বাবাহারা একমাত্র সন্তান মোতালিব রহমানকে নিয়ে ২০০২ এ ঢাকা শহরে আসেন মা মোছাম্মৎ নাজমা বেগম। ছেলেকে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরে আনলেও, বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে লেখাপড়া আর করানো হয়নি। মোতালিবের মা ঢাকায় এসে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন। আর ছেলে মোতালিবকে ইলেকট্রিক কাজ শিখিয়ে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজে ঢুকিয়ে দেন। কিন্তু ছেলে স্বপ্ন দেখেন নিজে কিছু করবেন, নিজে একজন উদ্যোক্তা হবেন। সেই ভাবনা থেকেই ছেলে মোতালিবের ‘ক্যাফে টি ট্রি’।
মোতালিব রহমান উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “মায়ের সাথে ঢাকা এসে ইলেকট্রিকের কাজ শিখে আট বছর আমি ইলেকট্রিকশিয়ানের কাজ করি। কিন্তু কোনভাবেই আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না। ইলেকট্রিক কাজ করতে করতে সবসময় মনে হতো আমি নিজে কিছু করবো, কারো অধীনে আর কাজ করবো না, নিজে স্বাবলম্বী হবো এবং অন্য মানুষেরও কাজের ব্যবস্থা করবো। সেই চিন্তা বা ভাবনা থেকে আট বছর ইলেকট্রিক কাজ করে অল্প অল্প করে জমানো ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ভাবতে থাকি কী করা যায়? কিভাবে শুরু করা যায়? চিন্তা করলাম যেহেতু আমি কম লেখাপড়া জানা একজন মানুষ, আর্থিক ভাবেও স্বাবলম্বী না; তাই যেটুকু মূলধন আছে তা দিয়ে একটা চা’য়ের দোকান দেবো। ভাবনা আসলো, চায়ের দোকান তো অনেকেই দেয়, আমি সেই গতানুগতিক চায়ের দোকান দেবো না, একটু অন্যরকম চায়ের দোকান যেখানে সবাই এসে আড্ডা দিতে পারবে, গল্প করতে পারবে এবং আলাদা বা ভিন্ন আমেজ খুঁজে পাবে। সেই চিন্তা থেকে ২০১২ সালে ছোট একটা টং দোকান দিয়ে চায়ের ব্যবসা শুরু করি। পরে একটু বড় আকারে মিরপুর-২ এ ‘টি ট্রি’ ক্যাফে। শুরু করার পর বন্ধুবান্ধব সবার থেকে প্রচুর সাড়া আর উৎসাহ পাই।”
এই তরুণ উদ্যোক্তা জানান: চায়ের ভিন্নতার জন্য আমি চা’কে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করি। যেমন মাসালা টি, লেমন টি, গ্রিন টি, জিনজার টি, দুধ চা, মালাই চা। সেই সাথে হট কফি, কোল্ড কফি, বিভিন্ন রকমের ফলের জুস, বাচ্চাদের জন্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ আরো খাবার রাখি। মূলত টি ট্রি-তে দুই ধরনের কাস্টমার আসে। দুপুরের দিকে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা আর বিকেলে তরুণ তরুণী আর পরিবার নিয়ে আসা লোকজন। দুপুর থেকে রাত ৮টা/৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
উদ্যোক্তা মোতালিব জানান, তার বয়স যখন ২০ বছর তখন তিনি এই উদ্যোগ শুরু করেন। এখন অন্য একটা উদ্যোগের সাথে জড়িত হওয়ায় ‘টি ট্রি’ তার মা দেখাশোনা করছেন। সেই সাথে সহকর্মী আছেন দুইজন।
উদ্যোক্তা মোতালিবের মা নাজমা বেগম উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন: আমার ছেলে মোতালিব কিছু টাকা জমিয়ে ছিলো, আমিও কিছু অর্থ দিয়ে তাকে তার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করেছি। এখন আমি আমার ছেলের সাথে তার উদ্যোগ দেখাশোনা করছি। আমি চাই আমার ছেলের মতো প্রতিটা সন্তানই যেন তাদের বাবা মার কষ্ট বুঝতে পারে, নিজে স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করে। কোন কাজই ছোট না। পরিশ্রম করতে পারলে সব কাজেই সফলতা আসে।
উদ্যোক্তা মোতালিব তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, “এখন অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বেকার হয়ে আছে, আবার আমার মতো পড়াশোনা বঞ্চিত তরুণ তরুণী রয়েছে, যারা ভাবছে কিছু করবে, তারা চাইলে এই রকম উদ্যোগ শুরু করতে পারে। যদি নিজে কিছু করে প্রতিষ্ঠিত হতে চান তাহলে উত্তম মাধ্যম হচ্ছে ব্যবসা।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন: আমার এই উদ্যোগের বয়স এখন ১০ বছর। ‘টি ট্রি’-কে নিয়ে আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। আমি চাই ভবিষ্যতে ‘টি ট্রি’-কে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে। এছাড়াও আমি একটা জিনিস করতে চাই, সেটা হলো আমার মতো যারা সুবিধাবঞ্চিত কিশোর বা যুবক, যারা সুযোগের অভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারছে না, ভবিষ্যতে তাদের জন্য কিছু করতে চাই।
আফসানা অভি
উদ্যোক্তা বার্তা