মানুষ আমার পণ্য কিনবে শখের বশে নয়, প্রয়োজনে

0
উদ্যোক্তা ইলোরা মোস্তাফি রিমা

যশোরের মেয়ে ইলোরা মোস্তাফি রিমা, জন্ম ও বেড়ে উঠা যশোরেই। ব্যবসা বরাবরই তার পছন্দ। সব সময় মনে করতেন বিজনেস এমন একটি মাধ‍্যম যার মাধ‍্যমে নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগিয়ে কিছু করার সাথে সাথে আত্মতৃপ্তিও পাওয়া যায়। সেই চিন্তা থেকেই তার উদ‍্যোক্তা হওয়া।

ইলোরা মোস্তাফি রিমা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় চাকরি নিয়ে ঢাকা চলে আসেন। একটি কোরিয়ান মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড মার্কেটিং পদে কাজ করেন। এরপর ইটালি ও নেদারল্যান্ডসের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং সুগার কনফেকশনারি কোম্পানিতে এইচ আর অফিসার পদে কাজ করেন অনেকদিন।

উদ‍্যোক্তা জীবনের শুরু প্রসঙ্গে ইলোরা বলেন, “বিভিন্ন কোম্পানিতে অনেক বছর চাকরি করার পর শারীরিক কিছু অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে দেই। ভেবেছিলাম কিছু করব না, এবার একটু রেস্ট করবো কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই মনে হলো আমি আমার সময় অযথা নষ্ট করছি। আমাদের হাতে সময় আছে কিন্তু সেটা নষ্ট করার জন্য নয়। তাই ঠিক করলাম এবার আর চাকরি নয়, নিজেই কিছু করব। ২০১৭ সালে আমার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু।‘

তার উদ্যোক্তা হওয়ার মূল কারণ একটাই হয়ে দাঁড়ালো, তা হলো নিজেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং নিজের জীবনের সকল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো।

ইলোরা মোস্তাফি রিমার প্রতিষ্ঠানের নাম Dream & Hope Online এবং Organic Tea by Rima. তার প্রতিষ্ঠানের পণ্যগুলোর মধ‍্যে রয়েছে: হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, রোস্ট মসলা, বিরিয়ানি মসলা, শাহী গরম মসলা, মাছের মসলা, সরিষার তেল, খাঁটি গাওয়া ঘি, মাসকালাই ডাল, চন্দন ফেসপ্যক, আলু ও শসার ফেসপ্যাক, শ্রীমঙ্গলের টি গোল্ড চা পাতাসহ ঘরে বানানো ১৪ রকমের পণ্য।

প্রস্তুত প্রক্রিয়া সম্পর্কে রিমা বলেন: বাজার থেকে মসলা কিনে আমি নিজে বাছাই করে, ধুয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে পর্যাপ্ত সময় রোদে শুকিয়ে তারপর মিলে নিজে উপস্থিত থেকে মসলা তৈরি করি।

উদ্যোক্তা তার উদ‍্যোগের সকল কাজ বাসায় নিজেই সম্পন্ন করেন। তার কোনো কর্মী বা কারখানা নেই। উদ‍্যোগে তার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কিছুটা সাহায্য করেন। তবে সোর্সিং থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত সব কাজ রিমা নিজেই করেন।

শুরুতে দশ হাজারের কিছু কম টাকা দিয়ে রিমা তার উদ‍্যোগ শুরু করেছিলেন। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “প্রথমে আমার পণ্যের মধ‍্যে হলুদ গুঁড়া আমি আমার মায়ের কাছে ২৫০গ্রাম ৭৫ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছিলাম।”

ইলোরা মোস্তাফি রিমা বলেন: বর্তমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে আমার ব‍্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালোই চলছে। মাসে আমি ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় করছি।

তিনি জানান, মাসে তাকে ৫ রকম মসলা তৈরি করতেই হয়। আর বাকি পণ্য একবারে বেশি পরিমাণ তৈরি করলে ২/৩ মাস চলে যায়। মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পণ্য তিনি বিক্রি করে থাকেন। অফলাইন ও অনলাইনে দু’ভাবেই তিনি অর্ডার নিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের ভেতর রংপুর, পাবনা, সাভার, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, যশোর, পতেঙ্গা ও বরিশালসহ নানা প্রান্তে তিনি তার পণ্য বিক্রি করছেন। দেশের বাইরে জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, দুবাই, কানাডা ও আমেরিকায়ও তিনি তার পণ্য নিয়মিত পাঠিয়ে থাকেন।

মসলা পণ্য নিয়ে উদ‍্যোক্তা হওয়ার মূল কারন জানিয়ে উদ‍্যোক্তা রিমা বলেন: উদ‍্যোক্তা হবার আগে আমি যে বিষয়টি খেয়াল রেখেছি সেটি হলো, মানুষ আমার পণ্য কিনবে শখের বশে নয়, প্রয়োজনে। আর গুঁড়া মসলা একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যা কম বেশি সবাই নেবেই। সেজন্যই আমার মসলার আইটেম নিয়ে উদ‍্যোক্তা হওয়া।

ইলোরা মোস্তাফি রিমা মনে করেন, প্রতিটি মেয়ের নিজের ন্যুনতম হাত খরচ চালানোর ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমি চাকরি করে এসেছি। তাই স্বামীর কাছে হাত পেতে টাকা নিতেও খারাপ লাগতো। তাছাড়া নিজেকে একজন স্বাবলম্বী নারী হিসাবে দেখতেই বেশি পছন্দ করি। আর সেই জায়গা থেকে আমার উদ্যেক্তা জীবন বেছে নেয়া।

তরুণদের উদ্দেশে রিমা বলেন: যে কাজ ভালো লাগে বা ভালোবাসেন সেটি করবেন। কাউকে অনুকরণ করার দরকার নাই। তবে যে কাজই করেন না কেন কাজে থাকতে হবে শতভাগ ধৈর্য‍্য, সততা, পরিশ্রম ও ভালোবাসা। সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ধৈর্য‍্য হারা হয়ে মাঝপথে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। ধৈর্য্য রাখলে অবশ্যই সফলতা আসবে।

ভবিষ্যতে নিজেকে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চান এবং নিজের পণ্যকে ও তার “রিমা” নামকে একটি ব্র‍্যান্ডে রূপান্তরিত করতে চান।

আফসানা অভি,
উদ‍্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here