এগ্রিভোলটাইজ নামে নতুন এক ধরনের ইন্ডাস্ট্রির উদ্ভব হয়েছে। এই ব্যবস্থায় মূলত সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্যানেল বসানোর জমিতে ভেড়া পালন, শাকসবজি চাষাবাদের মতো কৃষি কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়। জমি ব্যবস্থাপনার এই কৌশল কৃষক ও সোলার ডেভেলপারদের মধ্যে জমি ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট স্বার্থের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেকটাই প্রশমিত করে।
টেক্সাসের ডালাস থেকে এক ঘন্টা দক্ষিণে এমনই একটি এগ্রিভোলটাইজ ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। এই সৌর প্যানেলটি লাইটসোর্স বিপির। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ তেল কোম্পানি ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের (বিপি) ৫০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে এ কোম্পানিটিতে। এই জমিটি লাইটসোর্স বিপি অ্যামান্ডা স্টোফেলস নামে এক ব্যক্তির থেকে লিজ নিয়েছে।
অ্যামান্ডা স্টোফেলস লাইটসোর্সের সাথে চারণচুক্তির মাধ্যমে প্যানেলের চারপাশে ভেড়া পালনের দায়িত্ব পেয়েছেন। পাশাপাশি শাকসবজি চাষাবাদের দিকেও খেয়াল রাখেন। এসব কাজের বিনিময়ে তাকে অবশ্য বেতনও দেয়া হয়। স্টোফেলস নিজের কাজের প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি একটি নতুন ধরনের কৃষিকাজ।’
ন্যাশনাল রিনিউএবল এনার্জী ল্যাবরেটরির শীর্ষ জ্বালানী-পানি ও ভূমি বিশেষজ্ঞ জর্ডান ম্যাকনিক এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অনেক বড় একটি দেশ যেখানে প্রচুর জমি রয়েছে। কিন্তু এসব জমির প্রতি ইঞ্চিই এক অথবা একাধিক ব্যাক্তির মালিকানাধিন, সুরক্ষিত বা দেখাশোনার অধীনে রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাক্তিই চায়না তার জমির মধ্যে কোন পরিবর্তন আসুক।’
তিনি আরো বলেন, এগ্রিভোলটাইজ প্রকল্পগুলো শুরু হয় সমঝোতার মাধ্যমে। ফলে এ প্রকল্পে কৃষিকাজ পরিচালনার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্ভব হয়। অবশ্য সোলার ফার্মে শস্য চাষাবাদের বিষয়টি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে অনেক কৃষকের দ্বিধা রয়েছে।
টম করানায়েক এক মৌমাছিপালক লাইটসোর্স বিপির কাছে জমি লিজ দিয়েছেন। জমি লিজ দিলেও তিনি এখানে মৌমাছি চাষাবাদ অব্যাহত রাখতে পেরেছেন। করানায়েক বলেন, ‘সোলারে কিছু সেরা জমি নেয়। কারণ তাদের এক থেকে চার শতাংশ ঢালু জমি প্রয়োজন।’
এখন পর্যন্ত এগ্রিভোলটাইজ প্রকল্পে কৃষক এবং ডেভেলপার সমান সমান লাভবান হচ্ছেন। সৌর শিল্প যেহেতু খুব দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে তাই এগ্রিভোলটাইক প্রকল্পও এরসাথে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন বাজারের দ্বার উন্মোচন
যুক্তরাষ্ট্রের মোট জমির ৪৪ শতাংশই কৃষিজমি। অনেক সোলার ডেভেলপার এখন এই কৃষিজমিগুলোয় নতুন প্রকল্প শুরু করার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের সোলার এনার্জী টেকনোলজিস অফিসের পরিচালক বেকা জোনস অ্যালবার্টাস বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আমরা যত জমি ব্যবহার করছি তার এক তৃতীয়াংশ চারণভূমি। জ্বালানী উৎপাদন করে আপনি যদি এসব জমির দ্বৈত ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এক বিশাল বাজার উন্মোচিত হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ গিগাওয়াটের এগ্রিভোলটাইক প্রকল্প রয়েছে; যা ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে ৩৫ হাজার এক জমি জুড়ে রয়েছে। তবে এটি দেশটির ইনস্টল করা সোলার সক্ষমতার মাত্র তিন শতাংশ। তবে এটি মাত্রই একটি উদীয়মান শিল্প। কৃষকরা যা নিয়ে মাত্রই ভাবছে।
কোরনায়েক বলেন, ‘এখানে ফসল উৎপাদনের চেয়েও আর্থিক অবদান বেশি। ফসল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকবছর আপনি হয়তো খুব ভালো ফসল উঠাতে পারবেন আবার কয়েক বছর পারবেন না। তবে এখান থেকে প্রতিবছরই একটি স্থির আয় আসে।’ লাইটসোর্স বর্তমানে ৬১৫ মেগাওয়াটের ভেড়া পালন ও সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালনা করে; যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট এগ্রিভোলাইক পোর্টফোলিওর প্রায় ১২ শতাংশ। আগামিবছর প্রকল্পটি এক হাজার ৫৮ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে লাইটসোর্সের।
আরেক গুরুত্বপূর্ণ তেল কোম্পানি শেলও এ ধরনের প্রকল্পে যোগ দিচ্ছে। সোলার ডেভেলপার সিলিকন র্যাঞ্চের ৪৪ শতাংশ মালিকানা শেলের । র্যাঞ্চ এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের এগ্রিভোলটাইক প্রকল্প পরিচালনা করছে; সামনের বছর এখানে আরো ৯০০ মেগাওয়াট যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।
প্যানেলের মাঝখানে ফসল উৎপাদন খুব সহজ বিষয় নয়। টমেটো এবং ব্রকলির মতো ফসলগুলো সোলার প্যানেলের মাঝে উৎপাদন করা যায়। সৌর প্যানেলের অ্যারের নকশায় অনেকসময়ই পরিবর্তন আনতে হয়। ফসলের উচ্চতার জন্য প্রায়ই প্যানেলগুলোকে উঁচু করা হয়। এ কাজ বেশ ব্যয়বহুল।
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা