মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস এবং ইউএসএআইডি মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন স্টিভেনস ২৪ থেকে ২৬ জুলাই রাজশাহী সফর করেছেন।
প্রতিনিধিদলটি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন-এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেসময় এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত বিনিময় কর্মসূচি, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং আইন প্রয়োগে সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন তারা।
স্থানীয় সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়াও তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপাার্টমেন্টের বিনিময় কর্মসূচির প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময়ে তারা বিগত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট, বিচার বিভাগ এবং ইউএসএআইডি-এর কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতামূলক উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়।
রাজশাহীতে থাকাকালীন রাষ্ট্রদূত হাস এবং মিশন ডিরেক্টর স্টিভেনস ইউএসএআইডি-র অর্থায়নে বাস্তবায়িত “ফাইট স্লেভারি অ্যান্ড ট্রাফিকিং ইন পারসন্স” (দাসত্ব ও মানব পাচার মোকাবেলা) প্রকল্পের উদ্যোগে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত পাচারবিরোধী টাস্কফোর্স প্রতিষ্ঠা উদযাপনের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে বিচারক ও প্রসিকিউটরদের কাজের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, “এই ট্রাইব্যুনাল ও টাস্কফোর্স গঠন মানব পাচারকারীদের শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার প্রতিফলন।”
রাষ্ট্রদূত শত বছরের প্রাচীণ বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরও পরিদর্শন করেন। এই জাদুঘরের অভ্যন্তরীণ, বহির্ভাগ এবং নিদর্শনগুলোর প্রদর্শন ব্যবস্থা সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং উন্নতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন পর্যন্ত মোট ১৯১,০৮৩ ডলার অনুদান দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈশ্বিক উদ্যোগ অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন প্রকল্প এ বছর ২১ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানগুলোও এই ফান্ড পেয়ে থাকে।
এবারের রাজশাহী সফরকালে রাষ্ট্রদূত হাস রাজশাহীতে বসবাসকারী ও সেখানে কর্মরত আমেরিকান নাগরিকদের সাথেও দেখা করেন। তাদের সাথে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারকরণে প্রবাসী আমেরিকানদের ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহীর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত হাস রাজশাহী বিভাগে প্রথমবারের মতো আমেরিকান সেন্টার পপ-আপ আয়োজনের জন্য রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)-কে ধন্যবাদ জানান। পপ-আপ কার্যক্রম থেকে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ ৫০০’রও বেশি দর্শনার্থীকে এডুকেশনইউএসএ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিনিময় কর্মসূচি এবং যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ে তথ্য ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রদূত হাস এবং ডিরেক্টর স্টিভেনস রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত আমেরিকান কর্নার পরিদর্শন করেন। এটি বাংলাদেশে পরিচালিত ছয়টি আমেরিকান সেন্টারের একটি। কর্নারটিতে প্রতি মাসে ১,০০০ এরও বেশি দর্শনার্থী যান; সেখানে তারা আমেরিকান সংস্কৃতি ও ইতিহাস, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একাডেমিক এবং পেশাদার বিনিময় কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে পারেন।
রাষ্ট্রদূত রাজশাহীর আমেরিকান কর্নার ঘুরে দেখার পর রাজশাহী-নিবাসী উদীয়মান ও প্রতিষ্ঠিত নাগরিক সমাজসহ স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিনিময় কর্মসূচির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় অংশ নেন। বিনিময় কর্মসূচির অধীনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আমেরিকাতে যে সকল বিষয়ে অংশ নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকতা, ইংরেজি ভাষা শেখা, নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্তকরণ এবং মানব পাচার প্রতিরোধ।
রাষ্ট্রদূত হাস রাজশাহী সফরকালে সেখানে অবস্থিত কমিউনিটি রেডিও পদ্মাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের ৫০ বছরের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিওর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা
