ভাবনাটা আসলে কলেজ জীবন থেকেই শুরু। নিজে টুকটাক হাতের কাজ শেখার পর থেকে নিজের ও বোনদের জামা কাপড় নিজেই ডিজাইন করা শুরু করেন। ধীরে ধীরে কাজিন ও বান্ধবিদের জামা কাপড় ডিজাইন করার অর্ডার পেলেন। তখন ১৯৯৯ সাল, ছোট পরিসরে একটা বুটিক শুরু করেন। কিন্তু ২০০১ সালে ব্যাংকের চাকরিতে জয়েন করায় সময়ের স্বল্পতায় বুটিকটি বন্ধ করে দিলেন কিন্তু মনে সুপ্ত ভাবে বুটিকের স্বপ্নটা থেকেই যায়।
এ কারনে ২০০৯ সালে আবার স্বল্প পরিসরে শুরু করেন নাসিমা আক্তার। উদ্যোক্তা বলেন, “নিজ বাসার সামনে দু’টি দোকান তোলার পর এক দোকানে নিজের ডিজাইন করা জামা-কাপড় তুলি এবং টেইলারিং শপ শুরু করি। প্রথম দিকে অফিসের কলিগরা, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার মানুষ জন আমার প্রতিষ্ঠান থেকে কাপড় কেনা শুরু করে। পরে আমি কিছুটা আত্মবিশ্বাস অর্জন করার পর একটা ছোট কারখানা দেই। ২০১৮ থেকে ১১ জন কর্মী নিয়ে শুরু করি বর্তমানে করোনার কারনে সেখানে কিছুটা রদবদল হয়েছে”।
১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করে সেখানে মেয়েদের কাস্টোমাইজড সিংগেল কুর্তি, থ্রি পিস, কাস্টোমাইজড শাড়ি (ব্লক, স্ক্রীনপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারি ও কারচুপি), হোম ডেকোর, বেডশীট, কুশন কভার,টেবিল ম্যাট, টেবিল রানার, ওয়ালম্যাট সহ ৮ ধরনের প্রডাক্ট আছে। তবে ভবিষ্যতে বাচ্চাদের কাপড় নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন উদ্যোক্তা।
অনলাইনে ‘কারনেশন এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি পেইজ আছে। এছাড়াও Pick & Pay, শাহ মখদুম এভিনিউ, উত্তরা, Oikko Store এর বসুন্ধরা, ধানমন্ডি ও বেনাপোল আউটলেট এ উদ্যোক্তা তাঁর পণ্য সরবরাহ করে থাকেন।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মেয়ে নাসিমা আক্তার পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা গৃহিনী। উদ্যোক্তা বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন শহীদ রমিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, তেজগাঁও মহিলা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ এবং এ.এমবিএ করেছেন নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে। পড়াশোনা শেষে চাকরি করেছেন ট্রাষ্ট এবং পদ্মা ব্যাংকে প্রায় ১৮ বছর।
চাকরির পাশাপাশি নিছক শখ থেকেই উদ্যোক্তা হয়ে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন তবে শখ থেকে শুরু করলেও ২০১৯ সালে চাকরি ছেড়ে এটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন এ সফল উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, “দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা অবদান রাখতে পারছি বলে মনে করছি। এছাড়া কিছু লোকের বিশেষ করে প্রান্তিক মহিলাদের কর্মসংস্থান ও করতে পেরেছি বলে মনে করছি। নিজের শখ কে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নটি লালন করছি”।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তার স্বপ্ন আছে প্রতিষ্ঠাটিকে আরো বড় করার। নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু কে প্রতিষ্ঠিত করা। এছাড়াও মহিলাদের হাতের কাজ শেখানোর জন্য একটা ট্রেনিং ইন্সটিটিউট করার ইচ্ছা আছে। যেন তারা সেখান থেকে কাজ শিখে নিজেরাই স্ব-নির্ভর হতে পারেন। কারন দেশের নারীদের স্বাবলম্বী হবার পথটি এখনো অনেক বন্ধুর। সে বন্ধুর পথের সাথী যেন তার প্রতিষ্ঠান হতে পারে সে স্বপ্ন দেখেন তিনি।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তার আহবান, যদি শুরু করতে চান তবে আজই শুরু করুন। খুব বেশি পুঁজি’র দরকার নেই। আপনার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমই আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নিয়ে যাবে।
বিপ্লব আহসান