দিলারা আক্তার, গাজীপুরের প্রকৃতি প্রেমী হাস্যউজ্জল এক মেয়ে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্টে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন, শেষ বর্ষেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর কিছু দিন স্কুলে তারপর কলেজে শিক্ষকতা করেন কিন্তু সন্তান জন্মের পর চাকরিটা আর করা সম্ভব হলো না। তাই সন্তান একটু বড় হবার পর আবারও চাকরি শুরু করলেন, জয়েন করলেন ব্যাংক এশিয়ায়। প্রায় ১৭ বছর একটানা চাকরি করলেন। দীর্ঘদিনে একটা একঘেঁয়েমি কাজ করতে শুরু করে এমনটাই জানালেন স্বামীকে।
দিলারার স্বামী যেহেতু বিসিকের বী-কিপার প্রজেক্টে কর্মরত ছিলেন সেই সুবাদে স্বামীর কাছ থেকে তার মৌমাছি-মধু এসব সম্পর্কে খুব ভালো একটা ধারণা হয়ে যায়। আর সর্বপরি তিনি প্রকৃতি প্রেমী হওয়ায় ফুল,লতাপাতা পশুপাখি এই বিষয়গুলো তার খুব ভালো ভাবেই রপ্ত করা। উল্লেখ্য বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার ফুল বাগানের ওপর বিশেষ কয়েকটি পর্ব প্রচারিত হওয়ায় বেশ সুনামও অর্জন করেছিলেন।
আর এসব অভিজ্ঞতা থেকেই ২০১৩সাল থেকে ঘরোয়া ভাবে চাকরির পাশাপাশি স্বামীর সাথে মৌমাছি পালন এবং মধু উৎপাদন ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘হাইভ’ প্রথম ৫বছর অনলাইনে খুব একটা প্রচারণা ছাড়াই ব্যাবসা পরিচালনা করলেও গত দু’বছর থেকে বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শন করছেন তাদের পণ্য। ‘হাইভ’কে সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য বিসিক থেকে ইতিমধ্যে বী-কিপারের ওপর একটি ট্রেনিংও নিয়েছেন।
এবারের শিল্প মেলায় অংশগ্রহন করে ব্যপক সাড়া পেয়েছেন। ৬টি ভিন্ন ভিন্ন রং ও স্বাদের মধু হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এটি ছিলো মূল আকর্ষণের বিষয়। দিলারা আক্তার মধু উৎপাদনের জন্য মনো ফ্লাওয়ারকে প্রাধান্য দেয়। যেমন- কালিজিরা, ধনিয়া, সরিষা, বরই, লিচু এবং সুন্দর বনের খলিসা। এই ৬ধরনের ফুল থেকে ৬টি ভিন্ন স্বাদের মধু সংগ্রহ করছেন।
স্থায়ীভাবে কাজ করছেন ৪জন কর্মী আর অস্থায়ীভাবে ডেডিকেটেড বী-কিপার আছেন প্রায় ৪০জন। যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌমাছি এবং বক্স সরবরাহ করে মধু সংগ্রহ করেন। মাসে প্রায় ৪০০কেজিরও বেশী মধু সংগ্রহ করেন তারা।
শুধু মধু সংগ্রহই নয় দিলারা আক্তার তার লভ্যাংশ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিবেশ রক্ষার্থে বৃক্ষ রোপণ অভিযানে ব্যয় করেন এবং অনলাইনে মধু বিক্রির সাথে বিনামূল্যে কিছু ফল-ফুলের বীজ দেন যেনো সকলে বৃক্ষ রোপণে উৎসাহিত হন।
দিলারা আক্তার কে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ”
এই পণ্যের মাধ্যমে সবাই আমাকে চিনবে, জানবে যে আমি কি করছি বা করতে চাচ্ছি।মূলত আমি চাই মানুষকে সচেতন করতে, মধু যে অনেক উপকারী একটি খাদ্য এটা আমরা চিনি বা মিষ্টির পরিবর্তে ব্যাবহার করতে পারি, গিফট হিসেবে মধুর একটা প্যাকেট দেয়া যেতে পারে এবং হ্যাঁ আমরা সেটা করতে পেরেছি। কর্পোরেট গিফট হিসেবে আমাদের মধু এখন ব্যাবহার হচ্ছে। এবং ব্যবহারের পর প্যাকেট এবং বোতল যেনো অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় সেই দিকটাও বিবেচনায় রাখি “।
বিপ্লব আহসান
ছবি- ইকবাল আপন