ইটালির মিলান শহরে ‘পিৎজা জাদুকর’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন বাংলাদেশি মতিন খান। যার রেষ্টুরেন্টে খেতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন শত মানুষ।
২০১৬ সালে অসুস্থ মা’কে ঢাকায় দেখতে এসে চরম বিপদে পড়েন মতিন। ভিসা জটিলতায় তার ইতালি যাওয়া আটকে যায়। পরে আর ইটালিতে ফেরা হয়নি মতিনের।
করোনা মহামারীর পর হঠাৎই বদলে গেছেন মতিন। ইটালি নয়, তার স্বপ্নের রেস্তোঁরা ডেলিস ডিশ (DELIC DISH) এখন রাজধানীর বনশ্রীতে। মাত্র কয়েক মাসেই যা হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে।
ডেলিশ ডিশের কর্ণধার মতিন খান মা-বাবার দ্বিতীয় সন্তান। বাড়ি ঢাকার পূর্ব জুড়াইনে। বাংলাদেশে পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে পাড়ি জমান। বিদেশে গিয়ে ডিপ্লোমা করেন ফুড ও রেস্টুরেন্ট ম্যানেজমেন্টে।সবময়ই ইচ্ছা ছিল নিজের দেশে কিছু করার।
নিজের স্বপ্ন যাত্রা সম্পর্কে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ২০১৫ সালে ইটালি থেকে মায়ের অসুস্থতার জন্য দেশে ফিরে আসি। ভিসা সংক্রান্ত কিছু জটিলতায় আর ইটালি যাওয়া হয়নি।এরপর যদিও গ্রিসে যাওয়া হয় কিন্তু দেশে কিছু করার স্বপ্ন সবসময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত। এই ভাবনা থেকে ২০১৮ সালে ঢাকার গ্রিন রোডে করি ড্রিম ক্যাফে। সেখান থেকেই স্বপ্নের শুরুটা। এরপর সব গুছিয়ে নিলেও করোনা হানা দেয়। মোটামুটি নিউ-নর্মাল লাইফে ফিরে চলতি বছর শুরু করি স্বপ্নের রেস্টুরেন্ট ডেলিস ডিশ। যা রাজধানীর বনশ্রীতে।
‘‘রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন থেকে শুরু করে কিচেনের মেন্যু সবকিছুতে নিজের আইডিয়া ও নৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলেছেন, যোগ করেন মতিন খান।’’
তিনি আরও বললেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আমরা অনলাইনে অর্ডার নিতাম।এখন অনলাইন অফলাইন দুইভাবেই সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি।’
বার্গার, পিৎজা, স্টেক, চাওমিন, সী ফুড, স্যুপ, নানান রকম প্ল্যাটার, কফি আইসক্রিম, লাচ্ছি, মিল্কশেকসহ আর বেশকিছু খাবারে চমক দেখিয়ে গ্রাহকের মন জয় করে নিচ্ছে ডেলিস ডিশ (DELIC DISH)। বর্তমানে এখানে ২০ জন কর্মী কাজ করছে।
মতিন খান কোরিয়া, জাপান, ইটালি, গ্রীস, ইংল্যান্ডে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন ফুড ও রেস্টুরেন্ট ডেভেলপমেন্টে।
খুব দ্রুততম সময়ে গ্রাহকের চাহিদা মতো পিৎজা প্রস্তুত করে ইটালির মিলান শহরের স্থানীয়দের কাছে পিৎজা জাদুকর খেতাব পেয়েছিলেন মতিন।
প্রবাস জীবনে নানা অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে তরুণ রা বিদেশে গিয়ে যে পরিমাণ কষ্টের কাজ করে তার থেকে অনেক কম কষ্টে দেশে ভালো কিছু করা সম্ভব। তাতে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়।’
এই সেক্টর প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রন্ধন শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদের অনেক মূল্যায়ন করা হয়।এই সেক্টরে কাজ করতে হলে অনেক দেশে বাধ্যতামূলক ট্রেনিং করানো হয়।জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই সেক্টরে ট্রেইনআপ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক কাজ করলে আমাদের দেশেও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।’
বাংলাদেশের জনশক্তি হতে পারে এদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি জানিয়ে উদ্যোক্তা বললেন, রন্ধনশিল্পে যারাই কাজ করতে আসবেন তারা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটা খুব জরুরি। এছাড়াও ট্রেনিং, ছয় মাসের হাতে কলমে শিক্ষা নেওয়া দরকার।
বাংলাদেশকে নিয়ে উদ্যোক্তার স্বপ্নটা অনেক বড়। আমাদের দেশটি খুবই সম্ভাবনাময়।তাই দেশে থেকে তিনি রন্ধন শিল্প নিয়ে আরও এগিয়ে যাবেন এটাই তার প্রত্যাশা।
মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা