রাজশাহী চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু ২ ডিসেম্বর

0

রাজশাহীতে কিছুটা বেড়েছে আখের চাষ। সেই সঙ্গে বেড়েছে চাষীর সংখ্যা। শুধু তাই নয়, বেড়েছে আখের দামও।

আখের চাষ বৃদ্ধি পাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে রাজশাহী সুগার মিল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, আবারও আখ চাষে ঝুঁকছে চাষীরা। গেল ১০ বছরে পাঁচ দফায় আখের দাম প্রতিমণে বেড়েছে ৮০ টাকা।

আখের চাষ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই মৌসুমে (২০২২-২৩) আখের দাম প্রতিমণে ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আখ চাষের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আখের বীজ আনা হবে।

রাজশাহী সুগার মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১০-২০১১ মৌসুমে প্রতিমণ (৪০ কেজি) আখের দাম ছিল ৮৮ দশমিক ৯৫ টাকা। ১১ টাকা ০৫ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১-১২ মৌসুমে প্রতিমণ আখের দাম দাঁড়ায় ১০০ টাকা। এর পরে চার বছর আর বাড়েনি আখের দাম। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা হয়। একবছর পরে ২০১৭-১৮ মৌসুমে ১৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকায় দাঁড়ায়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় চাষীদের থেকে আখ কেনে সুগার মিল কর্তৃপক্ষ। এরপরে তিন বছর দাম বাড়েনি আখের। সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৪০ টাকা বেড়েছে। এবছর ১৮০ টাকা মণ দরে আখ কিনবে রাজশাহী সুগার মিল কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী সুগার মিলের একটি সূত্র জানায়, ২০১৯-২০২০ মৌসুমে ৯১ দিনে চিনি উৎপাদন হয়েছে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ২২ নভেম্বর শুরু হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মিল চলেছে। এর আগে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে ৬৭ দিন আখ মাড়াই চলার কথা থাকলেও চলে ৫৮ দিন। তার আগের মৌসুমের ৬৭ দিনে ৯৩ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৪৪৮ টন চিনি উৎপাদন হয়।

এবার আগামী ২ ডিসেম্বর রাজশাহী চিনিকলে ২০২২-২৩ মৌসুমের আখ মাড়াই শুরু হবে। বত্রিশ দিনে ৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সুগার মিল কর্তৃপক্ষ। এসময় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হবে।

চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ আবাদ হয়েছে। ৪ হাজার ৩৬ একর জমিতে আবাদকৃত আখ হতে ৬৫ হাজার ৬৫০ মে. টন আখ কারখানায় সরবরাহের মাধ্যমে ৪ হাজার ১৩৬ মে.টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চিটাগুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে । ২ হাজার ৪০০ মে. টন।

রাজশাহী সুগার মিলের ডিজিএম নজরুল ইসলাম জানান, ২০২০-২০২১ মৌসুমে মিল জোন এলাকায় ৩ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে আখের চাষ হয়। এই মৌসুমে আখচাষীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন। তার পরের বছর ২০২১-২০২২ মৌসুমে তা বেড়ে ৪ হাজার ৩৬ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এই মৌসুমে আখ চাষীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৮৫ জন। এছাড়া চিনিকলে চিনি মজুদ আছে ৯১ টন।

সুগার মিল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
নতুন কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সুগার মিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে আছে:
— উচ্চ ফলনশীল ও অধিক চিনি সমৃদ্ধ উন্নত আখের জাত প্রতিস্থাপন এবং চাষীদেরকে আখচাষে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সময়মত সার, কীটনাশক ও ভর্তুকি প্রণোদনা প্রদান ও আখের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ।
— আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘রাজশাহী চিনিকলে ম্যাংগো প্রোসেসিং প্লান্ট ও ম্যাংগো ড্রিংক বোতলজাতকরণ কারখানা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ এবং আধুনিকায়ন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন এবং পণ্য বহুমুখীকরণার্থে উপজাতভিত্তিক শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প গ্রহণে সহায়তা।
— কারখানা ভবন, আবাসিক ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামত; অপরিচলন খাতে (ক্লাব ভাড়া, দোকান ভাড়া, ফলের বাগান, পুকুরে মাছ চাষ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে) প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বৃদ্ধি।

রাজশাহী সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল বাশার বলেন, ৫ বছরের জন্য রোড ম্যাপ করা হয়েছে; সুগার মিলকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায়। উন্নত জাতের আখ রোপন করা হবে। যাতে ফলন বৃদ্ধি পায়। চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি বাই প্রোডাক্ট থেকে কিভাবে অন্য প্রোডাক্টে যাওয়া যায় সেটা ভাবা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ডোর টু ডোর যাচ্ছি; চাষীদের কথা শুনছি। চাষীদের সার, কীটনাশক প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া সরকার আখের দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে আখ চাষ বেড়েছে।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here