দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব নিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জাকির হোসেন পাঠান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে (কোভিড–১৯) মারা গেছেন এক সপ্তাহ হলো। তার পরিবারের ছোট দুই বছর বয়সী সদস্যটি ছাড়া অন্যরা সবাই করোনা পজিটিভ। চিকিৎসা নিচ্ছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।

পুরান ঢাকার একটি মনোহারি দোকানে কাজ করতেন কেরানীগঞ্জ নিবাসী জাকির, নেই কোনো সঞ্চয়, উপরন্ত দোকানের মালিকও করোনা পজেটিভ। জাকিরের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলের কাছে করোনার চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে, সে চিন্তায়।

ঠিক সেই সময় দেবদূত হয়ে দেখা দিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। জাকিরের পরিবারের দায়িত্ব তুলে নিলেন নিজের কাঁধে। পাশে দাঁড়ালেন পরিবারটির।

করোনা আক্রান্ত পরিবারটি যখন নিজেদের বেঁচে থাকার জীবনীশক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে ভাবতে বসেছিল তখন ‘মানুষের পাশে থাকতে হবে মানুষকেই’ ভেবে এগিয়ে এলেন আতিকুল ইসলাম। পরিবারটিতে শোনালেন সাহসের সংবাদ। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বোধ যত বাড়বে ততই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার প্রথম আলো অনলাইনে ‘পরিবারটি চলবে কীভাবে?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের মাধ্যমে জাকির হোসেন পাঠানের বড় মেয়ে ফাহমিদা পাঠানের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন আতিকুল ইসলাম। তিনি নিজে ফাহমিদা পাঠানের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরিবারটির পাশে আছেন, তা জানিয়েছেন।

কলেজপড়ুয়া ফাহমিদা পাঠান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, ‘মেয়র স্যার নিজে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। বলেছেন, তিনি আমাদের পাশে আছেন। যত দিন আমাদের সহায়তার প্রয়োজন, তিনি সহায়তা দেবেন। আমরা যাতে চিন্তা না করি সে কথাও বলেছেন তিনি। আমরা মেয়র স্যার ও প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর মেয়র ছাড়াও অনেকেই ফোন করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজে ফাহমিদা পাঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি পরিবারটির পাশে আছি। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে পরিবারটির সদস্যদের সুস্থ করতে হবে। পরে ফাহমিদা পাঠান ও তার অন্য ভাইবোনদের পড়াশোনাসহ সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা পর্যন্ত আমি পরিবারটির পাশে থাকব।’

গত ২৬ মার্চ থেকে আতিকুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে করোনার কারণে দুস্থ ও মেহনতি পরিবারদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৫০ হাজার পরিবারকে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। বিডি ক্লিন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে। উত্তর সিটি ছাড়াও ঢাকার অন্যান্য অঞ্চল এবং গাজীপুর, নরসিংদীর বিভিন্ন জায়গায় তিনি অসহায় পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দেন।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি করোনাভাইরাসের বিস্তারের পর এ পর্যন্ত সারা দেশের ১০০টি পরিবারের চার মাসের খাদ্যসহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি। বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবকেরা পরিবারগুলোর কাছে আমার সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। এত পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। ফাহমিদার পরিবার নিয়ে মোট পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ালে ১০১। তবে ফাহমিদাদের পরিবারটি আলাদা, ওদের যত দিন, যত ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে, আমি তা দেব।

এদিকে বুধবার দুপুরে দ্বিতীয় মেয়াদে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন মো. আতিকুল ইসলাম।

আতিকুল ইসলামের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী মো. আব্দুল হাই।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চার লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট পেয়ে মেয়র পদে পুনর্নির্বাচিত হন আতিকুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পান দুই লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট। এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে শপথ নেন আতিকুল ইসলাম। তবে বর্তমান মেয়র প্যানেলের সময়কাল শেষ না হওয়ায় এতদিন তিনি দায়িত্ব নিতে পারেননি।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here