মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন মুগ্ধ

0
উদ্যোক্তা মাশহুন জাহান মুগ্ধ

মানুষের অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোন বাধাই তাকে আটকে রাখতে পারে না। সে কথা আবার প্রমাণ করলেন মাশহুন জাহান মুগ্ধ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মম ফানুস’। জীবন তাকে অনেক কিছু না দিলেও তার প্রাপ্য ঠিকই আদায় করে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আর এ সংগ্রামে তার তার মা-বাবা তার অনুপ্রেরণা হয়ে স্বপ্ন দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে এসেছে এতোদূর। মা-বাবার দেখানো স্বপ্ন পূরণের পথে স্বপ্ন দেখা মেয়ে এখন কর্মসৃষ্টির উদ্যোক্তা।

ছোটবেলা থেকেই পেইন্টিং এর প্রতি তার আগ্রহ এবং পেইন্টিং কাজগুলোই তাকে উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহী করে তুলেছে। পেইন্টিং এর প্রতি ছিলো গভীর আগ্রহ ও ভালোবাসা। সবসময় সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু করতে চাইতেন। সেখান থেকে সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে মাশহুন জাহান মুগ্ধ এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।

জন্মের পর থেকে যারা কথা বলতে পারেন না তাদের কতোটা সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়, তা হয়ত একজন সাধারণ মানুষ কখনও বুঝতে পারেন না। তাছাড়া এ ধরনের স্পেশাল চাইল্ডের বাবা-মাকেও অনেক সংগ্রাম করতে হয়। এসব শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হয় মা-বাবাকে।

এমনই এক শিশু মাশহুন জাহান মুগ্ধ। একদিকে যেমন কথা বলতে পারেন না, আবার কানেও শুনতে পান না। কিন্তু এই সমস্যা তার পড়াশোনা ও প্রতিভাকে আটকাতে পারেনি।

সমাজের বোঝা নয়, স্বাবলম্বী হওয়ার ভাবনায় তাকে বড় করছেন মুগ্ধর মা-বাবা। মুখে কথা বলতে না জানলেও, শুনতে না পারলেও, লিপ রিডিং করে সব বুঝে নেন মুগ্ধ। বড় স্বপ্ন নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন, মুগ্ধ স্বপ্ন দেখেন একজন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার।

উদ্যোক্তা মাশহুন জাহান মুগ্ধ নবম শ্রেণিতে পড়েন। বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং মা একজন উদ্যোক্তা। দু’ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট। গ্রামের বাড়ি নওগাঁ। ছোটবেলায় বগুড়ার বাসিন্দা হলেও বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন।

তিনি লিখে তার অনুভূতি জানান, ‘আমার ছবি আঁকতে ভালো লাগে। আমার কাছে অনেকেই শাড়ি ও জামাতে পেইন্ট করে চান। সেখান থেকেই উদ্যোক্তা জীবনে আসা। শুধুমাত্র রং ও তুলিই ছিল পুঁজি। আমি সব ধরনের পণ্যে পেইন্টিং করে থাকি। এছাড়াও ব্লক, এমব্রয়ডারি, কারচুপি ও টেইলারিং কাজ হয়। শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, বেবি ড্রেস, বিছানার চাদর করা হয়। যা খুচরা ও পাইকারি বিক্রয় করা হয়। আমি একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি আমার সৃজনশীলতা দিয়েই এগিয়ে যেতে পারব।’

‘মম ফানুস’ উদ্যোগের পণ্য দেশের বাইরে এখনও রপ্তানি করা না হলেও অনেক প্রবাসীই এসে কিনে নিয়ে যান। এছাড়াও এ উদ্যোগের পণ্য সারাদেশেই যায়। বর্তমানে মাসে সব পণ্য মিলিয়ে গড়ে ৬০০ পিস উৎপাদন করেন। মাসিক বিক্রয় ৩৫ হাজার টাকার মতো।

অল্প সময়ের মধ্যেই মাশহুন জাহান মুগ্ধ দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ন্যায্য দামে দেশীয় ঐতিহ্যের মিশেলে সেরা ট্রেন্ডি পোশাকের সমাহার রয়েছে তার ‘মম ফানুস’-এ।

উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম অনুপ্রেরণা তার মায়ের কাছ থেকে পেলেও উদ্যোক্তার পুরো পরিবার সবসময়ই পাশে ছিল। ‘একদম শুরুতে আত্মীয়-স্বজনরা আমার পেইন্টিং এর প্রশংসা করেন এবং পরিচিত সবার মাঝে ছড়িয়ে দেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই পুরো জার্নিতে এভাবে সাহায্য করার জন্য।’

ভবিষ্যতে তিনি তার প্রতিষ্ঠানকে ব্র‍্যান্ড রূপে দেখতে চান। যেখানে তার মতো প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়াও নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের প্রতিভাকেও কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করতে চান যা দেশকে এগিয়েনেবে।

দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করার আগ্রহটা বেশি এসেছে মায়ের কাছ থেকেই। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যে তিনি শুধু একটা বিষয় নিয়ে কাজ করবেন না, বরং অনেক ধরনের কাজের পোশাক পাওয়া যাবে ।

প্রতিবন্ধীদের উদ্দেশে তার বক্তব্য লিখে জানান: শরীরের অসুবিধার দিকে না তাকিয়ে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে এবং সেই লক্ষ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আমরা প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা হয়ে থাকবো না, দেশের কল্যাণ ও সেবা করতে পারবো।

মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here