রাজধানীর বারিধারাতে সোমবার মৃন্ময় আর্ট গ্যালারির আয়োজনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে চিত্রকলার কর্মশালা এবং নুবা জংশন হ্যান্ডিক্রাফট ডিজাইনার জুয়েলারির প্রদর্শনী।
নুবা জংশন পেজের স্বত্ত্বাধিকারী তাহমিনা তমু, আর্টিস্ট ও ফিজিশিয়ান মশিউল চৌধুরী এবং মৃম্ময় আর্ট গ্যালারির চট্টগ্রাম ফাউন্ডার সামিনা করিম তিনজনের পরিচালনায় জুয়েলারি এক্সিবিশন অ্যান্ড আর্ট ওয়ার্কশপটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে নুবা জংশন পেজের স্বত্ত্বাধিকারী তাহমিনা তমু বলেন, ‘আজকে যে এক্সিবিশন চলছে তার সাথে একটি ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হয়েছে। এ এক্সপেরিমেন্টটা শুরু হয়েছে মূলত চিটাগাং শহর থেকে। মৃন্ময় আর্ট গ্যালারির আহবানে আর্টিস্ট এবং ফিজিশিয়ান মশিউল চৌধুরী ওয়ার্কশপটি পরিচালনা করছেন। মূলত তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়ার্কশপগুলো করে থাকেন। বাংলাদেশে কখনো ফিজিক্যালি তিনি ওয়ার্কশপ করেননি। উনার যে ছবি আঁকার পদ্ধতি, তা একেবারেই নতুন এবং অন্যরকম। এই অন্যরকম চিন্তাভাবনা পদ্ধতিকে বাংলাদেশের তরুণদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছি।’
তিনি বলেন: আমার ‘নুবা জংশনে’ আমরা দেশীয় প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি। সব ধরনের ইউনিক পণ্যগুলো নিয়ে কাজ করি। আমার উদ্দেশ্য ছিল নারী যখন শাড়ির সাথে, একটা স্কার্টের সাথে, একটা টপসের সাথে এ জুয়েলারিগুলো পরে তা এমনিতেই ফুটে ওঠে। এতদিন আমি অনলাইনের মাধ্যমে এটা আবদ্ধ রেখেছিলাম। সেক্ষেত্রে অনলাইনের বাইরে অফলাইনে আমাকে মানুষ কীভাবে গ্রহণ করে সে রিভিউ নেওয়ার জন্য আজকের এই জুয়েলারি এক্সিবিশন। এছাড়া আমার দেশীয় গহনা বিদেশের বিভিন্ন গ্যালারিতে নিয়ে যাওয়াটা আমার মূল উদ্দেশ্য।
আয়োজনের বিষয়ে মশিউল চৌধুরী বলেন, আমি এই ওয়ার্কশপে এসেছি নুবা জংশনের স্পন্সরে। আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল, গত ২২ বছরে আমেরিকাতে যে ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি সেটা আমার কর্মশালার মাধ্যমে সবার মাঝে ভাগ করে দেওয়া। আগে দেশে যখন ছবি আঁকতাম, সেসময় আমি অনেককেই কিছু বিষয় শিখাতে পারিনি। কিন্তু আমি যখন আমেরিকায় যাই, আমি নিজেও অনেক কিছু শিখেছি। সেখানকার ধরন এবং পদ্ধতিগুলো প্র্যাক্টিস করে যা অর্জন করেছি, তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরে আমি আনন্দ বোধ করছি।
মৃম্ময় আর্ট গ্যালারির চট্টগ্রাম ফাউন্ডার সামিনা করিম বলেন, আমার গ্যালারির কার্যক্রম হচ্ছে শিক্ষার্থী আর্টিস্টদের নিয়ে ওয়ার্কশপ, আর্ট ক্যাম্প নিয়ে এক্সিবিশন গুলো অর্গানাইজ করা। মশিউল চৌধুরীর সাথে আমার করোনাকালীন পরিচয় হয়েছিল। উনি আমার একটি অনলাইন ওয়ার্কশপে পার্টিসিপেট করেছিলেন। সেই সুবাদে আমার তার সাথে পরিচয় । এবার উনি যখন দেশে আসলেন, আমি আমার শিক্ষার্থী আর্টিস্টদের জন্য মশিউল চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি যাতে নতুন প্রজন্মের আর্টিস্টরা তার কাছ থেকে নতুন পদ্ধতির বিভিন্ন ধরনের আর্ট শিখতে পারে। এর জন্য এ আয়োজনটি করা।
মশিউল চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক, নেশায় চিত্রশিল্পী। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে শিল্পচর্চা করে আসছেন বহুদিন ধরে।কর্মশালায় বিশ্ব চিত্রকলার ইতিহাস ও বিবর্তন, শিল্পকলার নানাবিধ আন্দোলন, দর্শন ইত্যাদি তাত্ত্বিক বিষয়ের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের তিনি হাতেকলমেও দৃশ্যশিল্পের নানা মাধ্যমের কাজ শেখান। তবে কর্মশালায় বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয় ড্রইং তথা রেখাচিত্রের ওপর। ফিগারেটিভ ড্রয়িং কিংবা অবয়বধর্মী চিত্রকলায় দক্ষতা অর্জনের জন্য নানাবিধ করণকৌশল শেখানোর পাশাপাশি তিনি বিশ্বের বিখ্যাত শিল্পীদের বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে সেসবের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো চিহ্নিত ও ব্যাখ্যা করেন। এছাড়া শিল্পী মশিউলের এই কর্মশালার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের দিয়ে নগরীর সড়কের পার্শ্ববর্তী দেয়ালের আকর্ষণীয় আঁকিবুকি ও চিত্রবিচিত্র অংশের ছবি তুলে কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে সেখান থেকে বিমূর্ত ছবির বিবিধ আদল বার করে আনার কৌশল শেখানো, যা তাঁর নিজের শিল্পকর্মেরও একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।
কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে প্রত্যয়নপত্র বিতরণ করা হয়।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা