ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। চট্টগ্রাম শিল্পকলার চারুকলার শিক্ষার্থীও ছিলেন। তাই চট্টগ্রাম কলেজে জিওগ্রাফিতে তৃতীয় বর্ষে এসে সিদ্ধান্ত নেন চারুকলা নিয়েই লেখাপড়া করবেন। সেজন্য ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা)-এর চারুকলায় ভর্তি হন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন পেইন্টিং বিভাগে। জীবনের ক্যানভাসে এসে সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা হবেন। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস জ্যোতি। ‘শখের দোকানদার’-এর স্বত্ত্বাধিকারী তিনি। চট্টগ্রামে বড় হলেও এখন থাকেন ঢাকায়।
জ্যোতি বলেন: যখন থেকে মনে হলো আমার মধ্যে যে ক্রিয়েটিভিটি আছে, তা আমি বেশ ভালো কাজে লাগাতে পারি। আবার আমি যেহেতু চারুকলার শিক্ষার্থী, আমার মনে হতো এ পড়াশোনাকেই কাজে লাগানো যায় কারুশিল্পের মাধ্যমে। কিন্তু তখন আমার কাছে কোনো পুঁজি ছিল না। তারপর অনেক রকম কৌশল করে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করি। কিছু কাপড় আর কাঠের কাঁচামাল কিনি। তাতে রঙ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের গহনা বানাই। তারপর কিছু শাড়ি পেইন্টিং করি, এরপর আস্তে আস্তে আমি আমার যাত্রা শুরু করি ২০২১ সালে।
“প্রথমে আমি আমার ইউনিভার্সিটির সামনে ১লা ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে একটি স্টল নিয়ে বসি। সেখানে ক্রেতাদের চাহিদা দেখে আমার আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে যায়। তারপর আস্তে ধীরে ছোট ছোট পরিসরে আমার পণ্যগুলো প্রচারণা শুরু করে দেই। আমার আশেপাশের মানুষ, কলেজ, পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সামনে। গল্পের শুরুটা শৈশব থেকে, কারণ নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের যুগে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই এই পদক্ষেপ,“ বলে জানান জ্যোতি।
চলতি বছর ১লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আবার স্টল দেন। সেখানেও ভালো সাড়া মেলে। এরপর জুলাই মাসে বিভিন্ন জেলার উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত “শ্রাবণ মেলা”তে অংশ নেন। এসবের পাশাপাশি বন্ধুদের সাহায্য আর সহযোগিতা জ্যোতিকে অনুপ্রাণিত করেছে। তার ইচ্ছে আছে আস্তে আস্তে বড় পরিসরে সবার মাঝে তার শিল্পকে তুলে ধরার।
বন্ধুর সহায়তা নিয়ে প্রথমে যেকোন ধরনের ফেব্রিকের উপর পেইন্টিং এবং কাঠের গহনার উপর পেইন্টিং করে বিভিন্ন পেজে সাপ্লাই করতেন। বর্তমানে তৈরি করছেন কাঠের যেকোন ধরনের পণ্য, ফ্রেব্রিক, মেটালসহ সব ধরনের হ্যান্ডিক্রাফটস। দেশের মধ্যে বেশ কয়েক জেলায় তার পণ্য বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, “প্রতিটি নারীরই অলংকারের ও কাপড়ের প্রতি দুর্বলতা আছে। তাই নারীদের জন্যই বৈচিত্রময় অলংকার ও কাপড় শিল্পের উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে ভিন্নরূপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বিয়ে বা যেকোন ধরনের অনুষ্ঠানে পরার জন্য কিংবা নিত্যব্যবহারের জন্য অভিজাত এবং নান্দনিক সব গহনা রয়েছে ‘শখের দোকানদার’-এ। এছাড়া, গ্রাহকের চাহিদামতো যেকোন ধরনের গহনা অগ্রিম অর্ডার নিয়ে তৈরি করে দিতে পারি।”
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মিশে আছে তার আশাবাদের সঙ্গে। যেমনটা তিনি বলছিলেন: একদিন এই হস্তশিল্পের মাধ্যমে দেশ সমৃদ্ধ হবে। অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এবং এ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে অনেকেই এগিয়ে যাবে তাদের নতুন স্বপ্নের দিকে।
তরুণদের জন্য তার পরামর্শ: একজন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ক্যারিয়ারের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। একটি সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কখনোই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে না। এটি করার জন্য প্রয়োজন হয় সুন্দর একটি ভাবনা এবং কঠোর পরিশ্রম, আর প্রতিটা উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু হয় সংগ্রাম এবং চ্যালেঞ্জ দিয়ে। তাই জেগে উঠুন, লক্ষ্যে পৌঁছা পর্যন্ত থামবেন না।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা