“লকডাউন শুরু হয় ২৫ মার্চ থেকে। শোরুম বন্ধ কর্মীরা ছুটিতে, আমি ঢাকায় ছিলাম কোথাও যাইনি। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। কয়েকদিন পর আমার নিয়মিত কাস্টমারদের ফোন আসা শুরু হলো। ১৩ এপ্রিল থেকে পাঠাও ডেলিভারি ম্যানদের দিয়ে আবার হোম ডেলিভারি শুরু করলাম। আমি কাজটা জানতাম তাই নিজেই কাজ করতাম কোন কর্মী ছাড়া।
করোনায় কোন কর্মীকে বাসায় এনে নিজে কিংবা তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে চাইনি। রোজার মাসেও সীমিত আকারে দোকান খুলে আবার বিক্রি করা শুরু করলাম। আমি থেমে থাকিনি পথ চলা শুরু করেছি। প্রোডাক্ট কোয়ালিটি যদি ভালো হয় তবে কাস্টমার আপনাকে খুঁজে নিবে। আমি রোজায় দেড় লক্ষ টাকার বিক্রি করেছি”।উদ্যোক্তা আশা এসব কথায় জানালেন উদ্যোক্তা বার্তার সাথে আলাপচারিতায়।
তার পুরো নাম আসমা খাতুন আশা। যিনি ২০০৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর চাকরিতে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেন, ভালো বেতন সাথে অনেক সুবিধা কিন্তু তারপরও একটা অস্থিরতা কাজ করতো তার। তিনি ভাবতেন চাকরি থেকে বাদ পরে গেলে তার আর নিজের কোন পরিচয় নেই। আর প্রতিনিয়ত কাজের প্রেশার পাশাপাশি সংসার-সন্তান সামলাতে গিয়ে ২০১২ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
দীর্ঘদিন পর ২০১৮ সালে সন্তানের জন্য নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তায় ঘরেই মিষ্টি তৈরি আরম্ভ করেন। তৈরিকৃত এসব মিষ্টির মান এবং স্বাদে সকলেই তার প্রশংসা করতো। তখনই কাজটি বাণিজ্যিকভাবে করার চিন্তা মাথায় আসে। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিলেন। শুরু হলো পণ্য প্রস্তুত পর্ব এবং বাজারজাতকরণের চ্যালেঞ্জ। একটু একটু করে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করা শুরু করেন। শুরুতে চার-পাঁচ রকমের মিষ্টি তৈরি করলেও আজ তিনি প্রায় ৩৫ রকমের মিষ্টি সরবরাহ করছেন ফুড পান্ডা, পাঠাও থেকে শহরের নামীদামী ব্র্যান্ডগুলোতে। সুনাম অর্জন করার পাশাপাশি বেশ কিছু সম্মাননাও পেয়েছেন এই সফল উদ্যোক্তা।
রসগোল্লা, রসমালাই, লাল চমচম, সাদা চমচম ,পোড়াবাড়ির চমচম, রাজভোগ, মালাইকারি, ব্লাকটোষ্ট, ক্রিমটোষ্ট, বুরিন্দা, কালোজাম, লালমোহন, গোলাপ জামুন,মাওয়াজাম, ক্ষীরটোষ্ট, বেবি সুইট, ছানার কেক, সন্দেশ, কাচাছানা, মালাইরোল, গুড়ের রসগোল্লা, গুড়ের ছানা, ছানার জিলাপিসহ দই, পিজ্জা এবং অনেক রকমের কেক দিয়ে সাজানো তার দুইটি শো-রুম। মোহাম্মাদপুরের সেই দুইটি শো-রুম ও কারখানা মিলে উদ্যোক্তা ও তার হাসবেন্ডসহ মোট ১২জন কর্মী নিয়ে চলছে তার কর্মযজ্ঞ।
উদ্যোক্তা আসমা খাতুন বলেন, “একজন উদ্যোক্তা কে সমাজের কোন শ্রেনীর মানুষের সেবা করবে তা ঠিক করে নিতে হবে। উদ্যোক্তা কে দাম নির্ধারণ করা নিয়ে সতর্ক হতে হবে। লভ্যাংশ যেন ৪০% এর বেশি না হয়। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত দাম যেন না চাপিয়ে দেয় কাস্টমারদের উপর। সেই সাথে গুণগত মানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সময় বুঝে কাজ করতে হবে। তবেই একজন উদ্যোক্তা তার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমি মনে করি”।
বিপ্লব আহসান