কিছুদিন আগেও মানুষ শুধুমাত্র চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে ঘুরত। আর তাই লেখা-পড়া করত শুধুমাত্র একটা ভাল চাকরির আশায়। অধিক পুঁজি এবং অনিশ্চিত আয়ের জন্য পড়ালেখা শেষ হওয়ার পরই মানুষের একমাত্র কাজ ছিল চাকরি করা, আর তা যদি হয় সরকারি চাকরি তাহলে সোনায় সোহাগা। কিন্তু এই ধারণার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে, যখন ব্যবসার মাধ্যমে মানুষ তার ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সক্ষম হয়।
অনেক ধরনের ব্যবসার মধ্যে বর্তমানে পার্লার ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মেয়েরা সৌন্দর্য বিষয়ক ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন, এছাড়াও বিয়ের দিনটিতে নিজেদেরকে আরও বেশি আকর্ষণীও করে তোলার ব্যাপারেও এখনকার মেয়েরা যথেষ্ট সচেতন। সেরকম ছেলেরাও সচেতন, এমনকি এখন ছেলেদের জন্যও রয়েছে পার্লার। তাই বর্তমানে পার্লার ব্যবসা যথেষ্ট পরিমাণে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের নারীদের বড় একটি কর্মের স্থানজুড়ে আছে বিউটি পার্লার। পার্লারের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে এবং তা সীমিত আকারে হলেও ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে।
শারমিন আখতার এমনই একজন নারী, যিনি বর্তমানে একজন সফল বিউটি পার্লার উদ্যোক্তা। তার সাথে আলাপ হয়। তিনি জানান তাঁর সফলতার গল্প।
শারমিন আখতার রাঙামাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পেশায় চাকুরীজীবি ছিলেন। গেলো ১ বছর আগে মারা গেছেন। মা গৃহিনী। তিন বোন ১ ভাই এর মধ্যে শারমিন সবার বড়। শিক্ষাগত জীবনে তিনি রাঙামাটি সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে স্বামী ও ১ সন্তান সহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩ জন।
শারমিনের ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু পারিবারিক ভাবে সমস্যা থাকার কারণে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। আজকে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার পিছনে রয়েছে তার নিজের পরিশ্রম এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে শারমিন আখতারকে, তবে কখনোই দমে যাননি তিনি। নিজের মেধা, মননশীলতা, কর্মনিষ্ঠা এবং একাগ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।
উদ্যোক্তা শারমিন মাত্র ১,২০,০০০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে “স্বপ্নীল স্পা এন্ড বিউটি পার্লার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে বিউটি পার্লারটি শহরের খান পাড়া এলাকায়, কলেজ টাওয়ার, ব্রাম্মণবাড়িয়া অবস্থিত। তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ জন নারী কর্মরত আছেন।
উদ্যোক্তা তার পার্লারের কাজ সম্পর্কে বলেন-“আমার পরিবার ও স্বামীর সর্বাত্মক সহযোগিতা আমাকে আজকে এই পর্যায়ে আসতে সহযোগিতা করেছে। আমার পার্লারে গ্রাহকের জন্য যে ধরণের সেবা দিয়ে থাকি তার মধ্য মেকওভার, ফেসিয়াল, হেয়ার কাট, নাক ও কান ফোঁড়ানো ইত্যাদি। এছাড়া বাইরের ইম্পোর্ট করা কিছু স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট নিয়েও কাজ করছেন উদ্যোক্তা।
ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে উদ্যোক্তা বলেন- “আমি কখনো আত্মবিশ্বাস হারাইনি। লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, আমি কাজে সফল হবোই”।
মেকাপের ক্ষেত্রে কোন জিনিসটাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে উদ্যোক্তা বলেন -“প্রত্যেকেরই নিজস্বতা আছে। আমি সেটাকেই মাথায় রেখে কাজ করি। আমার কাছে যদি পাঁচ জন বৌ সাজে, তাহলে পাঁচ জনের সাজ পাঁচ রকমের হয়। কাজ দেখে বলে দিতে পারবেন না যে এটা তো শারমিনের কাজ। আমার কাজে একটা না একটা নিজস্বতা আছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমার সব কাজ একই রকম হবে”।
কাজের শুরুতে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে উদ্যোক্তা দৃঢ় ভাবে বলেন-“আমি চাই আমার ব্যবসার আরো প্রসার হোক। স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা অতিক্রম করা সম্ভব। আপনি যে কাজ ভালো পারেন এবং আপনার কাছে যত কম টাকাই থাক না কেন, সেটা দিয়েই শুরু করুন। কারণ কাজ শুরু না করলে কেউ জানবে না যে আপনি কাজ করতে পারেন বা কাজ করতে চান”।
বাধাবিপত্তি সর্ব ক্ষেত্রেই আছে তারপরও যদি কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা, সঠিক পরিকল্পনা থাকে জীবনে সফল হওয়া সম্ভব। মেকাপের মাধ্যমেও যে শিল্পী সত্তা ফুটিয়ে তোলা যায় তারই প্রমান দিয়েছেন এসব মেকাপ আর্টিস্টরা, পার্লার ব্যবসার মাধ্যমে পৌঁছেছেন অনন্য উচ্চতায়। করেছেন নিজের এবং অন্যের কর্মসংস্থান। জীবনে বাধা আসলেও তা মোকাবেলা করে এগিয়ে গেছেন সামনে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা