সময় পাল্টেছে যে কারণে সবকিছুতেই এখন আধুনিকতার ছোঁয়া। ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করলে সহজেই মিলছে খাবার। আর বিশ্বাসযোগ্য এক নাম ‘শাহানা হোম কিচেন’, যেখানে তৈরি হয় হোমমেইড ফুড। অল্প সময়েই তার কিচেন সবার মাঝে সাড়া ফেলেছে খাবারের মান ও স্বাদের কারণে।
উদ্যোক্তা শাহানা ইয়াসমিন পলি ‘শাহানা হোম কিচেন’- এর সত্ত্বাধিকারী। ধানমণ্ডি র্যাডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন ডিজাইনিং-এ পড়াশোনা করেছেন।
গল্পের শুরুতে শাহানা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন: উদোক্তা হওয়ার ইচ্ছা ছিল আগে থেকেই। আগে আমি ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করতাম। মাঝখানে আমার টুইন বেবির জন্য অনেক বছর কাজ করিনি। এখন ওরা বড় হয়েছে। তাই এখন বেশ সময় পাই, আর এই সুযোগটা হয়েছে করোনাকালীন সময়ে। চারদিকে যখন অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিল, তখনই আমি একজন নারী হিসেবে, পরিবারের সহযোগিতায় এবং সাহসিকতাকে যুক্ত করে উদ্যোগ নিলাম খাবারের ব্যবসা করবো। কিন্তু বাসায় বসে কিভাবে? একদিন ফেসবুকে ফুড পান্ডার হোম শেফ এর অ্যাড দেখতে পেলাম “ঘরে বসে আয় করুন”। এটি দেখে আমি ফেসবুকে ফুড পান্ডার হোম শেফ হিসেবে সাইন আপ করে নিলাম। যথাসময়ে ফুড পান্ডার পক্ষ থেকে একটি ডিভাইস দিল। এই ডিভাইস দিয়ে ১০ পদের রান্না নিয়ে ‘Shahana Home Kitchen”এর নামে ব্যবসা শুরু করি।’
ভালো সাড়া পেয়ে এবং ফুড পান্ডার রিভিউ পেইজ এবং গ্রাহকদের ভালো কমেন্ট দেখে কাজের উৎসাহ বেড়ে গেলো। শাহানা ১০টি আইটেম থেকে বর্তমানে ২৬টি আইটেম নিয়ে কাজ করছেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো “দম বিরিয়ানী, ভুনা খিচুড়ি এবং গরুর ভুনা। খাবারের সব আইটেম বিশেষ করে গরুর ভুনা তিনি তার আম্মুর কাছ থেকে শিখেছেন।
ফাস্ট ফুড থেকে শুরু করে বাংলা খাবার সবই পাওয়া যায় তার কিচেনে। অন্য আইটেমের মধ্যে আছে ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, বিফ সিজলিং, ভেজিটেবল, চাইনিজসহ বিভিন্ন ধরণের সেট মেনু। এছাড়াও রয়েছে মোরগ পোলাও, বিরিয়ানি, ভাত, মাছ, মাংস, মাছের রেজালা, সকাল-বিকালের নাস্তা ও খিচুড়িসহ নানা ধরণের সুস্বাদু খাবার। ক্রেতাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে তেল কম, ঝাল কম, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ করেন। একটি বিষয় খেয়াল রাখেন উদ্যোক্তা সব সময়, সব বয়সের মানুষ যেন তার রান্না করা খাবার খেতে পারেন, এমন পরিমিত মসলাই তিনি ব্যবহার করেন।
বাসায় তৈরি খাবার বিক্রি করতে গিয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়েছেন কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ব্যবসার শুরুতে অনেক লজ্জা ও বাধা কাজ করতো। ভাবতাম মানুষ কী বলবে? খাবারগুলো নিজেই যখন ডেলিভারি করতাম, তখন কিছু মানুষের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যেতো। এরপর আমার বোন লন্ডন থেকে আমাকে সাহস দিলো। সে বলতো, দেশের বাইরে নিজস্ব ব্যবসার কাজ নিজেরই ডেলিভারি করতে হয়। তুই কেন পারবি না? বোনের কথাগুলো শুনে আমি আরও শক্তি পাই এবং অন্য মানুষের কথায় কর্ণপাত না করে আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে এগোতে থাকি। এখন আমি অনেকের কাছে পরিচিত মুখ।’
তরুণ উদোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ: আত্মবিশ্বাসটাকে ঠিক রেখে যে কাজ করে মনে তৃপ্তি পাওয়া যায়, একটা প্রশান্তি আসে, ওইটায় নিজের সময় আর শ্রম ইনভেস্ট করা উচিত। একবার না পারলে বার বার চেষ্টা করতে হবে। হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। মাকড়সা তার জাল বুনতে অনেক সময় নেয়। কিন্তু দিনশেষে সাফল্য লাভ করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে শাহানা বলেন, ‘আমি আমার হোমমেইড খাবারের গুণগত মান ধরে রাখতে চাই। আমার স্বপ্ন নিজের হোম মেইড খাবারগুলো একটা বড় পর্যায়ে গিয়ে বড় সাফল্য পাবে এবং অনলাইনে প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্বস্ত হবে। এছাড়া ইচ্ছা আছে ফুড ব্যবসার পরিধিটি আরও বাড়ানোর যাতে আরও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারি। ’
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা