সিলেটের কন্যা সাবরীনা ইসলাম ভুঁইয়া। বাবা নুরুল ইসলাম ভুঁইয়া পেশায় ছিলেন পুলিশ অফিসার। সে সুবাদে সাবরীনার বেড়ে ওঠা সিলেট পুলিশ লাইন্সে। তিনি সিলেট এমসি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার আগেই তিনি চাকরি করতেন ব্রিটিশ হাই কমিশনে। তিন বছর সেখানে চাকরি করার পর সেখান থেকে বেরিয়ে জাতিসংঘে ৪ বছর চাকরি করেন সাবরীনা।
কিন্তু চাকরি জীবন তার মোটেও পছন্দ ছিলো না। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন, ‘আমি বড় হয়ে বাবার মতো পুলিশ অফিসার হবো অথবা বড় উদ্যোক্তা হবো’। চাকরি করলেও এই ভাবনাটা সবসময় তার মনে আসতো এবং অবসরে বিভিন্ন পরিকল্পনা করতেন সাবরীনা।
২০১৩ সালে চাকরি ছেড়ে স্বামী এবং তার বন্ধুর সহযোগিতায় ৫০ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে পা বাড়ালেন উদ্যোক্তা জীবনে। অনেক আগে থেকেই তার পরিকল্পনা ছিল সেবামূলক কোন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এ পরিকল্পনা থেকে তিনি লেডিস হোস্টেল চালু করলেন। বর্তমানে সাবরীনা ইসলাম ভুঁইয়ার ঢাকায় দুইটি এবং সিলেটে ১ টি হোস্টেল আছে যেখানে শত শত শিক্ষার্থী থাকেন। এই উদ্যোগ পুরোপুরি দাঁড়িয়ে গেলে চাকরি ছাড়ার ৩ বছর পর নিজের পরিবারকে তার উদ্যোগের কথা জানালেন সাবরীনা। শুরুতে তার কর্মী সংখ্যা ছিলো ১০ জন।
লেডিস হোস্টেলের পাশাপাশি তার উদ্যোগের ক্ষেত্রটিকে বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দিতে চিন্তা করলেন নতুন কিছু শুরু করবেন। এরপর একটি পোশাক কারখানা চালু করলেন। ২০১৬ সালে ‘ইলোরা বুটিক’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাতায় একটি পেজ চালু করেন তিনি। যেখানে হোম ডেকোর পণ্য, বিভিন্ন ধরনের পোশাক, শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ আরো অসংখ্য দেশিয় পণ্যের সমাহার রয়েছে। করোনা মহামারিসহ বেশ কারণ বসত তার কারখানা এবং লেডিস হোস্টেল বন্ধ থাকলে থেমে যাননি তিনি। অদম্য সাহসীকতা নিয়ে দুর্বার গতিতে সামনে এগিয়ে চলেন স্বপ্নবাজ উদ্যোক্তা সাবরীনা ইসলাম ভুঁইয়া।
২০২১ সালে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাতায় ‘বিন্নীবাড়ি’ নামে আরো একটি পেজ চালু করেন। বিভিন্ন দেশীয় খাবারে সাজানো বিন্নীবাড়ি। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এ উদ্যোগটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বিন্নীবাড়ির স্পেশাল আইটেম হচ্ছে সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস, বীফ তেহারি, কেক, দইবড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট আইটেম এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দিলখোস। খুব কম সময়ে ক্রেতাদের মন জয় করেছে বিন্নীবাড়ি। সারা দেশব্যাপী সাবরীনার পণ্য ছড়িয়ে পড়েছে। সাবরীনা ইসলাম ভুঁইয়া কিছুদিন আগে বিন্নী বাড়িতে অনলাইন এবং অফলাইনে বেকিং ক্লাস নিতে শুরু করেছেন।
উদ্যোক্তা জানান, ৫০ লক্ষ টাকা পুঁজি এখন কোটির ঘরে ঠেকেছে। বর্তমানে তার ১২ জন কর্মী। লেডিস হোস্টেল, ইলোরা বুটিক, বিন্নীবাড়ি ছাড়াও আরো বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দিতে চান তার স্বপ্নের উদ্যোগ। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতে উদ্যোগ বাছাই করাটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সফল উদ্যোক্তার সব থেকে বড় গুন ধৈর্য। আপনারাও সঠিক কাজ নির্বাচন করে ধৈর্য নিয়ে এগিয়ে যান, সফলতা আসবেই’।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা, রাজশাহী