মুচি থেকে বাটা কোম্পানীর মালিক! ১৩০ বছরের পুরোনো ব্র্যান্ড বাটা

0

চেকোসলোভাকিয়ার যেলিন শহরে ১৮৯৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ১০ জন কর্মী নিয়ে বাটা জুতা কোম্পানির প্রতিষ্ঠা।

বাঙালির নামের সঙ্গে ‘বাটা’ (Bata) এমনভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে, আদতে এটির সঙ্গে বাংলার কোনও যোগই নেই। এটি আমাদের দেশের কোনো ব্র্যান্ড নয়। এমনকি বাটার কোনো জুতাও তৈরি হতো না এদেশে। ১৩০ বছরের পুরোনো ব্র্যান্ড বাটার গল্প টা ঠিক কেমন ছিল? চলুন জেনে নিই আজকের সীমানা পেরিয়ে’র নতুন পর্বে।

৬ বছর বয়স থেকেই বাতিল চামড়া দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলের মাপে জুতো তৈরি করতেন টমাস বাটা। আকারে খুদে হলেও দেখতে একেবারে আসল জুতোর মতো। একেবারে নিখুঁত। খেলার ছলে তৈরি জুতো কিন্তু কিনে নিয়ে যেত মানুষ। টমাসের বাবা-দাদা সবাই পেশায় দক্ষ চর্মকার। এমনকি পূর্বপুরুষের একমাত্র পেশা ছিল জুতা সেলাই ও তৈরি করা। বাবার কাছেই একটু একটু করে শিখেন।

জুতো তৈরিতে দিন দিন দক্ষ হয়ে উঠতে লাগলেন। ১২ বছর বয়সে বুঝতে পারছিলেন তাদের পেট ভরা খাবার আর ভাল থাকার এক মাত্র উপায় বাবার ব্যবসা। এক সময় ছেড়ে দিলেন স্কুলের পাঠ।
টমাসের মাথায় ক্রমশ চেপে বসছিল নিজের কিছু করার তাগিদ। নিজের অল্প জমানো টাকা আর বোন অ্যান সামান্য অর্থ সাহায্যে করলেন। চেকোসলোভাকিয়ার যেলিন শহরে ১৮৯৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দুই ভাইবোন, আঁতোয়া ও অ্যানকে নিয়ে শুরু করে দিলেন টমাস বাটা নিজের জুতোর ব্যবসা। সাথে নিলেন ১০ জন কর্মী। নাম টি অ্যান্ড এ বাটা’।

চামড়ার বদলে ক্যানভাস দিয়ে জুতো বানানো শুরু করেন টমাস। পৃথিবীর প্রথম কেডস জুতো। ধনী দরিদ্র সকলেই কিনতে পারবে ক্যানভাস শ্যু।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিলিটারিদের জুতো তৈরীর অর্ডার পেয়ে সেই থেকেই সাফল্যের শিখরে ওঠে টমাস সাহেবের সংস্থা। একধাক্কায় বাটার জুতার বিক্রি বেড়ে গেল কয়েক গুণ। ব্যবসা ইউরোপ থেকে ছড়িয়ে পড়ল মধ্যপ্রাচ্যে, আমেরিকায়, এশিয়ায়। বিশ্বজুড়েই টমাস বাটার ‘স্ট্র্যাটেজি’ ছিল একটু ভিন্ন রকম। ছোটখাটো এলাকা দেখে কারখানা খুলতেন, তারপর তাকে ঘিরে তৈরি হত শহর। নেদারল্যান্ডসের ‘বাটাডোর্প’, ফ্রান্সের ‘বাটাভিল’, কানাডার ‘বাটাওয়া’, ব্রাজিলে ‘বাটাতুবা’ এমনকি পাকিস্তানেও রয়েছে ‘বাটাপুর’।

টমাস বাটা বিমান দুর্ঘটনায় প্রয়াত হবার পর কোম্পানির পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে ছেলে টমাস জন বাটার কাঁধে।
১৯৩২ সালে বাটা (Bata) পা রাখে ভারতে। বাটার প্রথম ফ্যাক্টরি খুলেছিল হুগলির তীরে, কোন্নগরে। সেই কারখানা ও তার বিক্রির টানেই হুড়মুড়িয়ে বেড়ে যায় জনসংখ্যা। ছোটখাটো একটা শহরই হয়ে যায় সেখানে। বাটার জুতোর (Bata) হাত ধরেই আজ যার নাম ‘বাটানগর’। এককালে এটিই ছিল এশিয়ার সবচেয়ে বড় জুতোর কারখানা।

টমাস বাটার ছেলে ট্মাস জন বাটার ভিজিটিং কার্ডে পদবি লেখা ছিল ‘সিনিয়র’ শু সেলসম্যান। ৪০ বছর তিনিই বাটার সিইও এর দায়িত্ব পালন করেন।টমাস জন বাটার স্ত্রী সঞ্জা ১৯৯৫ সালে বাটা সু মিউজিয়াম ফাউন্ডেশন নামে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুতার জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কানাডার টরন্টোতে যেখানে ৪০ হাজারের বেশি নিদর্শন আছে। এখানে আছে মিসরের সম্রাটদের ব্যবহৃত জুতা, অ্যাপোলো-১০ অভিযানের জুতা।

১৯৯৪ সালে বাটা পালন করে এর ১০০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী । ২০০৪ সালে গিনেজ ওয়ার্ল্ড বুকে বিশ্বে সর্ববৃহত জুতা উৎপাদনকারী ও খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নাম লেখায় বাটা। বাটা নামটি এবং এর লোগো ১৪টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বর্তমানে বাটা ৭০ টির বেশি দেশে কাজ করে । ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় বাটার রয়েছে ৫৩০০টির বেশি দোকান। সারা বিশ্বে বার্ষিক ৬ কোটি জোড়া বাটার জুতা বিক্রি হয়। বাংলাদেশে ১৯৬২ সালে বাটা যাত্রা শুরু করে।

টঙ্গী ও ধামরাইয়ে বাটার দুটি কারখানা রয়েছে। যেখানে দৈনিক ১ লাখ ৬০ হাজার জোড়া জুতা তৈরীর সক্ষমতা আছে। বাংলাদেশে বার্ষিক ৩ কোটি জোড়া বাটার জুতা বিক্রি হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here