহারিয়ার রাফসান। উৎসবে মেহেদির রঙে হাত সাজানো বাঙালি মেয়েদের একটি প্রাচীণ রীতি যা এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ দিনে মেহেদি আর্টিস্টের কাছে মেহেদি দেয়ার জন্য আগে থেকে বুকিং দিতেও দেখা যায়। তবে একজন ছেলের হাতে মেহেদি দিতে লম্বা লাইন? শাহারিয়ার রাফসান তন্ময়-এর ক্ষেত্রে তেমনটাই দেখা যায়।
শাহারিয়ার উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, শুরুর সময়টা সহজ ছিল না। ছেলে হিসেবে এই পেশায় কাজ করা অনেক কঠিন ছিল। প্রথমদিকে বেশিরভাগ কাজই বাতিল হয়ে যেত। অনেকে মনে করতেন, যেহেতু মেহেদির কাজ, তাই আর্টিস্ট মেয়েই হবে। কল করার পর বিব্রত হতে হতো। আবার অনেক সময় আত্মীয় ও বরপক্ষ নানা কথা বলতো, অনাকাঙ্ক্ষিত কথাও শুনতে হয়েছে তাকে।
২০০৮ সালে শখের বশে ঈদের সময় মেহেদি নকশার কাজ শুরু করেন শাহারিয়ার। তবে মেহেদি দেয়া যে পেশা হিসেবে নেয়া যায়, সেটা তখনও মাথায় আসেনি। ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করে মেহেদি শিল্পী হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ‘শাহরিয়ার্স মেহেন্দি’নামে পেজ আছে যার প্রায় দেড় লাখ ফলোয়ার্স।
শাহারিয়ার সংস্কৃতিমনা পরিবারে বড় হয়েছেন। পরিবারের অনেক সদস্যই গান, নাচ, আবৃত্তি, অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। বড় বোন ভালো মেহেদির নকশা করতেন, যা তাকে অনুপ্রাণিত করতো। প্রথম দিকে শুধু ঈদের সময়ে শখে মেহেদির নকশা করতেন। ২০১৩ সালের দিকে নড়াইলে বাড়ির কাছে এক নারী উদ্যোক্তার পার্লারে প্রথম কাজ করার সুযোগ পান। ২০১৬ সালে একটি মেহেদি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পর শাহারিয়ারের স্বপ্ন আরো বড় হয়। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ১৫ জন মেহেদি শিল্পী নির্বাচিত হয়েছিলেন। মাত্র একজনই ছিলেন ছেলে। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন শাহারিয়ার।
ঢাকা আসার পর দিনগুলো বেশ কঠিন ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি হতে চেয়েছিলেন মেহেদি নকশার শিল্পী। কিন্তু এই পেশার কারও সাথেই পরিচয় ছিল না। অনেক চেষ্টার পর ২০১৫ সাল বানথাই বার্বার পারলার থেকে ডাক পান তিনি। এটাই ছিল বড় পরিসরে কাজের শুরু। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এখানেই মেহেদি ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন শাহারিয়ার।
তবে কঠিন পথের শেষ ছিল না শাহারিয়ারের। ২০১৯ সালে একা কাজ করতে গিয়ে দেখলেন, ছেলেদের গ্রহণযোগ্যতা এই পেশায় কম। তাই ২০২০ সালে এসব বিষয় নিয়ে ফেসবুকে লাইভ শুরু করেন। এতে অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা ভাঙতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে ছেলে মেহেদি শিল্পী হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে। করোনাকালেও পেশা থেকে সরে যাননি শাহারিয়ার। অনলাইনে এক বছরে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে মেহেদি পরানোর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
ইদ থেকে শুরু করে বিয়ে, জন্মদিনসহ নানা অনুষ্ঠানে মেহেদীর রঙে হাত না রাঙালে উৎসবে পরির্পূণতা পায় না। এই মেহেদিকে আগামীতে ঐতিহ্য ও সৌর্ন্দযের এক শৈল্পিক মেলবন্ধন রূপে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেবেন এই শাহারিয়াররাই।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা