‘শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতীক দুরন্ত প্রাণবন্ত নির্ভীক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যথাযথ মর্যাদায় ‘শেখ রাসেল দিবস’ পালন করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ উপলক্ষে বিডা‘র মাল্টিপারপাস হলে বিডা’র নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত ও গীতা থেকে পাঠ এবং স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্য এবং সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধ নিবেদন করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে জন্ম হতো না বাংলাদেশের, সমগ্র জাতিকে আজো পরাধীনতার গ্লানি নিয়েই বাঁচতে হতো। এই যে আমরা আজ এখানে যারা সমবেত হয়েছি, তারা কেউ এখানে আসতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধু তাঁর পুরো জীবনটাই দেশ ও জনগণের সেবায় কাটিয়েছেন, তিনি বেঁচে ছিলেন ৫৪ বছর, এই ৫৪ বছরের মধ্যে তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য ২৩ বার কারাবরণ করেছিলেন, সময়ের হিসাবে তা ছিল ১৩ বছর।
তিনি বলেন: দেশের সেবা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে সময় দিতে পারেননি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর পুরো পরিবারকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, আর তাঁকে ফাঁসির আসামি করে পাকিস্তান কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। তাঁর সকল ত্যাগ শুধুমাত্র আমাদের অধিকার, আমাদের স্বাধীনতা আদায়ের জন্য।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কুচক্রী মহল যখন নির্মম নৃশংসভাবে তাঁকে সপরিবার হত্যা করে, তখন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ছুটে চলেছে বাংলাদেশ, তাঁর নেতৃত্বে গত তেরো বছরে পুরোপুরি পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চেহারা।
‘আজ বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কুচক্রী মহল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বার বার হত্যার চেষ্টা করে গেছে। ২১ শে আগস্টের কথা আমরা সবাই জানি। তবু পরিবার পরিজন সব হারিয়ে বুকে শোক চেপে রেখে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের সেবা করে যাচ্ছেন,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লোকমান হোসেন মিয়া বলেন: আজ শেখ রাসেলের জন্মদিন, বেঁচে থাকলে তার বয়স ৫৮ বছর হতো, তিনি হতেন পরিপূর্ণ এক মানুষ। শেখ রাসেল ছিল নিষ্পাপ এক শিশু, মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, যার রাজনীতির সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না, ঘাতকদের কোন বিরোধ ছিল না, তবু তাঁকে বাচতে দেওয়া হয়নি, বেড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি। জীবন কী বোঝার আগেই তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, ঘাতকের বুলেট তাঁকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। যারা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাঁদের বিচার হয়তো হয়েছে কিন্তু রাসেল তো আর ফিরে আসেনি, আমরা তো তাঁকে ফিরে পাইনি আমাদের মাঝে। আজ শেখ রাসেল সব নিষ্পাপ শিশুদের প্রতীক, এখন যারা শিশু আছে বা জন্ম গ্রহণ করছে তারাই শেখ রাসেলের উত্তরসূরী, তাদের জন্য আমাদের নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে। একটা শিশুও যেন অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। সে যেন সব অধিকার পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ মানে শুধু বুলেটের হাত থেকে নিরপদ নয়, শিশুদের জন্য ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, সুন্দর শিক্ষা, সঠিক চিকিৎসা ও খেলাধুলার পরিবেশ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিডা’র নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, শেখ রাসেল খুবই স্বল্প একটা জীবন নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল। কোন শিশুর প্রতি কোন ধরনের বৈষম্য যেখানে কোনভাবেই কাম্য নয়, সেখানে একজন শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে। আজ শেখ রাসেল সব শিশুর প্রতীক, তাদের জীবন নিরাপদ রাখার দায়িত্ব আমাদের, আর আমাদেরই সেটা করতে হবে।
অন্যান্যের মধ্য আলোচনায় অংশ নেন অভিজিৎ চৌধুরী (নির্বাহী সদস্য, বিডা), মতিউর রহমান (নির্বাহী সদস্য, বিডা), ড. আসমা আক্তার জাহান এনডিসি (নির্বাহী সদস্য, বিডা), মোঃ আবু সাইজ জোয়ার্দার (মহাপরিচালক, বিডা), সুমন চৌধুরী (পরিচালক, বিডা), মোঃ সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া ( নির্বাহী চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব), মো জাহিদ হোসেন (সহকারী পরিচালক, বিডা), মফিদুল ইসলাম, (প্রধান সহকারী, বিডা), সফর আলী, (গাড়ীচালক বিডা) প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিডার সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভার আগে সকাল সাড়ে ৮টায় বিডা‘র প্রধান কার্যালয়ে স্থাপিত শহীদ শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচিতে শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন পালন করে বিডা।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা