উম্মে রোকাইয়া প্রিমাঃ উদ্যোক্তা পৃথ্বীষা বৈদ্য রং তুলি নিয়ে খেলতে শিখেছেন সেই ছোটবেলায় শিশু একাডেমির প্রাঙ্গনেই,পরে এসে সেই শিল্পকে পোক্ত করে তুলেন চট্টগ্রাম শিল্পকলার ফাইন আর্টসে ভর্তি হয়ে। ৩ বছরের প্রশিক্ষণে, জেনেছেন অনেক অজানা শিল্পের কথা,প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা শিল্পসত্তাকে বের করে এনেছে উদ্যোক্তা পৃথ্বীষা। সেই থেকে ব্লক, হ্যান্ডপ্রিন্ট, সুঁই-সুতোর কাজ নিয়ে বেশ একটা আগ্রহ থেকে পৃথ্বীষার শেখার পথচলা শুরু।
২০১২ সাল থেকে প্রথমে নিজের ড্রেসে তৈরি করা, পরে বন্ধুদের। এভাবে তার হাতের কাজের অসাধারণ ডিজাইন করা, ব্লক, হ্যান্ডপ্রিন্ট কিংবা সুতোর কাজের ড্রেসগুলো নজর কেড়ে নেয় বন্ধুমহলসহ আরো অনেকের কাছে। সেই থেকে একটা দুটো অর্ডার পেতে থাকে পৃথ্বীষা, বিশেষ করে ঈদ, পুজো কিংবা পহেলা বৈশাখ যেকোনো উৎসবে ধীরে ধীরে তার হাতের বানানো পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।
সেই থেকে পৃথ্বীষার ইচ্ছা ছিল, নিজের প্রতিভাকে ফুটিয়ে তোলার,কিন্তু তার এই সৃজনশীল কাজ আরও বড় পরিসরে সকলের সামনে তুলে ধরার কথা, তখনও তিনি ভেবে উঠেননি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে, বন্ধুদের প্রবল উৎসাহ ও এক বড় বোনের বিশেষ উদ্দীপনায়, নিজের শিল্পকে আরো বিস্তর করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস করে অনলাইনে পেইজ খুলবার প্রথম উদ্যোগ নেন, উদ্যোক্তা পৃথ্বীষা। পেইজের নাম দিলেন “টেনটেরালি”।
এই অদ্ভুত নামের ব্যাপারে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন, “টেনটেরালি শব্দটা যখনই প্রথম শুনি তখন সাইন্সফিকশানের কোন ক্যারেক্টারের নাম মনে হয় আমার। ভেবেই প্রথমে খুব ভালো লাগলো,তাই মনে মনে ঠিক করে নিলাম এটাই হবে আমার পেইজের নাম,পরে এর অর্থ বের করতে গিয়ে জানতে পারলাম, চট্রগ্রামের ভাষায়, ফড়িংকে টেনটেরালি বলা হয়। তাই আর না ভেবেই পেইজের নাম রেখে দিলাম টেনটেরালি”।
প্রথমে, দুই হাজার টাকা বিনিয়োগ করে কাপড়ের উপর নিজের হাতের সুতোয় কাজ করা নানান রকম জুয়েলারি দিয়ে শুরু করেন পেইজের কাজ এবং পেইজ খোলার প্রথম দিনেই তিনি সেই কাপড়ের জুয়েলারির বেশ সাড়া পেলেন সাধারণ ক্রেতারদের কাছে। প্রথম দিনেই উদ্যোক্তার কাছে অর্ডার আসে তিনটি নেকপিসের, সেই থেকে “টেনটেরালি” র দেড় বছরের যাত্রায় কখনও পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি পৃথ্বীষার।
উদ্যোক্তার হাতে তৈরি কাপড়ের গহনা, কাঠের জুয়েলারি, ব্লক বা হ্যান্ডপ্রিন্টের শাড়ি, হ্যান্ড মোটিফের কুর্তি কিংবা ব্লাউজের অপূর্ব সৃজনী নকশা, নজর কেড়ে নেয় সবার, সাথে বাড়িয়ে তুলে ক্রেতার চাহিদা। শুধু চট্টগ্রামে নয়, ঢাকা, জয়পুরহাট, সিলেট সহ দেশের আরও অনেক জেলায় তার হাতের তৈরি পণ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন উদ্যোক্তা।
পৃথ্বীষার কর্ম উদ্যোগে প্রবল স্পৃহার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রথমত, ক্রেতাদের আকর্ষণ, চাহিদা ও তাদের অনুপ্রেরণায় তার ভেতরকার শিল্পসত্ত্বাকে জাগ্রত করে এবং কাজের প্রতি স্পৃহাকে আরও দ্বিগুণ করে তুলে। অন্যদিকে পরিবারের বিশেষ করে মায়ের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা তাকে পূর্ণ উদ্যোক্তা হয়ে উঠার সাহস জোগায়।”
উদ্যোক্তা পৃথ্বীষা বৈদ্যর এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ করে তুলেছে আজ তাকে আত্নপ্রত্যয়ী, আত্ননির্ভরশীল ও উদ্যমী তাই তিনি স্বপ্ন দেখেন এই শিল্পকে বিশাল পরিসরে নিয়ে গিয়ে উন্নতির চরম শিখর ছুঁয়ে দেখার।