উদ্যোক্তা সীমা পুষ্প চেয়েছিলেন ঘরে-বাইরে সব কাজ সামলানোর পর অবসর সময়টুকুকে নিজের শখের কাজে ব্যয় করে কিছু একটা করতে। সেই ভাবনা থেকেই আজ খাবারের ভুবনে নিজের শক্ত ভিত তৈরি করেছেন সীমা। ২০১৯ সালে তার উদ্যোক্তা জীবনের পথচলা শুরু, উদ্যোগের নাম ‘ফুডিস জার্নাল’।
সীমা পুষ্প চাকরি করতেন, পোস্টিং হলো চট্টগ্রামে। এক বছর ঢাকা আর চট্রগ্রাম যাওয়া-আসা করতে থাকলেন তিনি। বাচ্চাদের লেখাপড়ার ক্ষতির কথা চিন্তা করে নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে চাকরি জীবনের সমাপ্তি টানলেন তিনি। ঠিক করলেন এমন কিছু করবেন যেটা করে বাড়িতেও সময় দিতে পারবেন।
যেহেতু ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল, তাই শাড়ি ও ড্রেসের বিজনেস দিয়ে শুরু করলেন। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা থাকায় নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন। তিনি কেক বানাতে ভালোবাসতেন। কেক এর উপর বিভিন্ন ধরনের স্বাদ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে তিনি পছন্দ করতেন। তখন মনে হলো কোন একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি ভর্তি হবেন। ভালো করে কাজটা শিখে নিতে হবে। ভর্তি হয়ে গেলেন ইউসেপ-এ কোর্সের জন্য। তারপর ইয়েস ইনস্টিটিউটে। এরপর তিনি আরো বেশকিছু কোর্স করেছেন।
উদ্যোক্তা সীমা বেকিং নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। সেজন্য বিভিন্ন ডিজাইনের এবং ফ্লেভারের কেক বানানো, সেই সাথে বিভিন্ন স্বাদের ঝাল আইটেম।
শুরুতে অনেকের কাছ থেকেই শুনতে হয়েছে “ভালো একটা ক্যারিয়ার ছেড়ে, তুমি কিনা রান্না করবে, খাবার বিক্রি করবে!” এখন তার কাছে মনে হয়, যেকোন সৃজনশীল কাজ মন থেকে ভালোবেসে করলে, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও আন্তরিকতা থাকলে, স্বপ্নপূরণের ইচ্ছে শক্তি থাকলে সফলতা একদিন আসবেই।
কেক এবং রান্নার অর্ডার থাকলে উদ্যোক্তাকে সাহায্য করেন দুজন নারী এবং অর্ডার ডেলিভারি করতে একজন পুরুষ কর্মী তার সাথে কাজ করেন।
রাজধানী ঢাকায় প্রতিনিয়ত তার ডেলিভারি খাবার যায়। ঢাকার বাইরে দিনাজপুরে উদ্যোক্তার বানানো পণ্য ব্রাউনি যায় মাঝে মাঝে। আর আমেরিকাতে গেছে উদ্যোক্তার বানানো আলমন্ড বিস্কিট।
সীমা পুষ্প জানান, তার স্বামী ও সন্তানদের সবসময় একটা সাপোর্ট ছিল। এজন্যই তিনি এত পথ পাড়ি দিতে পেরেছেন। কিশলয় স্কুল ও ইডেন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন উদ্যোক্তা। এরপর বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন শেষ করেন।
উদ্যোক্তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে তিনি আরো কিছু প্রশিক্ষণ নেবেন, নিজের একটা খাবার দোকান দেবেন। শহর ও গ্রামের আগ্রহী মানুষদের বিনা পারিশ্রমিকে বেকিং প্রশিক্ষণও দিতে চান তিনি যাতে করে তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন।
উদ্যোক্তা সীমা জানান, “এরইমধ্যে আমার এলাকায় (মোহাম্মদপুর-শ্যামলী) এলাকার দুস্থ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি আমার প্রতিষ্ঠানে থেকে। ভবিষ্যতে আরও এরকম প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করবো। আমার মাধ্যমে যদি একজন মানুষও স্বাবলম্বী হয়, তাহলেই আমি সফল।”
মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা