কুমিল্লার মেয়ে ফাতেমা ইসলাম। মা মরহুমা জাহানারা বেগম ছিলেন একজন সফল উদ্যোক্তা। যিনি জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা এবং পুরস্কার। মা’র প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নাম ‘জাহানারা কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত এবং কুটিরশিল্পের রানী হিসেবে পরিচিত। মেয়ে ফাতেমা ইসলাম ছোটবেলা থেকেই মাকে পেয়েছিলেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। মা’র কাছ থেকেই উদ্যোক্তা জীবনের হাতেখড়ি। তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নাম ‘পূর্বাশা গিফট এন্ড খাদি’। কাজ করছেন খাদির পোশাক নিয়ে।
গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পরও তিনি কখনো চিন্তাও করেননি চাকরি করবেন। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সবাইকে পেয়েছেন উদ্যোক্তা হিসাবে। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেও স্বপ্ন দেখেছিলেন একজন উদ্যোক্তা হবেন। স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্নকে সত্যিও করেছেন। বিয়ের পর নিজেকে পুরোদস্তুর একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। পরিবার এবং স্বামীর সাপোর্ট কোন কিছুরই কমতি ছিল না জীবনে। তাইতো কোন রকম বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। পেরেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হতে।
উদ্যোক্তার বর্তমানে কর্মীর সংখ্যা ২০০ জনের উপরে। সকলের দেখাশোনা কাজের নির্দেশনা দেন ফাতেমা নিজেই। নিজের খাদি কাপড় নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন। নিত্য নতুন ডিজাইন আর রঙের বাহারে সাজিয়েছেন তার এক একটি শো-রুম। কুমিল্লা, আশুগঞ্জ, ভৈরব এবং চট্টগ্রাম হাইওয়ে, কক্সবাজার সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে উদ্যোক্তার শো-রুম। দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন মেলায় অংশ গ্রহণও করেন তিনি। কাপড়ের গুণগতমান আর ডিজাইন দ্বারা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছেন। শুরুর দিকে কোন ট্রেনিং এর প্রয়োজনও পড়েনি তার। লক্ষ্য অটুট রেখে এগিয়েছেন সামনের দিকে। কিন্তু পরবর্তীতে বিসিক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন এবং নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছেন।
প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন ডিজাইন আর নতুন নতুন কর্ম দিয়ে সাজাচ্ছেন তার কর্ম ভুবনকে। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে সর্বপ্রথম ধৈর্য থাকতে হবে, নিজের কাজের প্রতি ডেডিকেশন থাকতে হবে, লেগে থাকার মানসিকতা রাখতে হবে, প্রতিনিয়ত নিজের পণ্য নিয়ে গবেষণা করতে হবে এবং পণ্যে নতুনত্ব ক্রিয়েট করতে হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তা ফাতেমা। তিনি মনে করেন একজন সফল উদ্যোক্তা হবার জন্য অবশ্যই ট্রেনিং গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেনিং দক্ষতা বৃদ্ধিতে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর হাতে-কলমে ট্রেনিং তো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্যোক্তা নিজেকে যেমন সফল দেখতে চান, ঠিক তেমনি পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কাজ করতে চান। তিনি নারীদেরকে প্রকৃত অর্থে স্বাবলম্বী করতে চান, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে চান। মা যেমন সফলতার পথে হেঁটেছেন তিনিও সেই পথেই হাঁটতে চান। মা মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন সারা জীবন, তিনিও মানুষের সেবায় কাজ করতে চান।
মার্জিয়া মৌ,
উদ্যোক্তা বার্তা