রঙতুলিতেই স্বপ্ন খুঁজে পান উদ্যোক্তা ইসমত রাহাত পিয়া

0
উদ্যোক্তা ইসমত রাহাত পিয়া

“নতুন চাকরি, খুব অল্প বেতন চলতে কষ্ট হতো।হঠাৎ বন্ধুর বিয়ে, কী গিফট দিব চিন্তায় অস্থির! ৫০০ টাকা দিয়ে একটা শাড়ি কিনি আর কিছু রঙ। বন্ধুর জন্য শাড়িতে আঁকি। শাড়ি আঁকার পর ভাবলাম ছবি তুলে রাখি। ছবি তুলে পেইজ খুললাম, সেখানে পোস্ট দিলাম। স্বপ্নের শুরুটা ২০০৯ সালে আর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া ২০১৬ সালে” – এভাবেই অনূভুতিগুলো জানাচ্ছিলেন উদ্যোক্তা ইসমত রাহাত পিয়া।

পরিবারের বড় মেয়ে উদ্যোক্তা ইসমত রাহাত পিয়া। জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং পড়াশুনা খুলনায়। স্থাপত্য বিষয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

২০০৯ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পথশিশুদের জন্য একটা অবৈতনিক স্কুল যাত্রা শুরু করে। খুবির শিক্ষার্থীরা এটা পরিচালনা করেন, অর্থায়ন করেন। স্কুলটিকে টিকিয়ে রাখতে, বাচ্চাদের এবং তাদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে খুবি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মকান্ড শুরু করেন। সেখানে উদ্যোক্তা রাহাত হ্যান্ডপেইন্টেড পাঞ্জাবি আর শাড়ি দিয়ে কাজ শুরু করেন। কিন্তু পড়াশুনার চাপ আর ব্যস্ততার কারণে কাজটি নিয়মিত করা সম্ভব হয়নি।

২০১৪ সালে মেয়েদের নেটওয়ার্কের সাপোর্ট গ্রুপ সিস্টারহুডে অ্যাড হন কোনো এক বন্ধুর মাধ্যমে। এই গ্রুপ থেকে পেলেন ‘রাঙতা’র খোঁজ। রাঙতা মেয়েদের নেটওয়ার্কের ব্যবসায়িক শাখা। সেখানে শুধুমাত্র দেশীয় পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য কাজ করা হয়। অনেকের অনেক রকম পোস্ট দেখে ভীষণ উদ্বুদ্ধ হোন রাহাত। তিনি ভাবলেন, “আমিও তো কতকিছু পারি! আমিও তো কাজ করে এখানে সবাইকে দেখাতে পারি।” কিন্তু হাতে কোনো টাকাপয়সা না থাকায় মা’র কাছ থেকে টাকা একটি শাড়ি এবং কিছু রঙ কিনে শুরু করেন হ্যান্ডপেইন্টের কাজ। কিন্তু পরিবারের সাপোর্ট না থাকায় আর সবার কটু কথায় ভীষণ মন খারাপ করে কাজটি থেমে যায়।

২০১৫ সালে ঢাকায় এসে চাকরি শুরু করেন। গতানুগতিক কম বেতনের চাকরি মনকে সায় দিল না। সবসময় একটা ভিন্ন সেক্টরে কাজ করার অদম্য ইচ্ছা থেকেই যায় মনের মধ্যে। চাকরি করতে করতে নিজের একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গার প্রয়োজন অনুভব করতে থাকে রাহাত। বন্ধুর বিয়েতে উপহার নিয়ে দ্বিধা দ্বন্ধে পড়ে যান, পরে নিজের হাতে করা হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ী উপহার দেন। সেই থেকে আবারও শুরু করলেন হ্যান্ডপেইন্টের কাজ। এবার অনলাইন প্লাটফর্মকে বেঁছে নিলেন তার কাজের প্রসার এবং পরিচিতির জন্য।

নিজ উদ্যোগের নাম দিলেন ‘লৌকিক’। উদ্যোগের শুরুটা হয়েছিল হ্যান্ডপেইন্টেড পোশাক দিয়ে। এরপর একসময় দেশীয় তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ থেকে দেশী তাঁতের শাড়ী নিয়েও কাজ করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমার এবং অন্যান্য দেশীয় পণ্যের উদ্যোগগুলির সমন্বিত চেষ্টাই আমাদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো বলে আমি মনে করি”।

হ্যান্ডপেইন্টেড শাড়ী, ব্লাউজ,শীতের শাল, ডেনিমের পোশাক, বিভিন্ন গিফট আইটেম, হাঁতে বানানো এবং রিসাইকেলড গয়না, হাঁতে আঁকা টিপ এর সাথে জামদানী শাড়ী, মণিপুরী শাড়ী, মণিপুরী শাল, টাঙ্গাইলের শাড়ী, ঠাকুরগাঁওয়ের হাঁতে বোনা শাড়ী, শাল এছাড়া ব্লকের শাড়ী, কামিজ পিস, নারী এবং পুরুষের পাঞ্জাবীসহ বিভিন্ন দেশীয় পন্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা ইসমত রাহাত পিয়া।

উদ্যোক্তাবার্তার সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উদ্যোক্তা বলেন, “যেহেতু আমি কোন প্রকার সাপোর্ট পাইনি, তাই আমাকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু আমি থেমে থাকবো না, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে একটা ছিমছাম স্টুডিও করবো। মানুষ সেখানে একইসাথে কাজ দেখতে, ঘুরতে, সময় কাটাতে এবং কেনাকাটা করতে আসতে পারবে।
নিজেকে এমন জায়গায় দেখতে চাই যেন মানুষ আমাকে আমার কাজ দিয়ে চিনতে পারেন, আলাদা করতে পারেন। অনেক অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। দেশীয় শিল্প এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে চাই। দেশকে পরিচিত করতে চাই নিজের কাজের মাধ্যমে। “

আন্তরিক প্রচেষ্টা, সততা, দক্ষতা, পরিশ্রম – এসবের কম্বিনেশন থাকলে একজন মানুষ, সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন – এমনটাই মনে করেন উদ্যোক্তা ইসমত রাহাত পিয়া।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তাবার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here