২০২০ সালের শুরুর দিক, বিশ্বব্যাপী মহামারীর আঘাতে পর্যুদস্ত মানুষ। বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো মানব চলাচল। থেমে গিয়েছিলো শিক্ষা ব্যবস্থা পৃথিবীব্যাপী। “জীবন” যেখানে প্রধান বিষয়, সবার আগে সেখানে মৌলিক অধিকার “শিক্ষা” নিয়ে খুব একটা তৎপরতা চোখে পড়েনি প্যানডেমিক এর প্রথম ৪ মাস। স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়- বড় বড় নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর শিক্ষা ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখবার জন্য নানান মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস চালুর আয়োজন শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
২০১৯ সালেই অনলাইনে টিউটর এবং ছাত্রের মধ্যে টিচিং এর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দীক্ষা ডট কম(dikkha.com)। বাংলাদেশের প্রথম ভার্চুয়াল ক্লাসরুম দীক্ষা ডট কম’এ অনেক কল আসতে শুরু করলো। কলগুলো অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। একজন শিক্ষকের কল এলো একদিন। শিক্ষক সেদিন দীক্ষা ডট কম অফিসে ফোন করে বললেন যে তাদের স্কুল ৬ মাস ধরে বন্ধ, বেতন দিতে পারছেনা। অনেক অসুবিধায় আছেন তারা। এরকম অনেক কল আসতে থাকে দীক্ষার উদ্যোক্তা রীনা খানম এর কাছে।
নিজেও একজন শিক্ষাখাতের ব্যক্তি হওয়ার কারনে এবং শিক্ষকদের পেশা কে সম্মান প্রদর্শন করবার জন্য রীনা খানম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন দীক্ষা প্ল্যাটফর্ম নিবেদিত ভাবে কাজ করবে শিক্ষকদের এই দুঃসময়ে তাদেরকে সঠিক ভাবে আয়ের চাকাটি সচল রাখা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আয়ের সুযোগ তৈরী করে দেয়ার জন্য।
অপরদিকে এরইমধ্যে দীক্ষা প্ল্যাটফর্ম শুরু করে দিয়েছিলো ” অটুট রাখুন নাড়ীর টান, আপনার সন্তানকে বাংলা শেখান” ক্যাম্পেইন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে এই ক্যাম্পেইন এর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিলো প্রথম একটি অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্বিতীয় প্রজন্মকে বাংলাভাষা শেখানো এবং সেই সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া বাবা মা’র দেশকে। যেখানে কি-না বিশ্বের অনেক দেশে দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেক কিশোর কিশোরী আছে যারা কি-না বিদেশের মাটিতে বাবা মা ছাড়া কোনোদিন কাউকে বাংলা বলতে দেখেনি বা শোনেনি।
ম্যাজিক ঘটে গেলো, একদিকে অনেক শিক্ষক চাকরিহীন হয়ে বসে আছেন, বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনিশ্চিত বেতন, ঠিক আরেকদিকে বিদেশে বসে থাকা লকডাউনের মাঝে প্রবাসী বাংলাদেশি বাবা মায়েরা যেন এই দুঃসময়কে কাজে লাগিয়ে সন্তানকে ঘরে বসে নিজের মায়ের ভাষা শেখাতে পারার একটা সুযোগ পেয়ে গেলো। ওমান থেকে নাহিয়ান, কাতার থেকে ওয়ার্দি, সুইজারল্যান্ড থেকে সাফিন, সাউথ আফ্রিকা থেকে আফশিন, ইতালি থেকে মেহজাবীন, ফ্রান্স থেকে আইমান, কুয়েত থেকে রুসলান, পৃথিবীর বহু দেশ থেকে এমন শত শত বাঙ্গালি পরিবারে ছেলে মেয়েরা শিখতে শুরু করলো মায়ের ভাষা – বাবার ভাষা “বাংলা”।
লক ডাউনের মাঝে আনলক হলো একটা সুযোগ, তৈরী হলো একটা মন এর সন্তুষ্টি অর্জনের জানালা। যে মন তৃষিত থাকে সন্তান সঠিক বাংলা ভাষা বলতে না পারায়। চাতক পাখীর মতো মায়ের ভাষাটিতে যেন আমার সন্তান কথা বলে। এই তৃষ্ণা মিটাতে শুরু করলো অনেক প্রবাসী পরিবারের।
শিক্ষা উদ্যোক্তা ও শিক্ষক, সিইও দীক্ষা, রিনা খানম বললেন “অনেক পরিবার নিজ থেকে শিখতে চেয়েছেন, আবার অনেক পরিবারের কাছে আমরা কাউন্সেলিং করেছি যেন তারা নিজেদের সন্তানদের পড়ানোর দ্বায়িত্ব সময়ের ফেরে পরা বেতনহীন শিক্ষকদের কাছে দিয়ে তাদের এই প্যান্ডেমিক সিচুয়েশনে কিছুটা আয়ের ব্যবস্থা করে যেয়া যায়” ৷
প্রায় ৫,০০০ শিক্ষক আজ দীক্ষার সাথে যুক্ত। সেই সাথে শত শত প্রবাসী পরিবারের সন্তানদের অনলাইনে বাংলা ভাষা মুখে তুলে দিচ্ছে দীক্ষা প্ল্যাটফর্ম।
অনেক শিক্ষকের মুখে চিন্তার বলিরেখা সরিয়েছে আজ দীক্ষা প্ল্যাটফর্ম।
অনলাইন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করছে দীক্ষা যা কিনা যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিপূর্ণ ভাবে চালাতে সাহায্য করবে । দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রস্তুত হচ্ছে দীক্ষা ডট কম বর্ধিত কলেবরে।
দীক্ষা ডট কম ডিজিটাল বাংলাদেশে শিক্ষার এক শক্তি হতে চায় সঠিক প্ল্যাটফর্ম, সঠিক সেবা, সঠিক মান নিয়ে। বাংলার প্রান্তিক জনপদের মেঠো পথে নুন্যতম মেগাবাইটের মুঠোফোনের ক্লাস করা থেকে রাজধানীর কোনো বাড়ী কিংবা বিশ্বের যে কোনো দেশের মেগাসিটির কিংবা কান্ট্রিসাইডের সুপারস্পিড ওয়াইফাই রাউটারের এপেল ম্যাক বুক এয়ারে যেখানে সবার মুখেই মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা, সেখানেই থাকতে চায় দীক্ষা ডট কম।