মানিকগঞ্জের শ্রেষ্ঠ জয়িতা শওকত আরা ফাতিমা

0
উদ্যোক্তা শওকত আরা ফাতিমা

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ থেকে এমবিএ করে গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে এডুকেশন কনসালন্ট্যান্সি নিয়ে কাজ শুরু করেন৷ সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বেগম রোকেয়া দিবসে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারী ক্যাটাগরিতে মানিকগঞ্জ থেকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার অর্জন করেছেন শওকত আরা ফাতিমা মৌ।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার ঝিটকাতে শৈশব কাটে মৌয়ের। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়াতে কোনদিন কোন কিছুর অভাব বোধ করেননি। কিন্তু বাবা আর্মিতে থাকাতে নিয়মনিষ্ঠতা এবং সততার দিক থেকে ছোটবেলা থেকেই বাবা মা তাকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। সে কারণেই অন্যের অধীনে চাকরি করাটা মৌয়ের তেমন পছন্দের ছিল না। মনে মনে সিদ্ধান্ত ছিল যে নিজে কিছু করবেন।

২০১৭ সালে এডুকেশন কনসালন্ট্যান্সি নিয়ে কাজ শুরু করেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষা, ভর্তি, ভিসা প্রসেসিং নিয়ে কাজ তার। মূলত স্টুডেন্টদের যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের কোন দেশে অ্যাডমিশন হবে এবং ভিসা প্রসেসিং সহজ হবে সেটা নিয়ে কাউন্সেলিং করে থাকেন মৌ। শিক্ষার্থীদের সমস্ত কাজ, যেমন ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লিকেশন করা, ফাইল গুছিয়ে দেওয়া, একোমডেশন অ্যারেঞ্জ করে দেওয়া, মোটকথায় পৌঁছানো পর্যন্ত সবকিছুর সাপোর্ট দিয়ে থাকেন তিনি।

মাত্র ৭০ হাজার টাকা দিয়ে সাবলেট-এ একটা অফিস নিয়ে তিনজন কর্মীকে সাথে নিয়ে মৌয়ের ‘ফ্রেন্ডস কনসালট্যান্সি’র যাত্রা শুরু হয়। প্রথম কাজ ছিল তার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অ্যাডমিশন এবং ভিসা প্রসেসিং নিয়ে।

শওকত আরা ফাতিমা মৌ বলেন, ‘একটা ছাত্রকে প্রোপার গাইডলাইন দিয়ে সঠিক ওয়েতে তাদের সাহায্য করা আমার উদ্দেশ্য ছিল। কারণ একজন স্টুডেন্ট যখন বাইরে যায় তখন তার আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না, তার ভবিষ্যৎ উজ্জল হয় এং তার পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে। কাজেই এর চেয়ে ভালভাবে দেশ সেবা আর কী করা যায়? শুরু করেছিলাম ভালো লাগা থেকে, এখন তো এটা আমার প্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

অনলাইন এবং অফলাইনে কাজ করছেন তিনি। নিজস্ব অফিস আছে ঢাকার পান্থপথে। অনেকেই অনলাইনের পাশাপাশি সরাসরি অফিসে গিয়েও বিদেশে পড়াশোনার বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন৷ এই পর্যন্ত মৌ তার প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ জনের মতো স্টুডেন্ট বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করে সেটেল্ড হয়েছেন। তাদের পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছে। দেশের সেবা করতে পেরে মৌ বেশ আনন্দিত।

তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি।

‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে বেগম রোকেয়া দিবসে প্রতি বছরের মতো এবারও শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীদের এই সম্মাননা দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার
মানিকগঞ্জ থেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার অর্জন করেন শওকত আরা ফাতিমা মৌ।

পুরস্কারপ্রাপ্তিতে তিনি বলেন: জয়িতা ফাউন্ডেশনের আওতায় জয়িতা পুরস্কার পেয়েছি মানিকগঞ্জ থেকে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারী ক্যাটাগরিতে আমাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু পুরস্কার না, এটা আমার আগামী দিনের কাজ করার শক্তি এবং অনুপ্রেরণা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার এই কাজের পেছনে আমার বাবা-মা’র পাশাপাশি আমার হাজব্যান্ড এর অবদান অনেক। তাদের সহযোগিতা না পেলে আজ এই পর্যন্ত আসা সম্ভব হতো না। আমার স্বপ্ন এখন ঢাকাতে একটা অফিস আছে, সামনে প্রতিটা জেলায় একটা করে ফ্রেন্ডস কনসালট্যান্সির অফিস হবে। একটাই চাওয়া, আরও স্টুডেন্ট বিদেশে পড়তে গিয়ে তাদের সুন্দর একটা জীবন গড়ে তুলবে।’

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here